বরগুনা: নভেল করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে বরগুনার আমতলী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জি এম দেলোয়ার হোসেন মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টায় নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। তিনি এক সপ্তাহ ধরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। বুধবার তার নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর এ পাঠানো হয়েছে। মৃত্যুর পর তার বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আমতলীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন জানিয়েছেন, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জি এম দেলোয়ার হোসেন গত কয়েকদিন যাবত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। বুধবার তার নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর এ পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেলে মৃত্যুর আসল করন জানা যাবে। তবে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় সীমিত আকারে নামাজে জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে।
এছাড়া বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ভবরঞ্জন মিস্ত্রী (৬৫) নামের একজন।
জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বুধবার তিনি পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। নিহতের বাড়ি পাথরঘাটার চরদুয়ানী ইউনিয়নে। নিহতের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বরগুনার সিভিল সার্জন ডাঃ মো. হুমায়ুন শাহিন খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে, লকডাউন ঘোষিত নারায়নগঞ্জ থেকে লুকিয়ে নারী ও শিশুসহ ১০৯ জন বুধবার রাতে বরগুনার আমতলীতে পৌঁছেছেন। জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে নৌপথে বালুর কার্গোযোগে জনপ্রতি এক হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে আমতলীতে আসেন। রাতেই তাদের আটক করে ৮৯ জনকে স্থানীয় আমড়াগাছিয়া হোসেনপুর খানকায়ে ছালেহীয়া কমপ্লেক্সে (ছারছিনা দরবার শরীফ) কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। বাকী ১৯ জনের বাড়ি পটুয়াখালী জেলায় হওয়ায় তাদেরকে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের কাছে তুলে দেয়া হয়েছে।
আটককৃতরা জানিয়েছেন, নারী ও শিশুসহ ১০৯ জন বুধবার ভোররাতে নারায়নগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে বালুর কার্গোযোগে আমতলীর উদ্দেশ্যে রওনা হন। রাত ৯টার দিকে তারা আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের মর্গার ব্রিজ এলাকায় পৌঁছেন। সংবাদ পেয়ে আমতলী উপজেলা প্রশাসন ও আমতলী থানা পুলিশ তাদের আটক করে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানিয়েছেন, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে হোম কোয়ারেন্টাইন ও সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতে বরগুনা জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। তারপরেও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেউ কেউ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বরগুনায় আসছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
বরগুনার সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, বরগুনা বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন তিনজন। এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইন করছেন ৪১৬ জন। তাদের মধ্যে ৪১২ জন কোয়ারেন্টাইন শেষ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন। বাকী চারজন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন।
সিভিল সার্জন ডাঃ মো. হুমায়ুন শাহিন খান বলেছেন, বরগুনায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনও রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার নতুন করে ১৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার জন্য বিকেলেই এসব নমুনা আইইডিসিআর এ পাঠানো হবে। বুধবার পর্যন্ত মোট ৪৩ জনের নমুনা আইইডিসিআর এ পাঠানো হয়েছিল। এরমধ্যে ১৫ জনের ফলাফল নেগেটিভ পাওয়া গেছে। বাকীদের ফলাফল পর্যায়ক্রমে পাওয়া যাবে।