নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। আইসোলেশনে রয়েছেন জেলার করোনা ফোকাল পার্সন সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। পুলিশ সুপারের হোম কোয়ারেন্টাইনের বিষয়ে একাধিক কর্মকর্তা বললেও তিনি অস্বীকার করেছেন। তবে এ কর্মকর্তাদের কেউই বুধবার অফিস করেননি। এছাড়া হোম কোয়ারেন্টাইনে গেছেন নারায়ণগঞ্জ এক শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আসাদুজ্জামান। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হোম কোয়ারেন্টাইনের কথা শোনা গেলেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও কমিটির সদস্য সচিব জেলা সিভিল সার্জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। করোনা ফোকাল পারসন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাও বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিনের করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম কোয়ারেন্টাইনে আছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন মঙ্গলবার রাত থেকে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে বুধবার তিনি তার বাংলোয় রেস্টে ছিলেন। বাংলো থেকেই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন দুপুরে তার করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠায়।
এদিকে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বুধবার থেকে কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এ ছাড়া জেলা করোনা ফোকাল পারসন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম করোনা সন্দেহে বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন এবং জেলা করোনা ফোকাল পারসন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কেউ বুধবার অফিস করেননি।
এ ছাড়া জেলা পুলিশ সুপারও বুধবার অফিসে আসেননি। তার কোয়ারেন্টাইনে থাকার বিষয়টি পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
কোয়ারেন্টাইনে থাকা এসপি জায়েদুল আলম বলেন, ‘আমি সুস্থ আছি। আমি কোয়ারেন্টাইনে নেই। তবে ডিসি ও সিভিল সার্জন একটু অসুস্থ। এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম করোনা সন্দেহ হওয়ায়, যেহেতু তার সংস্পর্শে ছিলাম, তাই বাড়িতেই অফিস করছি। আর এই মুহূর্তে আমাদের সবার সামাজিক দূরত্ব মেনে পরিস্থিতি মোকাবিলা প্রয়োজন।’
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সেলিম রেজা বলেন, ‘জেলা প্রশাসক বাড়িতে আছেন। জনসমাগম যাতে কম হয় এ কারণে অফিসে কম সময় দেয়া হচ্ছে। তবে আমাদের সব কাজ চলছে।’
করোনার নমুনা পরীক্ষার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘তিনি (ডিসি) কাশিসহ অসুস্থ অনুভব করেছিলেন। এ কারণে ভাবির (ডিসির স্ত্রীর) পরামর্শে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে তিনি এখন সুস্থ আছেন। চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ‘আমি আসলে কোয়ারেন্টাইনে আছি। বাসায় বসে অফিস করছি। টেলিফোনে নির্দেশ দিচ্ছি।’
জেলা ফোকাল পারসন ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আইসোলেশনে আছি। শরীর ভালো না, অসুস্থ। মুঠোফোনে যতটুকু পারছি চালিয়ে যাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক নারীসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ মোট ৪৩ জন। তারা আইইডিসিআরের অধীনে চিকিৎসাধীন। এছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন চারজন। বুধবার থেকে পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করে আইএসপিআর থেকে পরিপত্র জারি করা হয়।