পাঁচ সংবাদকর্মী যেভাবে করোনায় আক্রান্ত হন

Slider জাতীয় বিনোদন ও মিডিয়া


ঢাকা: করোনা ভাইরাস প্রার্দুভাব রোধে সবাই ঘরে থাকলেও কয়েকটি পেশার মানুষকে থাকতে হচ্ছে ঘরের বাইরে। এর মধ্যে আছেন সংবাদ কর্মীরাও। তথ্য দিয়ে মানুষকে সচেতন করার কাজে ব্যস্ত সংবাদ কর্মীরাও নিজেদের অজান্তেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। এ পর্যন্ত অন্তত ৫ জন সংবাদকর্মীর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। সর্বশেষ সনাক্ত হয়েছেন এটিএন নিউজের একজন সিনিয়র রিপোর্টার। এটিএন নিউজের পক্ষ থেকে আজ এই তথ্য জানানো হয়েছে। জানা যায়, ওই রিপোর্টার গত মাসে ভারতে একটি প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে এক মাস অবস্থান করছিলেন। পরে গত ২১শে মার্চ ঢাকায় ফিরে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তার বাসায় চলে যান।

এবং সেখানে তিনি ১৫ দিনের কোয়ারেন্টিনে থেকে গত ৫ই এপ্রিল স্বেচ্ছায় কর্মস্থলে যোগ দেন। কিন্তু চার দিন অফিস করার পরই গত ৯ই এপ্রিল তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। পরে কাশি এবং গায়ে ব্যথা শুরু হলে আইইডিসিআর-এ যোগাযোগ করা হলে ১০ এপ্রিল তারা বাসা থেকে তার স্যাম্পল সংগ্রহ করেন। ১১ এপ্রিল রাতে তারা জানিয়ে দেন, তিনি করোনা পজেটিভ।’ এতে আরও বলা হয়, কভিড-১৯ আক্রান্ত হলেও তিনি মানসিকভাবে চাঙ্গা আছেন। প্রথম থেকেই তার শ্বাসকষ্ট ছিল না। জ্বর, গায়ে ব্যথাও কমে আসছে। তিনি শুরু থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং তিনি বাসায় আইসোলেশনে আছেন। এটিএন নিউজ কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে এবং তার চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছে। ওই রিপোর্টার পজেটিভ নিশ্চিত হওয়ার পরই তার সঙ্গে কথা বলে যে তিনদিন অফিস করেছেন সেই সময় তিনি কাদের সঙ্গে কাজ করেছেন বা কাদের সঙ্গে মিশেছেন, তার তালিকা নেয়া হয়। রিপোর্টিং, ক্যামেরাম্যান, প্রোডিউসার, ডেস্ক মিলিয়ে মোট ২০ জন কর্মীকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী মুন্নীসাহা বলেন, একজন সহকর্মীর করোনা সংক্রমণের খবরে মন খারাপ হলেও এটিএন নিউজের কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা আছে। বাকি সবাই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। করোনার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যে সর্বাত্মক লড়াই চলছে, সে লড়াইয়ে সাহসের সঙ্গেই এটিএন নিউজের কর্মীরা মাঠে আছে এবং থাকবে।

এদিকে গত ১০ এপ্রিল যমুনা টেলিভিশনের একজন সিনিয়র রিপোর্টারের করোনায় আক্রান্তে খবর পাওয়া গেছে। বিষয়টি তিনি নিজেই তার ফেসবুক প্রোফাইলে জানিয়েছেন। তিনিসহ তার পরিবারের আরো দুই জন আক্রান্ত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার ওই সাংবাদিকের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। করোনা আক্রান্ত ওই সাংবাদিক সর্বশেষ ৫ এপ্রিল অফিস করেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠান যমুনা টিলিভিশন ৩৪ জন কর্মীকে বাসায় কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। সহকর্মীদের ধারণা তিনি সংবাদ সংগ্রহের কাজে গিয়েই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যমুনা টেলিভিশনের ওই সাংবাদিক আক্রান্ত হওয়ার পরের দিন শুক্রবার দৈনিক বাংলাদেশ খবরের অপরাধ বিষয়ক প্রতিবেদক করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। জানাযায় ওই দিন শুক্রবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে ফোন করে ওই সাংবাদিককে করোনায় আক্রান্তেন কথা জানানো হয়। পাশাপাশি তাকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। আক্রান্ত হওয়া সাংবাদিক ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। করোনা ভাইরাস পজিটিভ জানার পর ওই সাংবাদিক জানান, গত কয়েক দিন জ্বর ও কাশিজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি।

পরে গত বৃহস্পতিবার বিএসএমএমইউতে গিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার জন্য নমুনা দিয়ে আসেন। এর পর তাকে জানানো হয় তিনি করোনাভাইরাস পজিটিভ। পাশাপাশি তাকে সেলফ আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দিয়েছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। তিনি আরো জানান, অসুস্থ হওয়ার আগে একদিন মগবাজার এলাকায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে অন্য এক সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা হয় তার। ওই সাংবাদিকও জ্বর ও কাশিজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। সেখান থেকেই তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন। তবে ওই সাংবাদিক এখনো করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করাননি। এদিকে গত শনিবার দীপ্ত টিভির সাংবাদিকের করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। চ্যানেলটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফুয়াদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যাতেই তার নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তবে সে মোটামুটি সুস্থ রয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছে। গায়ে হালকা জ্বর ছাড়া কাশি-সর্দি নেই তার। নিজেকে সে বাসাতেই সেলফ আইসোলেশনে রেখেছে।’ ফুয়াদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘আক্রান্ত ওই সাংবাদিক পাঁচদিন আগে ডেস্কে কর্মরত অবস্থায় অসুস্থবোধ করলে তাকে বাসায় বিশ্রামে থাকতে বলা হয়েছিল। সেদিন যারা আক্রান্ত সাংবাদিকের সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তিনিও সংবাদ কভার করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে সর্বপ্রথম ৩রা এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া প্রথম সাংবাদিক ইনডিপেনডেন্ট টিভির কর্মী। তিনি এখনো কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের হেড অব নিউজ মামুন আব্দুল্লাহ জানান, আক্রান্ত হওয়ার গত নয় দিন ধরেই ওই সাংবাদিক ছুটিতে আছেন। আক্রান্ত সনাক্ত হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গেই এক ভিডিও বার্তায় ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও এডিটর-ইন-চিফ এম শামসুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়ায় ওই সাংবাদিক ২৬শে মার্চ সেলফ-আইসোলেশনে চলে যান। তার সংস্পর্শে আসে আরও ৪৭ জনের তালিকা আমরা তৈরি করেছি। তাদেরও সেলফ-আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। ওই সাংবাদিক, দেশে করোনা সনাক্ত হওয়ার পরে বেশ কয়েকটি ইভেন্ট কভার করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে ওইসব স্থান থেকেই তিনি করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *