রাতুল মন্ডল শ্রীপুর (গাজীপুর): গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নেমেছে কর্মস্থলে ফেরা জনতার স্রোত। করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক উপেক্ষা করে হাজারো গার্মেন্টস শ্রমিক ফিরছেন তাদের কর্মস্থলে। এতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাকে, কভার্ডভ্যানে যে যেভাবে পারছে সেভাবেই ফিরছে তাদের কর্মস্থলে। শ্রমিকরা জানিয়েছেন তারা তাদের কর্মস্থলে চার তারিখ জয়েন করে যোগ দেয়ার কথা সেই চিন্তা মাথায় রেখেই তারা কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন।
শ্রমিকরা জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কারখানাগুলো তিন এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। চার তারিখ থেকে কারখানাগুলো খোলার ঘোষণা দিয়েছে। আমরা কারখানায় যদি সঠিক সময়ে না যাই তাহলে কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের চাকরিচ্যুতি করার ঘোষণা দিয়েছেন। হয়তো কিছুদিনের মধ্যে করোনা আতঙ্ক কেটে যাবে, কিন্তু আমরা চাকরি হারিয়ে গেলে, পরে আমরা কিভাবে চলব। সামনে ঈদ, এখন কারখানার কর্তৃপক্ষের কথামতো কাজে যোগদান না করলে যদি চাকরী হারিয়ে ফেলি তাহলে আরও মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে।
স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ময়মনসিংহের তারাকান্দা থেকে ভোর ছয় টায় গাজীপুর চৌরাস্তা যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন আফজাল হোসেন। তিনি ওই এলাকার একটি কারখানার শ্রমিক। করুনা ভাইরাসের আতঙ্কে কারখানা বন্ধ ঘোষণা হওয়ায় পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সময় গণপরিবহন বন্ধ থাকায় খোলা ট্রাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গিয়েছিলেন। চার এপ্রিল কারখানা খোলা থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে এবার খোলা পিকআপে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। এবারের যাত্রাও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়তে হয়েছে তাকে। তাকে বহনকারী পিকআপটি মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গা পুলিশ তাদের নামিয়ে দিয়েছে। ক্ষোভ ঝেড়ে তিনি বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকল কারখানা খোলা থাকায় এমন আতঙ্কের মাঝেও তাদের বিপাকে পড়তে হয়েছে।
শনিবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জৈনা বাজার থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত দেখা গেছে জনস্রোত। চার এপ্রিল কারখানা খোলা থাকার কারণেই আতঙ্কের মাঝেই ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে ফিরছে সাধারণ মানুষ।
মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হক জানান, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কারখানা বন্ধ ঘোষণায় অনেকেই বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। এখন কারখানা খোলার ঘোষণায় তারা কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে। মহাসড়কে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ পিকআপ ও খোলা ট্রাকে করে কর্মস্থলে যাচ্ছেন। আমরা হাইওয়ে পুলিশ শ্রমিকদের করোনা আতঙ্ক বুঝিয়ে ঘরে ফেরানোর চেষ্টা করছি। পাশাপাশি যে সকল যানবাহন সাধারণ মানুষ পরিবহন করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
এদিকে সাধারণ মানুষের জনস্রোত ফেরাতে সকাল থেকেই সেনাবাহিনীসহ উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মহাসড়কে কাজ করছেন।
শ্রীপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ফারজানা নাসরিন জানান, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী পরিবহন করায় সড়ক পরিবহন আইনে বিভিন্ন পিক-আপ ও ট্রাককে ২০টি মামলায় ১৯হাজার ৭’শ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া মহাসড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযান মহাসড়কে চলছে।