রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) হাসপাতাল তৈরিতে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বসুন্ধরা গ্রুপের আনুষ্ঠানিক চিঠির জবাবে তিনি প্রাথমিক এই সম্মতির কথা জানান। কীভাবে হাসপাতাল হবে তা খুব দ্রুত চূড়ান্ত হবে। চীনের উহানের চেয়ে বড় হাসপাতাল হবে এটি।
এ ছাড়া করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে গতকাল ১০ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে চেক গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। ত্রাণ তহবিলের চেক হস্তান্তরের সময় সায়েম সোবহান আনভীর বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতাল করার এ চিঠিটি হস্তান্তর করেন।
দেশ ও মানুষের কল্যাণে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা বসুন্ধরা গ্রুপ এ উদ্যোগ ছাড়াও প্রতিদিন রাজধানীর সিটি করপোরেশনের চারটি ওয়ার্ডের হতদরিদ্র মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কাজে লাগিয়ে খাবার বিতরণ করছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
এদিকে করোনা মহামারী মোকাবিলায় গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠিতে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) হাসপাতাল তৈরির আনুষ্ঠানিক চিঠিতে বসুন্ধরা গ্রুপ জানায়, আইসিসিবিতে চারটি কনভেনশন সেন্টার ও একটি ট্রেড সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কনভেনশন সেন্টারটির আয়তন ৩০ হাজার স্কয়ার ফুট, বাকি তিনটির প্রত্যেকটির আয়তন ২৪ হাজার স্কয়ার ফুট এবং ট্রেড সেন্টারটি দেড় লাখ স্কয়ার ফুট আয়তনের। এই কনভেনশন সেন্টার পুরো শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। এখানে আলাদা টয়লেট, রান্নার ব্যবস্থা রয়েছে। সবুজে ঢাকা এই কনভেনশন সেন্টার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং ঝকঝকে। যে কোনো সময় এখানে পরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করা যাবে।
চীনের উহানে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতাল অবকাঠামো তৈরি করতে হয়েছিল চীনা সরকারকে। উহানে তিনটি হাসপাতাল মিলে শয্যা সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫০০টি। সেখানে আইসিসিবিতে ৫ হাজার শয্যা স্থাপন করা সম্ভব। এই কনভেনশন সেন্টারে অবকাঠামো এবং সার্বিক সুবিধা নিশ্চিত থাকায় শুধুমাত্র বিশেষ ব্যবস্থাপনায় শয্যা বসিয়ে এই মহামারী মোকাবিলা করা সম্ভব। নতুন করে হাসপাতাল তৈরির সময় এবং অর্থ অপচয় দুটোই কমবে এখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে। সরকার চাইলে এখনই দক্ষ ব্যবস্থাপনায় পাঁচ হাজার শয্যা বসিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ কর্তৃপক্ষ।
বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা আবু তৈয়ব বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ মানবতার কল্যাণে কাজ করে থাকে। বানভাসী কিংবা শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় সবসময় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। সেই ধারাবাহিকতায় করোনা মহামারীতে মানুষের সেবায় হাসপাতাল তৈরির এই প্রস্তাব দিয়েছে। সরকার চাইলে আজ থেকেই কনভেনশন সেন্টারের ব্যবস্থাপনা বুঝে নিয়ে হাসপাতাল তৈরির কাজ এগিয়ে নিতে পারে। বসুন্ধরা গ্রুপ যে কোনো সময় দায়িত্ব হস্তান্তর করতে প্রস্তুত। করোনা আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বসুন্ধরা গ্রুপ এ প্রস্তাবনা দিয়েছে বলে জানান তিনি।
দুই হাজার পরিবারকে বসুন্ধরার খাদ্য সহায়তা : দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ গতকাল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আশপাশের দুই হাজার দরিদ্র পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। পরিবার প্রতি ১০ কেজি চাল, দুই কেজি ডাল, এক লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি পিয়াজ, দুই কেজি আলু, আধা কেজি আদা ও আধা কেজি রসুন দেওয়া হয়। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের ছোলমাইদ এলাকা, ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বেরাইদ ও ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডুমনি এলাকার দরিদ্র মানুষদের মাঝে স্থানীয় কাউন্সিলরদের মাধ্যমে এসব বিতরণ করা হয়।
ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে থাকা বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) মাহবুব উর রহমান বলেন, বসুন্ধরা এলাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ছোলমাইদ এলাকায় এক হাজার পরিবার, ডুমনিতে ৫০০ ও বেরাইদে ৫০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় কাউন্সিলরদের মাধ্যমে এগুলো বিতরণ করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
৪০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ঢালী বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ বিপদগ্রস্ত মানুষগুলোর পাশে এসে দাঁড়ানোয় তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এ ধরনের শিল্প পরিবার পাশে থাকায় এলাকার মানুষ নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে। ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর আইয়ুব আনসারি জানান, বসুন্ধরা থেকে ৫০০ প্যাকেট ত্রাণ পেয়েছি। বর্তমান কাউন্সিলর ফারুক আহম্মেদ ও আমি লোকজন দিয়ে এগুলো বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছি। ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম ভুঞা বলেন, ভিড় এড়াতে ৫০০ লোক এক জায়গায় জড়ো না করে লোক দিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে আরও অনুদান : প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে গতকাল সেনাবাহিনী ২৫ কোটি টাকা, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ৪ কোটি ৫০ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৩ টাকা, বিমান বাহিনী ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ১ কোটি টাকা, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ১ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে।
এ ছাড়া ওরিয়ন গ্রুপ ৩ কোটি টাকা, নাভানা গ্রুপ ২৫ লাখ টাকা, হোসাফ গ্রুপ ৫ কোটি টাকা, আবুল খায়ের গ্রুপ ৫০ লাখ টাকা, সামিট পাওয়ার লিমিটেড ৩ কোটি টাকা, কনফিডেন্স পাওয়ার কোম্পানি ৩ কোটি টাকা, দি ওয়েস্টিন হোটেল ২ কোটি, লা মেরিডিয়ান ২ কোটি টাকা অনুদান দেয়। সিএমসি-চায়না ১ মিলিয়ন মাস্ক, ১০ হাজার পিপিই এবং কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স ১০ হাজার পিপিই দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে।