লাবিব। বয়স হয়তো ১১ বছর হবে হবে। আর এ বয়সেই বাবা-মাকে হারিয়েছে সে। মাত্র ৮ বছর বয়স থেকেই সে আব্দুর রহমানের বাড়িতে কাজ করে। এতে প্রথমে তাকে বাড়ির এককোণে অবস্থিত পরিত্যক্ত একটি রুমে থাকতে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপর বাড়ির সবার যেকোনো প্রয়োজনে লাবিবকে ডাকা হয়।আর লাবিবও সবার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। বাড়ির বাজার করা, ঘর পরিষ্কার করা, আব্দুর রহমানের একমাত্র ছেলে সোহরাবের দেখাশোনা করা তার প্রধান কাজ হিসেবে পরিগণিত।
দিনে দিনে আব্দুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের সাথে তার গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইতোমধ্যে থাকবার জন্য আব্দুর রহমানের মূল ভবনের একটি রুমও পেয়েছে সে।
বুলবুলি বেগম!আব্দুর রহমানের স্ত্রী। একজন ধার্মিক মহিলা। লাবিবকেও তিনি অনেক আদর করেন। লাবিবও তার ভালোবাসার মাঝে মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসাকে খুঁজে পেয়েছে। আব্দুর রহমান একটু রাগী স্বভাবের মানুষ হলেও লাবিবকে মাঝে মধ্যে আদর করেন। তার হাতখরচের জন্য কিছু টাকাও দেন। সোহরাব তাকে আপন ভাইয়ের মতোই জানে। এতোদিনে আব্দুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের সে আপন করে নিয়েছে। ওদের মাঝেই বেঁচে থাকার শক্তি ফিরে পেয়েছে।
একদিন বাজার থেকে এসে আব্দুর রহমান চিন্তামগ্ন হয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেন। বুলবুলি বেগম নামাজ শেষে জায়নামাজটা গুছিয়ে নিয়ে বললেন,
– ওগো, কী হলো, সোহরাবের বাপ? আজ তোমাকে এমন লাগছে কেন? কোনো সমস্যা?
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হতাশার সুরে আব্দুর রহমান বললেন,
– হ্যাঁ, মনটা ভালো নেই।
– হঠাৎ কী হয়েছে?
– কী হয়নি সেটা বলো আগে। তাড়াতাড়ি টেলিভিশনটা অন করে খবরের চ্যানেল দাও।
– কোনো খারাপ কিছু?
– হ্যাঁ, সারাবিশ্বে একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের উহান শহর থেকে করোনা নামক একটা ভাইরাস সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বলতে না বলতেই এটা নাকি আমাদের দেশেও ঢুকে পড়েছে। ইতোমধ্যে বিদেশ থেকে আগত প্রবাসীদের মধ্যে কয়েকজনের দেহে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে।এমনকি বাংলাদেশের অনেক লোক আক্রান্ত হয়ে গেছে।
– কী বলছো! আজ কয়েকদিন ধরে কোন খবর দেখছি না তো। হায়! আল্লাহ, একি খবর শোনালে, গো।
এই কথা বলে রেহনুমা বেগম উদ্বিগ্ন হয়ে টিভি সেটটা অন করলেন। তারপর
দু’জনে গভীর মনোযোগ দিয়ে খবর শুনলেন। এরপর টিভি অফ করে বেশ কিছু সময় নীরব থাকার পর বুলবুলি বেগম বললেন,
– এখন আমাদের কী হবে? আমরাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেলাম তো!
– হ্যাঁ, খুব ভয় লাগছে। কি থেকে কি হয়ে যায়!সোহরাব আর লাবিবকে দেখছি না যে । ওরা আবার কোথায় গেল?
– আর কোথায় যাবে? বাড়ির কোথাও আছে হয়তো।
– এখন থেকে ওদের দিকে বেশি খেয়াল রাখবে। বিশেষ করে সোহরাবের সবকিছুতে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। ওদের স্কুলও তক বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন থেকে ওর বাড়ির বাইরে যাবার কোনো দরকার নেই।
– এভাবে কী জীবন চলবে?
– কেন চলবে না। সুস্থভাবে বাঁচতে হলে আমাদের হোম কোয়ারান্টাইনে থাকতে হবে।
– হোম কোয়ারান্টাইন কী, গো?
