মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানের পর এবার ভারতেও তাবলীগের মাধ্যমে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে। ইতিমধ্যে দিল্লির নিজামুদ্দিনে তাবলীগের জমায়েতে অংশ নেয়া সাতজন করোনায় মারা গেছেন। তাবলীগের ওই কর্মসূচী থেকে আক্রান্ত হয়েছেন আরো অনেকে। ফলে ভারতে এই জমায়েত থেকেই করোনার কমিউনিটি সংক্রমণের আশঙ্কা তীব্র হল। এ খবর দিয়েছে ডয়েচে ভেলে। এর আগে মালয়েশিয়ায় তাবলীগের এক জমায়েত থেকে পুরো দেশ করোনায় ছেয়ে যায়।
পাকিস্তানেও তাবলীগের ২৭ কর্মীদের দ্বারা করোনা সংক্রমিত হয়েছে। তাদেরকে কোয়ারেন্টিন করে পাকিস্তান পুলিশ।
কিন্তু পুলিশকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় এক তাবলীগকর্মী। ঘটনার পর পাকিস্তানে তাবলীগের কেন্দ্রীয় মসজিদ রাইভেন্ড মারকাজ ঘেরাও করে বাকিদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। ভারতে তাবলীগের জমায়েত থেকে ফিরে যাওয়ার পর কাশ্মীরে গিয়ে একজন আগেই মারা গিয়েছিলেন। তখনই তাবলীগের কর্মসূচির দিকে নজর আসে প্রশাসনের।
সোমবার তেলেঙ্গানায় করোনা আক্তান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ওই জমায়েতে অংশ নেয়া আরো ৬ তাবলীগকর্মী। অংশ নেয়া আরো ২৪ জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। মার্চের মাঝামাঝি এই জমায়েতে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় দুই হাজার ধর্মীয় নেতা। তার মধ্যে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, কিরগিজিস্তান থেকেও প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। বেশ কিছু প্রচারক ইতিমধ্যে ২০ থেকে ২৫টি বাসে করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছেন। এক হাজার ৫০০ নিজামুদ্দিনে তঘলিবের মারকাজ বা আশ্রয়শালাতে ছিলেন । আর তাঁদেরকে ঘিরে এবার ভারতে করোনার গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা প্রবল হয়েছে।
ঘটনার ভয়াবহতা উপলব্ধি করে উদ্বিগ্ন দিল্লি সরকার ও পুলিশ পুরো নিজামুদ্দিন এলাকা সিল করে দিয়েছে। বার বার ঘোষণা করা হচ্ছে, ওই জমায়েতে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা যেন করোনার পরীক্ষা করান। এখনও পর্যন্ত তিনশ জনের পরীক্ষা হয়েছে। সোমবার রাত থেকে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ কর্মীরা চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের নিয়ে নিজামুদ্দিনে গিয়েছেন। প্রাথমিক রিপোর্টে অনেকের শরীরেই করোনার লক্ষণ মিলেছে। ফলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নিজামুদ্দিনে পরীক্ষা করানোর জন্য দীর্ঘ লাইন পড়ে গিয়েছে। দিল্লিতে দিন কয়েক করোনার সংক্রমণের ঘটনা খুবই কম ছিল। নিজামুদ্দিনের ঘটনা সেই সংখ্যা অনেকটা বাড়িয়ে দিতে পারে বলে প্রশাসন মনে করছে। সোমবার দিল্লিতে নতুন করে ২৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ধারনা করা হচ্ছে, তাবলীগ থেকেই এই সংক্রমণ হয়েছে। এখান থেকে ফিরে গিয়ে আন্দামানে নয় জন ও একজনের স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই জমায়েতে যোগ দেওয়া ইন্দোনেশিয়ার দশজনের করোনা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মারকাজে যে এক হাজার ৫০০ লোক ছিলেন, তাঁদের বারবার চলে যেতে বলা হয়েছিল।
স্বাস্থ্য বিভাগের আশঙ্কা, ওই আশ্রয় শিবির থেকে গোটা দিল্লিতে করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। করোনায় আক্রান্ত না জেনেই অনেকে এলাকায় ঘুরছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এবং বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, মক্কায় নামাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কলকাতা সহ ভারতের সব বড় মসজিদে নামাজ বন্ধ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মসজিদে নামাজ বন্ধ থাকা দরকার। কী ভাবে এই সময়ে ওই জমায়েত সম্ভব হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মান্নান সাহেব।