গাজীপুর: অঘোষিত শিল্প রাজধানীখ্যাত ঐতিহাসিক ও চলমান বাস্তবতায় গাজীপুরে মরণঘাতি করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণ পরীক্ষা সহ করোনা প্রতিরোধে সাধ্যমত চিকিৎসার জন্য ল্যাবরেটারী স্থাপনের দাবী এখন সার্বজনিন।
বর্তমান বাস্তবতা বলছে, গাজীপুরে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় লাখ লাখ শ্রমিক কর্মরত। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রায় দুই ডজন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ওই সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা স্বপরিবারে গাজীপুরে বসবাস করেন। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত অনেক কর্মজীবী মানুষের পরিবার গাজীপুরে বসবাস করেন। এসব ছাড়াও গাজীপুরে অসংখ্য বাগান বাড়ি ও রিসোর্ট আছে, যাতে অনেক লোকের যাতায়াত।
রাজধানী ঢাকার সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত গাজীপুর জেলায় বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নমত মানের হাসপাতাল শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেপিজে হাসপাতাল, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতাল সহ অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেপিজে হাসপাতালে চিকিৎসা করেন। তাই গাজীপুরে অবস্থিত উন্নতমানের হাসপাতাল গুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মান বহন করে। এই সকল হাসপাতালে লাখ লাখ মানুষ চিকিৎসা সেবা নেয় সারা বছর। অনুকূল পরিবেশ থাকায় গাজীপুরের মেঘডুবিতে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের মত ষ্পর্শকাতর কেন্দ্রও করা হয়েছে। আজ গাজীপুর মহানগরের মেঘডুবি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের কোয়ারেন্টিনে থাকা ৩৬ ইতালি প্রবাসীকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খাইরুজ্জামান আরটিভি অনলাইনকে জানান, চিকিৎসকসহ সকলের সার্বিক সহযোগিতায় কোয়ারেন্টিন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। গাজীপুরে বিদেশফেরত ১৫৪৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫৫৮ জন ।
একই সঙ্গে বিশ্ব ইজতেমা মাঠকে কোয়ারেন্টিন করার জন্য সরকারী সিদ্ধান্তও হয়েছে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন বিভাগী শহরের মত শিল্পরাজধানী খ্যাত লাখ লাখ লোকের আবাসস্থল গাজীপুরে একটি হলেও করোনা সনাক্তকরণ ল্যাবরেটরী স্থাপন জরুরী এবং সময়ের দাবী।
অনুসন্ধান বলছে, করোনা ভাইরাস আক্রমন করার পর আইইডিসিআর ছাড়া কোথাও করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা হতো না। সম্প্রতি সরকার দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরী স্থাপনের ঘোষনা দিয়েছে। কিন্তু গাজীপুরে করোনা পরীক্ষার কোন ল্যাবরেটরী নেই। গাজীপুরে যথেষ্ট সহায়ক হাসপাতাল থাকার পরও করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য কোন হাসপাতালে ল্যাব স্থাপন না করায় গাজীপুরের মানুষ আক্রান্ত হলে তাকে গাজীপুরেই কোন না কোন হাসপাতালে পড়ে থাকতে হয়। ঢাকায় চিঠি লিখে অপেক্ষা করতে হয়, কখন নমুনা সংগ্রহের জন্য টিম আসবে। তেমনি একটি ঘটনা গাজীপুরে ঘটে গেছে। একজন রোগী করোনা সন্দেহে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর চিঠি দিয়ে নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৪ দিনের মাথায়। এই অবস্থায় লাখ লাখ মানুষের ঠিকানা গাজীপুরে একটি হলেও করোনা পরীক্ষাগার স্থাপন জরুরী। না হয়, করোনা সনাক্তকরণের আগেই রোগী মারা যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
গাজীপুরবাসীর অভিমত, বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার চলমান অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতে ও করোনা ভাইরাসের আক্রমন থেকে রক্ষার জন্য গাজীপুরে করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণের ল্যাব স্থাপন এখন সময়ের দাবী।
প্রসঙ্গত: স্থানীয় সরকারের একজন প্রতিনিধি হয়েও গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের মেয়র আলহাজ এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম ইতোমধ্যে করোনা প্রতিরোধে জাতীয় গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ইতোমধ্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রায় ৩০ হাজার কিট আমদানী সহ প্রচুর পরিমান করোনা চিকিৎসা সামগ্রী বিভিন্ন দেশ থেকে এনেছেন। এই সকল জিনিসপত্র গাজীপুরেই শুধু নয়, তিনি রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করছেন। মিডিয়া কর্মীদের জন্যও তিনি নিরাপদ পোষাক বিতরণ করছেন। এ ছাড়া তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের অনুরোধে তার নির্বাচনী এলাকা নাটোরেও করোনা প্রতিরোধ সামগ্রী দিয়েছেন। তাই গাজীপুরের মেয়রের আনা করোনা প্রতিরোধ সামগ্রী গাজীপুরে যথাযথভাবে ব্যবহারের জন্যও করোনা প্রতিরোধ ল্যাব স্থাপন জরুরী। আর এটা স্থাপন হলে মেয়রের আনা জিনিসপত্র দিয়েই এই ল্যাব চলতে পারবে। একই সঙ্গে গাজীপুর থেকে নির্বাচিত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের নিজস্ব অর্থায়নেই গাজীপুরের ল্যাব পরিচালিত হতে পারবে বলে গাজীপুরবাসীর অভিমত।
তাই অনতি বিলম্বে গাজীপুরে একটি হলেও করোনা প্রতিরোধ ল্যাবরেটরী স্থাপন করে করোনা রোগী সনাক্তকরণের ব্যবস্থা নিতে সরকারের নিকট গাজীপুরের সর্বস্তরের মানুষের দাবী ।