– কোনোও ব্যক্তি যখন নিজের বাড়িতেই কোয়রান্টিনের সব নিয়ম মেনে, বাইরের লোকজনের সঙ্গে ওঠাবসা বন্ধ করে আলাদা থাকেন, তখন তাকে হোম কোয়রান্টাইন বলে।
–যদি কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হয়, তবে কী করতে হবে?
– কোনো ব্যক্তি করোনা পজিটিভ হলে তাকে আইসোলেশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
আইসোলেশনের সময় চিকিৎসক ও নার্সদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে থাকতে হয় রোগীকে। অন্য রোগীদের কথা ভেবে হাসপাতালে আলাদা জায়গা তৈরি করা হয় এদের জন্য। এতে অন্তত ১৪ দিনের মেয়াদে আইসোলেশন চলে। অসুখের গতিপ্রকৃতি দেখে তা বাড়ানোও হয়। আইসোলেশনে থাকা রোগীর সঙ্গে বাইরের কাউকেই যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না। তাদের পরিবার পরিজনের সঙ্গেও এই সময় দেখা করতে দেওয়া হয় না। একান্ত তা করতে দেওয়া হলেও অনেক বিধিনিষেধ মেনেই করতে হয়।
– এবার বুঝলাম। আচ্ছা কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা প্রাথমিকভাবে কীভাবে বুঝব?
– জ্বর,সর্দি, গলা ব্যথা, কাশি, মাথা ব্যথা, হাঁচি, অবসাদ, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ইত্যাদি দেখে।
– আচ্ছা। এ রোগের কোন প্রতিষেধক আবিস্কৃত হয়নি?
– না, এখনও এর কোন প্রতিষেধক আবিস্কৃত হয়নি। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে এই সময় কিছু অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দিয়ে, নিরাপদ পানি, ভাল করে খাওয়া-দাওয়া, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায় এমন কিছু ওষুধ ও পথ্য দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। যাদের শরীরে এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ও করোনার প্রকোপ অল্প, তারা এই পদ্ধতিতে সুস্থও হয়ে যায়। আর যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ও রোগের হানা বিরাট রকমের, তাদের পক্ষে সেরে ওঠা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
বুলবুলি বেগম চিন্তিত হয়ে বললেন,
– আচ্ছা, এ রোগ প্রতিরোধে কী কী ব্যবস্থা নিতে হয়?
আব্দুর রহমান বাজারের ব্যাগটা টেনে নিয়ে আবার বললেন,
– এখানে কিছু লেবু আছে। এগুলো ধুয়ে যত্ন করে রেখে দাও। মাল্টাগুলো ফ্রিজে রেখে দাও। এখন থেকে ‘ভিটামিন সি’ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আর হ্যাঁ, এ সময় নাক, মুখ ও চোখে হাত দেয়া থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। এখন থেকে ঘরের সবাই যেন কিছুক্ষণ পরপর সাবান ও নিরাপদ পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধৌত করে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখবে।
– তুমি তো দেখছি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মতো কথা বলছো, গো!
– তুমি জানো না, বাইরে এসব এখন সবার মুখে মুখে।
হঠাৎ সোহরাবিকে ঘরের দিকে আসতে দেখে আব্দুর রহমান কাছে ডেকে সোফায় বসিয়ে বললেন,
– শোনো বাবা, আজ থেকে খুব জরুরি দরকার ছাড়া আমরা কেউই ঘরের বাইরে যাব না।
– কেন, কি হয়েছে, বাবা?
– দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সোহরাব একটু ভেবে নিয়ে বলল,
– আমিও শুনেছি। টিভি অন করলেই তো এখন করোনার কথা শুনি।
হঠাৎ বাবার হাতে কিছু দেখে সোহরাব বলে ওঠলো,
– বাবা, তোমার হাতে ওগুলো কী?
– মাস্ক।
– কয়টা এনেছো?
– ৪টা।
– আমাকে দুইটা দাও।
– দুইটা কেন?
– একটা আমার জন্য। আরেকটা লাবিবের জন্য।
আব্দুর রহমান স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন,
– ভালো। অনেকক্ষণ ধরে সোহরাবকে দেখছি না। ও আবার কোনদিকে গেল?
