গাজীপুর: চলমান করোনার আগ্রাসন মোকাবেলায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রাজধানী ঢাকার কয়েকটি এলাকা ও নারায়নগঞ্জ জেলা সহ বেশ কিছু এলাকা লকডাউন করেছে প্রশাসন। একই ধারবাহিকতায় গাজীপুর মহানগরে লকডাউন হয়েছে কি না তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গাজীপুর সিটিকর্পোরেশন ও মহানগর পুলিশ দুই ধরণের ঘোষনা দেয়ায় সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ে গেছে। সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরাও।
গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর মহানগরকে লকডাউন ঘোষনা করেন। এরপর গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ আনোয়ার হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, গাজীপুর মহানগর লকডাউন হয়েছে মর্মে কিছু মিডিযায় যে সংবাদ প্রচার হচ্ছে তা সত্য নয়। গাজীপুর মহানগর লকডাউন করা হয়নি। তবে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। আজ বুধবার জিসিসির মেয়র জাহাঙ্গীর আলম গাছা আঞ্চলিক অফিসে সম্মেলন করে বলেছেন, গাজীপুর মহানগরের ৫৭টি ওয়ার্ডই লকডাউনেরে মধ্যে আছে।
গাজীপুর মহানগর লকডাউন নিয়ে জিসিসির মেয়র ও জিএমপির কমিশনারের পরস্পর বিরোধী বক্তব্যের কারণে জনগনের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পুলিশ কমিশনারের বক্তব্যে জেলা প্রশাসনের কথাও বলা হয়েছে লকডাউন না হওয়া প্রসেঙ্গ।
গাজীপুর মহানগর লকডাউন না লকডাউন নয়, এই দুটি নির্দেশনা জারী হওয়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। কারণ জিসিসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত জরুরী দোকানপাট খোলা থাকবে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত জরুরী দোকানপাট খোলা থাকবে। এই ধরণের ঘোষনার পর গাজীপুর মহানগরের ৫৭টি ওয়ার্ডেই আওয়ামীলগের নেতা-কর্মীরা ছোট ছোট রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাঁশা দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। পুলিশ বড় রাস্তায় টহল জোরদার করেছে। জরুরী সেবামূলক ব্যবসার মধ্যে থাকাার পরও ইন্টারনেট সংক্রান্ত বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও নির্ধারিত সময়ের পর বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। ইন্টারনেট ও বিকাশ সংক্রান্ত দোকনপাট জরুরী সেবার মধ্যে পড়লেও ওই সকল ব্যবসাও বন্ধ রয়েছে। ফলে জরুরী প্রয়োজনে মানুষ টাকা পয়সা লেনদেন ও ইন্টারনেট সংক্রান্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উল্লেখ্ করা প্রয়োজন যে, মন্ত্রনালয়ের আদেশে ইন্টারনেট সেবাকে জরুরী সেবার আওতায় আনা হলেও স্থানীয় প্রশাসন ইন্টারনেট সেবাকে জরুরী সেবার বাইরে রেখেছে।
এ ছাড়া ইতোমধ্যে খবর হয়েছে, দুই জেলায় রাস্তায় গাড়িতে সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটেছে। জামালপুরে রাস্তার পাশে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় সন্তান প্রসব করেছে এক নারী। গতকাল সকালে এ ঘটনা ঘটে। গাইবান্ধায় চিকিৎসায় অসহযোগিতায় ফিরে যাওয়ার সময় রাস্তায় সন্তান প্রসব করতে বাধ্য হলেন এক মা। সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। তাই লকডাউন না লকডাউন না! এটা পরিস্কার না হলে আতঙ্কে পড়ে গাজীপুরে যেন এমন ঘটনা না ঘটে সেজন্য বিষয়টি পরিস্কার করে জনমনে একটি সিদ্ধান্ত পাঠানো উচিত। কারণ বর্তমানে গাজীপুর মহানগরের ছোট ছোট রাস্তার মোড়ে বাঁশ দিয়ে লকডাউন করার কারণে জরুরী প্রয়োজেন মানুষ রোগী নিয়েও রিক্সা বা অন্য কোন যানবাহনে করেও চলাচল করতে পারছেন না।
এই অবস্থায়, গাজীপুর মহানগর লকডাউন না কড়াকাড়ি! কোনটা তা স্পষ্ট করা দরকার স্থানীয় প্রশাসনের পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে গাজীপুর মহানগর কেমন আছে, তা ঘোষনা করা অতীব জরুরী। একই সঙ্গে জরুরী সেবাখাতের শ্রেনীবিন্যাস স্পষ্ট করে জরুরী সেবামূলক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সঠিক সময় জানানোর দাবী সাধারণ মানুষ ও ব্যসায়ীদের।
আইনজ্ঞরা বলছেন, নারায়ারনগঞ্জে মেয়র ও এমপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে লকডাউন চেয়েছিলেন। মেয়র আইভী প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদনও করেছিলেন। এরপরও স্থানীয় প্রশাসন লকডাউন ঘোষনা করেনি। পরবর্তি সময় আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ বিভাগ আইএসপিআর নারায়নগঞ্জের পুরো জেলাকে লকডাউন ঘোষনা করেছে এবং বর্তমানে নারায়ানগঞ্জে লকডাউন চলছে। ফলে গাজীপুর মহানগর লকডাউন কি না তা স্পষ্ট করা জরুরী। না হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতেই থাকবে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হবে সাধারণ মানুষ। আর আতঙ্কিত হওয়ার আশংকাও থেকে যায়।