ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ায় আগামী ১৫ দিনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। গতকাল সর্বোচ্চ করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে দেশে। করোনা আক্রান্ত অন্যান্য দেশগুলোতে প্রথম আক্রান্তের ৪০ দিন পর শুরু হয়েছে মহামারী পরিস্থিতি। তাই করোনার থাবা থেকে বাঁচতে আগামী ১৫ দিন ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গতকাল আক্রান্তদের মধ্যে দুজন বিদেশ ফেরত, বাকিরা আক্রান্তদের মাধ্যমে সংক্রমিত হচ্ছেন।
অনেকের সংক্রমণ শনাক্ত করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে। আক্রান্ত একজন থেকে তিনজন, তিনজন থেকে নয়জন এরপর নয়জন থেকে ২৭ জনে পৌঁছে যেতে পারে এই দুই সপ্তাহ সময়ের মধ্যে। তিনি আরও বলেন, তাই এই দুই সপ্তাহ সময় খুব ঝুঁকিপূর্ণ। আক্রান্তের হার কমাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের না হওয়াই উত্তম। বাইরে বের হলেও চার মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। হাঁচি, কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। এই ১৫ দিন ঘরে থাকলে করোনার আক্রান্তের হারকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিভিন্ন দেশে করোনা আক্রান্তের হার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইতালিতে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার ৪৩তম দিনে আক্রান্তের হার ভয়াবহ আকার ধারণ করে, স্পেনে ৫০তম দিনে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫তম দিনে মহামারী রূপ নিয়েছে করোনাভাইরাস।
বিশ্বের ১৮০টি দেশে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। অধিকাংশ দেশেই দেড় মাসের মধ্যে সংক্রমণ হার বেড়েছে। প্রথম দিকে সংক্রমণ হার খুব কম থাকলেও এই সময় পরেই হুহু করে বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রথম আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার ২৮তম দিনে দেশে মোট আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ৭০ জনে। গতকাল সর্বোচ্চ ৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন আটজন। তাই সচেতন না হলে বাড়বে সামাজিক সংক্রমণের ঝুঁকি। ঘনবসতির এ দেশে সামাজিক সংক্রমণ হলে মহামারী রুখে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ব্যাপারে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস দিয়ে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ প্রচ- সংক্রামক। তাই যতদূর সম্ভব চেষ্টা করতে হবে ঘরে থাকার।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জরুরি কাজে বের হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই। দুই দিনের মধ্যে করোনার থাবা থেকে মুক্তি মিলবে এটা ভাবার সুযোগ নেই। পৃথিবী সুস্থ হতে সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, সামনের দিনগুলো ঝুঁকি নিয়ে আসছে। সামাজিক সংক্রমণ সীমিত পর্যায়ে হলেও বাড়ছে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে হঠাৎ করে একটা এলাকায় বেশি রোগী পাওয়া যেতে পারে। তখন এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে। তাই বারবার হাত ধুতে হবে, বাইরে থেকে এসে পোশাক পানি ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। বাইরে গেলে ভিড়ের মধ্যে না গিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। অনেকেই এই বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অবহেলা নিজের, পরিবারের এবং সমাজের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। যতটা সম্ভব ঘরে থাকার চেষ্টা করতে হবে।