ডেস্ক: উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত এবং মৃত মানুষের সংখ্যা। প্রাণঘাতি ওই মহামারির ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত গোটা দুনিয়া। ২১০টি রাষ্ট্র ও আন্তজার্তিক টেরিটরিতে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১৭ লাখ ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন অন্তত ১ লাখ ৫ হাজার ৭ ‘শ ২৮ জন। অবশ্য দীর্ঘ ভোগান্তি শেষে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৩ লাখ ৯০ হাজারের বেশি।
করোনা জরীপ সংস্থাগুলোর রিপোর্ট প্রতি মিনিটে হালনাগাদ হচ্ছে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। করোনায় বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশির জীবন-জীবিকা আজ হুমকির মুখে। শুক্রবার পর্যন্ত বিদেশে থাকা অন্তত ১৬৫ বাংলাদেশির প্রাণ কেড়েছে সর্বনাশা করোনা- এমনটাই জানাচ্ছেন দুনিয়ার দেশে দেশে থাকা বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্য ও কূটনীতিকরা।
এ রিপোর্ট লেখার মুহুর্তেও নিউইয়র্ক, লন্ডন ও ইতালির মিলান থেকে অন্তত ৩ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর আসে মানবজমিনের ওই রিপোর্টারের কাছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা সেলসহ দায়িত্বশীল সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, শুক্রবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১০০, বৃটেনে ৪১, ইতালিতে ৭, কানাডায় ৪, কাতারে ২, সৌদি আরবে এক চিকিৎসকসহ ৭, স্পেনে ১, সুইডেনে ১, লিবিয়ায় ১ এবং গাম্বিয়ায় ১জন বাংলাদেশি মারা গেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে বিদেশ থাকা বাংলাদেশি কূটনীতিক ও কমিউনিটির দেয়া তথ্য মতে, প্রবাসী বা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এরইমধ্যে কয়েক হাজার ছাড়িয়েছে। প্রবাসীদের বিষয়ে কমবেশি সরকারী তথ্য পাওয়া গেলেও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যারা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা বা ইউরোপের দেশগুলোতে নাগরিকত্ব নিয়েছেন- তাদের আক্রান্ত হওয়া বা মারা যাওয়ার অানুষ্ঠানিক তথ্য প্রকাশ হয় না জানিয়ে একাধিক কূটনীতিক বলেন, বিশেষত তাদের অরিজিন কোথায় তা উহ্য থাকে। সে ক্ষেত্রে এমন দ্বৈত নাগরিকদের বিষয়ে কমিউনিটির তথ্যই আমলে নিতে হয়। ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, মহামারি বা দুর্যোগে বাংলাদেশ কমিউনিটির দায়িত্বশীলরা তথ্য প্রদান বা প্রচারে সচেতন থাকেন। সে ক্ষেত্রে তাদের সরবরাহ করা তথ্যে ভুলের মাত্রা ৫ ভাগের নীচেই থাকে। অনানুষ্ঠানিক ওই সব সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দুনিয়ার দেশে দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের অনাকাঙ্খিত ওই মৃত্যু মিছিলে গত ২৪ ঘন্টায় অন্তত ২০ জনের নাম যুক্ত হয়েছে। নতুন অাক্রান্ত হয়েছেন কয়েক শ বাংলাদেশি।
মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম, দ্বিতীয় বৃটেন:
করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে নিউইয়র্কে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশিদের বেলায়ও তাই। গোটা যুক্তরাষ্ট্রে এক ‘শ বাংলাদেশি মারা গেছেন, যার মধ্যে নিউইয়র্কে ৯২ জন, নিউ জার্সিতে ৭ জন এবং মিশিগানে একজন বলে নানা সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যম ১০৪ জন বাংলাদশির মৃত্যুর খবর লিখেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ঠিক কত বাংলাদেশি করোনা আক্রান্ত? জানতে চাইলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র ধারণা দেয় সেই সংখ্যা হাজার হবে। যেহেতু এটি ছোঁয়াছে এবং সবাই ঘরে কোয়ারেন্টিন অবস্থায় আছেন, তাই সব আক্রান্তের খবর কমিউনিটিতেও অাসেনা। কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, বৃটেন, ইতালি, স্পেন ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মত উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে শ শ বাংলাদেশি আক্রান্ত, তবে তাদের সব খবরও কমিউনিটিতে পৌঁছায় না।
বৃটেনে শুক্রবার পর্যন্ত ৪১ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত-বৃটিশ নাগরিক করোনায় মারা গেছেন মর্মে লন্ডন মিশন ঢাকায় রিপোর্ট পাঠিয়েছে জানিয়ে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় বৃটেনে কমপক্ষে আরও ৮ জন মারা গেছেন বলে আমরা কমিউনিটি মারফত তথ্য পেয়েছি। এটা যাচাই-বাছাই হচ্ছে। নাম ঠিকানাসহ বিস্তারিত তথ্য পেলে ঢাকায় আপডেট রিপোর্ট যাবে।
লন্ডনের বহুল প্রচারিত বাংলা টিভি শুক্রবারই ৪০ বাংলাদেশি মারা যাওয়া এবং শত শত আক্রান্তের খবর প্রচার করেছে। লন্ডনের স্থানীয় সাংবাদিকরা ধারণা- বৃটেনে করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশির সংখ্যা হাজারের কাছাকাছি হবে।
আক্রান্তের ন্যাশনালিটি প্রকাশ করে সিঙ্গাপুর, ৫৪৪ বাংলাদেশির করোনা শনাক্ত:
ওদিকে শনিবার (১১ ই এপ্রিল) সিঙ্গাপুরে কোভিড -১৯ সংক্রমণ সংক্রান্ত ১৯১ নতুন কেস শনাক্ত হওয়ার কথা জানায় দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়(এমওএইচ)। এর মধ্যে ৯৯ জনই বাংলাদেশি। এই নিয়ে দেশটিতে বাংলাদেশী করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৪৪ -এ। আর সিঙ্গাপুরে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ২,২৯৯ জনে। সে হিসাবে সিঙ্গাপুরে করোনা আক্রান্ত এক চতুর্থাংশের বেশি বাংলাদেশি। শনিবার পর্যন্ত করোনা সংক্রমণে ৯০ বছর বয়সী সিঙ্গাপুরেরর এক নাগরিক মারা যাওয়ার মধ্য দিয়ে দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ জনে। দু’মাস ধরে সিঙ্গাপুরে প্রথম করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশি (কেস-৪২) কোমায় থাকলেও দেশটিতে করোনা আক্রান্ত কোনো বাংলাদেশি এখনও মারা যাননি বরং যে ৫২৮ জন সম্পূর্ণরূপে সেরে ওঠেছেন এবং হাসপাতাল ছাড়তে পেরেছেন সেই তালিকায় বেশ ক’জন বাংলাদেশিও রয়েছেন।