– বাবা, ও আমার পড়ার রুম পরিষ্কার করছে। তোমারা এখন কথা বল আমি সেদিকে যাচ্ছি।
– আচ্ছা, যাও।
দিন যত অতিবাহিত হচ্ছে ততই করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানের লোকজন এতে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এরইমধ্যে লাবিব হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। গায়ে জ্বর। এরপর হালকা কাশি। হাঁচিও আছে।
খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে সে। সোহরাব তার বাবার কাছে লাবিবের অসুস্থতার কথা জানায়। লাবিবের এভাবে হঠাৎ অসুস্থ হতে দেখে তিনি খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন। রাতে স্ত্রীকে কড়া নির্দেশ দেন যেন সকাল সকাল লাবিবকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। বুলবুলি বেগম স্বামীর এমন আদেশে হকচকিয়ে গেলেন। তিনি চোখ কপালে তুলে বললেন,
– এ কেমন কথা! ছেলেটা এতোগুলো বছর আমাদের সাথে আছে। বাবা-মা নেই। আত্মীয়স্বজন বলতে তো ওর আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। এতটুকু বাচ্চা ছেলে কই যাবে? আর ওর অপরাধই বা কী?
– তুমি ওকে দেখেছো? ওর গায়ে জ্বর, হালকা কাশি। হাঁচিও আছে। আমার মনে হয় করোনা ভাইরাস ওকে সংক্রমণ করেছে। ওকে এ বাড়িতে রাখলে আমাদের সবার মাঝে এটি সংক্রমিত হবে।
– আমার মনে হয় তোমার ধারণা ঠিক নয়। ওর এমনিতেই জ্বর, কাশি হয়েছে। ঋতু পরিবর্তনের কারণে হয়তো এমনটি হয়েছে।
– না, আবেগে জীবন চলে না, গো। তুমি ওকে কালকেই বাড়ি থেকে বের করে দেবে। আমি আর কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না।
রেহনুমা বেগম স্বামীর হাত ধরে অনুরোধ করে বললেন,
– প্লিজ, সোহরাবের বাপ, তুমি দয়া করে ছেলেটাকে বাড়ি থেকে বের করে দিও না। প্রয়োজনে আমাদের পরিত্যক্ত রুমে ওকে থাকতে দাও।
– আচ্ছা ঠিক আছে। তাই কর। তবে রুমের বাইরে তালা মেরে রাখবে। খাবার সময় হলে বাইরে থেকে দেয়া যাবে।
এই কথা বলে আব্দুর রহমান বাজারের দিকে চলে গেলেন।
পরদিন সকালে বুলবুলি বেগম লাবিবকে কাছে ডেকে কেঁদে কেঁদে সব বুঝিয়ে বললেন। লাবিব চোখের জল ছেড়ে খালাম্মার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। বুলবুলি বেগম নিরপরাধ লাবিবকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। এরপর নিজে গিয়ে সেই পরিত্যক্ত রুমটি পরিষ্কার করে লাবিবকে রেখে আসেন।
এভাবে দিন যায়। লাবিব একাকী একটি পরিত্যক্ত রুমে বন্দী থেকে অঝরে কান্না করে। সোহরাব মাঝেমধ্যে ওর কাছে যেতে চায়। কিন্তু বাবার বারণ আছে বলে যায় না। শুধু খাবার দিতে আব্দুর রহমান নিজে যান। তাও বাইরে থেকে খাবার দিয়ে চলে আসেন।
প্রতিদিনের মতো আজও বিকালবেলা সোহেরাবকে একসঙ্গে নিয়ে মাগন্তীনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের দিকে আসেন আব্দুর রহমান। বাবা-ছেলে প্রায় এক ঘন্টা ধরে ব্যায়াম করে বাসায় ফেরে। কিন্তু আজ আব্দুর রহমানের সাথে স্কুল মাঠে রিয়াজ চৌধুরীর সাথে দেখা হয়। রিয়াজ চৌধুরী আব্দুর রহমানের একসময়ের সহপাঠী ছিলেন। কলেজে পড়ার সময় তারা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এরপর রিয়াজ চৌধুরী হঠাৎ করে ইতালিতে চলে যান। অনেকদিন পর তিনি দেশে ফিরেছেন। রিয়াজ চৌধুরীর সাথে তার ছেলেও আছে। আফাজ চৌধুরী। সোহরাবের সমবয়সী। রিয়াজ চৌধুরী ও আব্দুর রহমান একে অন্যের সাথে কোলাকুলি করে গল্প করতে থাকেন। অল্প সময়ের মধ্যে সোহরাব ও আফাজ একে অন্যের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে যায়। তারা দু’জনে একসাথে খেলতে থাকে।
এরইমধ্যে মাগরিবের আযান দিলে তারা যে যার গন্তব্যে চলে যায়।
এভাবে প্রায় সপ্তাহ খানেক সময় পার হলো।
সোমবার, সকালবেলা। আব্দুর রহমান ফজরের নামাজ আদায় করে সোহরাবের রুমের দিকে আসেন। সোহরাব তখনও বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে তিনি জোরে জোরে শব্দ করে বললেন,
– কী হলো সোহরাব, তুমি এখনও শুয়ে আছো?
