সময়টা বড্ড খারাপ যাচ্ছে মরিয়ম বেগমের। হাঁটুর ব্যথায় কাবু৷ বয়স প্রায় ৮০। সকালে একবার ভাত জুটেছে। খেয়েছেন পাতলা ডাল দিয়ে। রাতে কি খাবে জানা নেই পরিবারটির। এই বৃদ্ধা থাকেন বড় ছেলের সাথে। ছেলে পণ্য আনা নেয়ার ভ্যান চালায়। এখন কাজ বন্ধ।
ছেলের নাম আফজাল হোসেন।
জানান, প্রায় সপ্তাহ খানেক থেকে আয় বন্ধ। একটা রড সিমেন্টের দোকানের পণ্য আনা নেয়া করে চলে তার সংসার। তিনি বলেন, মাওটা বাড়িত বসি। রাইতে কি খাবার দেব তাও জানি না।
আফজালের স্ত্রী ২টি বাসা ও ১টি ছাত্রাবাসে কাজ করেন। এখন সব কাজ বন্ধ। তিনি বলেন, সবাই কাজ বন্ধ করি দিলো। মাসের শ্যাষের দিক চলি গেলো সবাই। অল্প কয়টা পয়সা দিয়াও তো যাবার পারিল হয়৷
এই দম্পতির ৩ মেয়ে ১ ছেলে। ৩ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলে অন্যত্র থাকেন বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগ রাখেন না। তারা জানান, সূর্য ওঠার পর থেকে সাহায্যের জন্য ঘুরে বেরিয়েছেন। কিন্তু কিছুই জোটেনি কপালে। জমানো যা টাকা ছিল শেষ। ধার করবার মতোও কাউকে পাচ্ছেন না। তারা থাকেন মিরপুর ২ মোল্লাপাড়ায়। আজ মিরপুর ১ নম্বরে সাহায্যের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছেন। অনেকে সাহায্যও পেয়েছেন কিন্তু ভিড় ঢেলে সেই সাহায্য তাদের হাতে পৌছায়নি।
আফজাল হোসেন বলেন, এমনে অভাবের সংসার তার উপর কাম নাই কোন। করমোটা কী? ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় কী?
তাদের পাশের বাসায় থাকেন ইউনুস মিয়া। ছোট্ট মেয়ে আয়েশাকে রেখে গেছেন চালের সন্ধানে। সাথে গেছেন তার মা। আয়েশা জানায়, কাল রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। এরপর অনেক রাতে তার মা খিচুড়ি রান্না করে। সকালের দিকে সেই বেচে যাওয়া খিচুড়িই খায় সে। সে বলে, অল্প একটু খিচুড়ি ছিলো। আম্মা আমাক খাওয়াইছে নিজে খায় নাই। আমি কইলাম আম্মা খাও, কও তুই খা মা।
জানা যায়, তার বাবা চটপটির দোকানে কাজ করতেন। এখন দোকান বন্ধ। আয়টাও বন্ধ। বাড়িতে কোন চাল ডাল কিছুই নেই। অল্প কয়টা মুড়ি ছিলো তা খেয়েই আয়েশার বাবা মা সাহায্যের আশায় বেরিয়েছেন। সাহায্য মিললেই জুটবে অভুক্ত পরিবারটির রাতের খাবার। আয়েশা আরও বলে, আব্বা চাল আনলে খামু।