ওয়াসিফ আহাম্মেদ কিশোর, ময়মনসিংহ: গাজীপুর-ময়মনসিংহ জেলার সীমানা চিহিৃতকরণ নদীর নাম খিরু নদী। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর ও মযমনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার সীমানা এলাকায় এই নদীর অবস্থান। শীতলক্ষ্যা নদীর উপ-শাখা নদী এটি। শাখা নদী সুতিয়া নদী। ময়মনসিংহের পাগলা থানা ও ভালুকা থানার বিভাজনস্থল ও শ্রীপুর থানা এলাকা সমেত ত্রীমোহনী নামক স্থান থেকে নিজের নামে চলে গেছে শীতলক্ষ্যার উপ-শাখা নদী খিরু নদী। নিজের পরিচয়ে শ্রীপুর ও ভালুকা থানাকে বিভক্ত করে চলে গেছে ভালুকা উপজেলা পরিষদ হয়ে মল্লিক বাড়ির দিকে।
বর্ষাকালে এই নদী উপচে পড়ে পানিতে। যৌবনে উত্তাল খিরু নদীতে এক সমম চলত বড় বড় লঞ্চ। আসত সিলেট ও কুমিল্লা সহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বড় বড় পাল তোলা নৌকা। প্রাকৃতিক কারণে এখন আর বর্ষাকালে তেমন পানি হয় না। একই সঙ্গে উজানে অপরিকল্পিত শিল্পকারখানা হওয়ায় বিষাক্ত বর্জ্য এই নদীতে আসে। ফলে এই নদীর পানি এখন কালো রঙের বিষাক্ত পদার্থ হয়ে গেছে। খিরু নদীর পানি বিষাক্ত হওয়ায় এখন আর মানুষ গোসল করতে পারে না। এমনকি মাছ পর্যন্ত জন্মায় না মৃত্যুর ভয়ে। তাই প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে ঐতিহ্যবাহী খিরু নদী এখন সৌন্দর্য্যহীন, হারিয়েছে যৌবনও। নিজ সত্ত্বায় এখন আর খিরু নদী জনকল্যানে কোন ভূমিকা রাখতে পারে না বরং খিরু নদীর পানি হয়ে গেছে মানুষ মারার পদার্থ। প্রচন্ড পিপাষায় যে পানি এক সময় মানুষ সুপেয় মনে করে পান পর্যন্ত করত, ফিরে পেত জীবন, আজ সে পানি মানুষের জীবন কেড়ে নেয়ার উপযুক্ত হয়ে গেছে, হয়ে গেছে মানুষের জন্য হুমকি, এমনকি মৃত্যুরও কারণ। তাই এই নদীর পানিতে এখন কোন প্রাণীই নিরাপদ নয়। একই সাথে নদী ভরাট হওয়ায় নদীর তলদেশ অনেক সরুও হয়ে গেছে। নদীকে এখন খাল বলতেও কষ্ট হয় মানুষের।
খিরু নদীতে বর্ষাকালে এখন কম বেশী পানি আসে। সেই সময় কিছু হলেও যৌবন পেয়ে খিরু নদী তার আদি যৌবনে ফিরে যেতে চায়। খিরু নদীতে মাঝে মাঝে পানি বেশী হলে এই নদী মাঝে মাঝে রক্ষচক্ষুর ভয় দেখায়, চোখ ডগর ডগর করে বড় বড় করতে চায়, জনজীবনকে ভয়ও দেখায়। বন্যারও সৃষ্টি করতে চায় খিরু নদী। কিন্তু প্রকৃতির বিরুপ আচরণ তাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে দেয় না। যে টুকুই যৌবন ফিরে পায়, সেটুকুও মানবকল্যানে আসে না বরং মানবের ক্ষতির জন্য তৈরী হয়। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীর ভয় দেখোনোর এই রীতি ও সৌন্দর্য্য আমাদের প্রকৃতির উপহার। কিন্তু আজ সে উপহার বিলিনের পথে। নদী আছে, পানি নেই। আবার যাও পানি আছে তাও বিষাক্ত। জীবন দেয়ার পানি এখর মরণ উপহার দেয়।
সাধারণ মানুষ আশা করে, বিষাক্ত পানির সমস্যা সমাধান হয়ে প্রকৃতির এই বিরুপ আচরণ অনুকূলে আসলে হয়ত একদিন খিরু নদী তার আদি যৌবনে ফিরে যেতে পারে। আবার বর্ষাকালে লঞ্চ ও পালতোলা নৌকা ভাসতে পারে। হয়ত মানুষ তখন আগের মত খিরু নদীর পানিতে গোসলও করতে পারেব। ধরতে পারবে মাছও। কাজে আসবে ঐতিহ্যবাহী খিরু নদী। কোন বর্ষায় এক ভরা পূর্ণিমায় হয়ত মানুষ নদীর পাড়ে বসে আবার সেই ভটিয়ালী বা পল্লীগীতির গান শুনতে পারবে এমন আশাও অনেকের।
খিরু নদীর এই আশাজাগানিয়া কথা শুনে একজন বলেই ফেললেন , তাহলে আবার গাইব সেই গান
আমায় ডুবাইলিরে আমায় ভাসাইলিরে
অকুল দরীয়ায় বুঝি কুল নাইরে…
কুলনাই সীমা নাই অথই দরীয়ায় পানি
দিবসে নীশিথে ডাকে দিয়া হাত ছানিরে
অকুল দরীয়ায় বুঝি কুল নাইরে…
আমায় ডুবাইলিরে আমায় ভাসাইলিরে
অকুল দরীয়ায় বুঝি কুল নাইরে…
আজ ৩ এপ্রিল ২০২০ বিকাল ৫:৪৪ মিনিটে গাজীপুর ও ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী খিরু নদীর পারুলদিয়া বাজার এলাকা থেকে এই ছবিটি ক্যামেরা বন্দি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ওয়াসিফ আহাম্মেদ কিশোর।