সোহরাব কাতরাতে কাতরাতে বলল,
– আব্বু, আমার খুব খারাপ লাগছে। জ্বরে আমার গা পুড়ে যাচ্ছে।
এরইমধ্যে সোহরাব বেশ কয়েকবার হাঁচি-কাশিও দিয়েছে। আব্দুর রহমান ছেলের কপালে হাত রেখে চিন্তায় পড়ে যান। বুলবুলি বেগম রান্নাঘর থেকে এসে বললেন,
– সোহরাবের কী হয়েছে গো? ও কাঁদছে কেন?
– দেখো, জ্বরে ছেলেটার গা যেন পুড়ে যাচ্ছে। তারওপর হাঁচি-কাশিও হচ্ছে। এখন কী করবো? ভেবে কোন কূল পাচ্ছি না। না জানি ওকেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ করেছে।
– অমন অলক্ষুণে কথা বলো না। আমি ওর মাথায় জলপট্টি দিই। ততক্ষণে তুমি গিয়ে ডাক্তার নিয়ে এসো।
– আচ্ছা।
এই বলে আব্দুর রহমান বাজারের দিকে চলে আসেন। স্থানীয় একজন গ্রাম্য ডাক্তারকে সব খুলে বললে তিনি ‘জাতীয় করোনা ভাইরাস হেল্পলাইন’ এ কল দিতে বলেন।
আব্দুর রহমান হেল্পলাইনে কল দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে একটা টিম এসে সোহরাবকে মেডিক্যালের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে ওর সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। এরপর রিপোর্ট হাতে এলে আব্দুর রহমান জানতে পারেন তার ছেলে করোনা পজিটিভ। মুহূর্তেই আব্দুর রহমান ও বুলবুলি বেগমের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। এরপরই সোহরাবকে আইসোলেশনে নেয়া হয়।
আব্দুর রহমান তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
– আমার মনে হয় লাবিবের কাছ থেকে আমাদের সোহরাবের মাঝে করোনা ছড়িয়েছে। আমি তোমাকে কতো করে বলেছি ওকে বাড়ি থেকে বের করে দাও। তুমি দাওনি। মায়া দেখিয়েছিলে। শুধু তোমার কারণে সোহরাবের আজ এমন অবস্থা হয়েছে।
বুলবুলি বেগম স্বামীর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে সান্ত্বনার ভাষায় বললেন,
– শান্ত হও, সোহরাবের বাপ। রোগব্যাধি আল্লাহর দান। আবার আল্লাহই ভালো করে দেন। আর তুমি শুধু শুধু লাবিবকে দোষারোপ করছো।
তুমি নিজে সবকিছু জেনেবুঝেও সোহরাবকে নিয়ে প্রতিদিন বিকেলে বের হতে। হোম কোয়ারান্টাইনের নিয়ম পুরোপুরিভাবে মাননি। আমার মন বলছে, লাবিবের এমনিতেই জ্বর-কাশি হয়েছিল। করোনা হলে তো এতোদিনে ওর বেঁচে থাকবার কথা নয়।
– তাহলে সোহরাবের কোথা থেকে হয়েছে?
– আল্লাহই তা ভালো জানেন। তোমার মনে সন্দেহ হলে লাবিবকেও টেস্ট করে দেখতে পার।
স্ত্রীর এমন কথায় আব্দুর রহমান একটু চিন্তিত হয়ে ভাবতে লাগলেন। এরপর তিনি আবার হেল্পলাইনে কল করলেন। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে মেডিকেল টিম এসে লাবিবকে নিয়ে গেল। ওর সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হলো। মেডিকেল টীমের কাছ থেকে রিপোর্ট হাতে পেয়ে আব্দুর রহমান স্ত্রীর মুখের দিকে লজ্জার চোখে তাকিয়ে থাকেন। সত্যিই লাবিব করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না।
লেখক: মো. সাইফুল ইসলাম