ভয়ঙ্কর ছবি ও কিছু কথা

Slider জাতীয় বিচিত্র


শামীমুল হক; রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়। একটি পাজেড়ো গাড়ি এসে থামলো। গাড়ির ভেতর থেকে দেয়া হচ্ছিল দরিদ্র মানুষকে টাকা। এক সময় মানুষের ভিড়ে দিশেহারা হয়ে উঠেন গাড়ির ভেতরে থাকা লোকজন। এ অবস্থায় রাজপথে ছুড়ে মারা হয় একশ টাকার বান্ডিল। আর সঙ্গে সঙ্গে নোটগুলো কুড়িয়ে নিতে হতদরিদ্র লোকজন লেগে যায় কাড়াকাড়িতে। এ এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য। মঙ্গলবার দুপুরের চিত্র এটি।

ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ এমদাদুল হক তার পাজেড়ো থেকে ব্যাতিক্রমী, ভয়ঙ্কর দান দক্ষিণা করেন এভাবেই। এ চিত্র সহকর্মী দৈনিক ইত্তেফাকের ক্রাইম রিপোর্টার জামিউল আহসান শিপু’র ফেসবুক ওয়ালে ঘুরছে আজ সকাল থেকে। শিপুর এই স্ট্যাটাসে সাংবাদিক বরুন ভৌমিক নয়ন মন্তব্য করেন – এ কেমন রসিকতা? তীব্র নিন্দা জানাই। খুবই অনাকাঙ্খিত। মামুন নেসার লিখেছেন- দ্রুত তাকে কাস্টডিতে নেয়া হোক। দেরি না করে সাসপেন্ড করা হোক। জাহিদুল হকের মন্তব্য – কি বিচিত্র সেলুকাস আমার এই বাংলাদেশ। আমলারাই নির্ধারন করেছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে।

বদরুল আলম চৌধুরী’র মন্তব্য – অসম্মান করে কোনকিছু দেয়া ঠিক না। এটা স্রেফ রসিকতা। বুধবার ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজে এ ছবি লিড হিসেবে ছাপা হয়। ছবিটি তুলেছেন ফটোগ্রাফার ইন্দ্রজিৎ ঘোষ। এখন প্রশ্ন হলো দেশ তথা বিশ্বের ক্রান্তি লগ্নে ওই কর্মকর্তা কি টাকার গরম দেখাতে এমনটা করলেন? সরকার যেখানে বলছে খাদ্যসামগ্রী বন্টন করতে, সেখানে তিনি কোন যুক্তিতে নগদ টাকা নিয়ে বেরুলেন? বোঝা গেছে তার প্রচুর টাকা আছে। তাই বলে এভাবে মানুষ জড়ো করে দিতে হবে? পরিবেশ দেখেতো মনে হয় আগে থেকেই জানান দিয়ে তিনি টাকা বন্টনে নেমেছেন। হঠাৎ করে হলেতো এত লোক জড়ো হওয়ার কথা নয়। ছবিটি দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কোথায় গেল তার বিবেক বুদ্ধি? যেখানে দুজন লোক একসঙ্গে হওয়া উচিত নয়। সেখানে শত শত লোক জড়ো করে টাকা বিলি – এটা সরকারি আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো। একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যদি এমনটা করেন তাহলে সাধারন মানুষ তার কাছ থেকে কি শিক্ষা নেবেন? সমাজে এমনো লোক আছেন যিনি অসহায়দের তালিকা করে গোপনে লোক দিয়ে সহায়তা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তিনি টাকা দিবেন ভালো কথা। কিন্তু এ পদ্ধতিতে কেন গেলেন? এ প্রশ্নের উত্তর কেবল তিনিই দিতে পারবেন। অন্য কেউ নয়।

দিন দিন করোনা পরিস্থিতি গভীর হচ্ছে। এর গভীরতা ইতিমধ্যে আঁচ করতে পারছেন সংশ্লিষ্টরা। আজ থেকে সেনাবাহিনী মানুষকে ঘরে থাকতে সহায়তায় কঠোর হচ্ছে। ইতালির এক ডাক্তার কাঁদছেন আর বলছেন – এই করোনা ভাইরাস কতটা ভয়ংকর, তা জানলে কেউ জানালা দিয়েও উঁকি দিতেন না। এমনিতেই প্রতিদিন মৃত্যুর সংবাদ আসছে। করোনা টেস্ট না হলেও সর্দি, কাশি, জ্বরে মানুষ মরছে। মৃত্যুর হারে ইতালির পরে বাংলাদেশ। তারপরও ভয়, আতঙ্ক কাজ করছে না অনেকের মনে। এই অনেকে দিব্যি ঘুরছে। একবার ও ভাবছে না কোনোভাবে যদি তিনি করোনায় আক্রান্ত হন তবে তার মাধ্যমে এটা ছড়িয়ে পড়তে পারে সমাজে। ডেকে আনতে পারে মৃত্যুর মিছিল। কি আতঙ্কময় পরিস্থিতি। করোনায় আক্রান্ত হলে স্ত্রী সন্তান আপনজনও সেবা করতে পারবে না। কাছে যেতে পারবে না। মারা গেলে গোপনে লাশ দাফন করতে হবে। চেহারাটুকুও দেখা যাবে না। ভয়ংকর এই দৃশ্য কল্পনা করে হলেও সবাই নিজেকে গুটিয়ে নেয়া উচিত। তাই বলছি, নিজে বাঁচুন পরিবারকে বাঁচান। সমাজকে বাঁচাতে সহায়তা করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *