বিবিসি বাংলা, ঢাকা: ঢাকার একটি এলাকায় বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ দেয়া হয়। সেই সাহায্য নেয়ার জন্য মানুষের ভিড়। পহেলা এপ্রিলের তোলা ছবি।
করোনাভাইরাস দুর্যোগে বাংলাদেশে লকডাউনের মধ্যে কর্মহীন বা নিম্ন আয়ের মানুষকে ব্যক্তি, সংগঠনসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে যে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে, তাতে কোনো সমন্বয় না থাকায় জনসমাগম বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অনেক অভিযোগ উঠছে।
এমন সাহায্যকারিদের অনেকে বলেছেন, জনসমাগম এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
তবে সরকার বলছে, এখন থেকে সারাদেশে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে তালিকার মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাহায্য দেয়া না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দেশে লকডাউনের মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বা নিম্ন আয়ের দেড় কোটির বেশি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেয়া প্রয়োজন বলে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবেই বলা হচ্ছে।
বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, সংগঠন এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের মতো করে ত্রাণ দিচ্ছে।
ঢাকার বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা শাহানা নার্গিস শিউলী আত্নীয়-স্বজন মিলে বাসার সামনেই দুস্থদের ত্রাণ দিচ্ছেন।
“আমার বাসার কাছে বস্তিতে অনেক মানুষ আছে, আর এখানে অনেক রিক্সা চালক আছে, যাদের এখন আয় নাই। আমরা নিজেরা একটা তালিকা করে আমাদের বাসায় সামনে তাদের এনে সাহায্য দিচ্ছি। জনপ্রতি দুই কেজি চাল, এক কেজি ডাল, আলু এবং লবণ এবং সাবান প্যাকেট করে দিচ্ছি।”
ব্যক্তিগতভাবে বা বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেয়ার এসব আয়োজনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেক জমায়েত তৈরি হচ্ছে।
সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষেও ত্রাণ সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে জনসমাগম করা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখার অনেক অভিযোগ রয়েছে।
ফলে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব তো হচ্ছেইনা, সেই সাথে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। এমন অনেক ছবি এবং খবর নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে।
উত্তরের বিভাগীয় শহর রাজশাহী থেকে একজন এনজিও কর্মী দিল সেতারা চুনী বলছিলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সমন্বয় না থাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে।
“এভাবে দিতে গিয়ে জনসমাগম বেশি হচ্ছে। লোকজন একেবারে হামলে পড়ছে যা সামাল দেয়া যায় না। আসলে কোনো সমন্বয় নাই। ব্যক্তি, সংগঠন, সরকার সবাই দিচ্ছে, কিন্তু এসব বিচ্ছিন্নভাবে হচ্ছে। ফলে কেউ পাচ্ছে এবং কেউ একেবারে পাচ্ছে না। একটা বিশৃঙ্খলা হচ্ছে।”
ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ত্রাণ দেয়ার সময় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে।
এই সিটি করপোরেশনের বিদায়ী মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বাসিন্দাদের মধ্যে নিম্নআয়ের তালিকা করে ঘরে ঘরে খাদ্য সাহায্য পৌঁছানো হচ্ছে।
তবে একইসাথে তিনি স্বীকার করেছেন, এর বাইরে দুস্থদের জড়ো করে সাহায্য দিতে গিয়ে তারা সমস্যায় পড়েছিলেন।
“আমাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মধ্যে রিক্সা চালক এবং দিনমজুর যারা আছেন তাদের চিহ্নিত করা খুব কঠিন। সেজন্য বিভিন্ন রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের সহায়তা নিয়ে তাদের এক জায়গায় জড়ো করে সাহায্য দেয়া হয়।”
“তাদের সাহায্য দিতে গিয়ে একটা রিক্সা থেকে আরেকটা রিক্সার মধ্যে দূরত্ব থাকে। এটাও সত্য আমরা যখন আমরা আমাদের রিক্সা চালক ভাইদের দিতে যাচ্ছি, তখন অনেক ছিন্নমূল ও দুস্থ মানুষ জড়ো হয়ে যায়। অমরা তিন চারদিন আগে এরকম সমস্যার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। তখন সেই কার্যক্রম আমাদের বন্ধ করতে হয়েছিল।”