করোনায় লন্ডভন্ড ভালোবাসা! লাইলী-মজনু কই!

Slider জাতীয় টপ নিউজ বাংলার মুখোমুখি সম্পাদকীয় সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী


রিপন আনসারী: প্রণয় শব্দের অর্থ প্রেমানুরাগ বা প্রীতি বা সৌহার্দ্য। আর ভালোবাসার আগে ভালোলাগা জরুরী। ভালোবাসা যখন প্রেমে পরিণত হয় তখন প্রণয় অবধারিত হতে পারে। তবে এই চেইনের শুরু কিন্তু ভালোলাগা দিয়ে। ভালোলাগা থেকে প্রণয় পর্যন্ত কোথাও যদি অতি শব্দটি কমন হয়ে যায় তখন প্রণয়ে বিপদ আসে। আর প্রণয় বিপদে পড়লে বিয়ে অনিশ্চিত হয়ে যায়। ভালোলাগা থেকে বিয়ে পর্যন্ত কোথাও ভাইরাস ঢুকলে সেখানেই চেইন ছিঁড়ে ফেলা ভালো। না হয় ভাইরাসের আক্রমনের পর যে ক্রিয় সম্পন্ন হবে সেটি হবে ভাইরাস আক্রান্ত সম্পর্ক, যা বিয়ে পর্যন্ত গড়ালে তা হবে মরণঘাতি।

মানবজীবনে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরী হওয়ার প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি চেইন তৈরী হয়। আর সেই চেইন যদি ভাইরাসযুক্ত থাকলেও ভেঙ্গে ফেলা না হয়, তবে ওই সম্পর্কটা সব সময় বিপদের অশনি সংকেত নিয়ে বাঁচে, যা, যে কোন সময় ভয়ঙ্কর। জীবনের ইতিহাসে কোন সম্পর্কের বন্ধন তৈরীর চেইনে ভাইরাস দেখা দিলে তা ভেঙ্গে ফেলা বা ছিঁড়ে ফেলা উচিত। আর যদি সেটা করা না হয়, তবে মনে করতে হবে, সময়, শ্রম ও অর্থ দিয়ে একটি বিপদ স্থায়ী ভাবে ক্রয় করা হল। তাই আমাদের উচিত সময়মত সঠিক কাজটি করতে বিলম্ব না করা। কারণ একটি সম্পর্ক মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয়। মানবজীবনে সম্পর্কের মধ্যে যে ভাইরাস ঢুকে সেটা হল, অতি ভালোবাসা। বলা যায়, অতি ভালোবাসার আবরণেই ভাইরাস প্রবেশ করে। আর এই ভাইরাস শেষ করে দেয় মানুষের পুরো জীবন। তাই বন্ধন তৈরীর যে কোন সময় ভাাইরাসের আক্রমন হলে তাৎক্ষনিকভাবে তা ঠান্ডা মাথায় বুঝে সম্পর্ক ভাঙ্গা। আর তা যত কষ্টেরই হউক, মায়া না করে সাথে সাথে ভেঙ্গে ফেলা উচিত। এই ভাঙ্গার অভিযানে যত ক্ষতিই হউক, হাসিমনে তা মেনে নেয়াই উত্তম। না হয় বিপদ নিশ্চিত।

আজকে মহাবিশ্বে যে শক্তিশালী ভাইরাস প্রবেশ করেছে তা অনেকটা অতি ভালোবাসার ফসল। বিজ্ঞান বলছে, করোনা ভাইরাস অনেক দুর্বল একটি ভাইরাস। কিন্তু দুর্বল হলেও এই ভাইরাস আজ মহাশক্তিশালী। বিশ্বকে জিম্মি করে ফেলেছে এই মরণঘাতি ভাইরাস। আজকে বলতে দ্বিধা নেই যে, যখন আমরা শুনলাম করোনা নামের একটি শক্তিশালী ভাইরাস আঘাত করতে পারে তখন আমরা সেটাকে গুরুত্ব দেই নি। কারণ আমরা সব সময় নিজেদেরকে মহাশক্তিশালী মনে করি। তাই এই ধরণের ভাইরাসকে আমরা কোন গুরুত্বই দেয়নি। আর আমাদের অতি ভালোবাসার ভাইরাসগুলো নীতিনির্ধারকদের খুশি রাখার জন্য সব সময় বলেছেন, কোন সমস্যা নেই। আমরা প্রস্তুত। এই ভাইরাস আমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

আশ্চর্য লাগে, যখন আমাদের শাসকদের কেউ কেউ এখনো বলে উঠেন, উন্নত দেশগুলো থেকে আমরা অনেক ভালো আছি। কেউ কেউ বলছেন, আমাদের নিকট থেকে চিকিৎসার সামগ্রী নিতে বিভিন্ন দেশ যোগাযোগ করছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী। কষ্ট লাগে, তখন, যখন ওই সব শুনা হয়। কারণ যে করোনা শনাক্ত করণ কিট ও প্রতিরোধ সামগ্রীও আমাদেরকে বিদেশ থেকে আনতে হচ্ছে এবং বিশ্বের কোন দেশ এখনো করোনার প্রতিষেধকই আবিস্কার করতে পারেননি, সেখানে আমাদের এত সাহসী বুলেটিন আসলে কি! তা চিন্তার বিষয় অবশ্যই। রাষ্ট্রযন্ত্রের চেইনকে অটুটু রাখার জন্য অতিভালোবাসার কথা বলে ক্ষমতা ধরে রাখা যাবে কি না, জানিনা। তবে জাতি টিকে থাকলে ক্ষমতা টিকে থাকবে হয়তবা। আর জাতি টিকে না থাকলে ক্ষমতার কোন ভিত্তিই নেই।

আজকে আমরা দেখছি, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বলার আগে বিশ্বের অবস্থা বলা হচ্ছে। মানে হল, বিশ্বের তুলনায় আমাদের অবস্থা অনেক ভালো, তা বুঝানোর জন্য। কিন্তু মৃত্যুর হার বিবেচনা করলে আমরা কোথায় আছি, সেটা কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হচ্ছে না। কারণ এটা বললে গুজব হয়ে যায়, তাই আমরাও বলি না। চেপে যাই। আমরা ভালো থাকার জন্য চেপে কেন, সবই করতে পারব, আমরা প্রস্তুত। তবে এই হার চিন্তা করে আমাদের ভালো অবস্থা থেকে মৃত্যুকোপের দিকে বিদেশীরা যাচ্ছেন লাইন ধরে। তারা বিশেষ ফ্লাইটে আমাদের দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। আমাদের নিরাপদ জায়গা থেকে বিপদের পথে তাদের এই যাওয়ার হিড়িক আমাদের কি বার্তা দেয়, তাও বলা যাবে না। কারণ আমাদের আইন কঠিন।

সবশেষ তথ্য বলছে, আমাদের দেশে বিভিন্ন স্থানে করোনার সংক্রমন ছাড়া একাধিক মানুষ প্রতিনিয়তই মারা যাচ্ছে। করোনার মৌলিক কোন উপসর্গ তেমনভাবে না থাকলেও মারা যাওয়া ওই সকল ব্যক্তিদের মুত্যর কারণও আমরা জানতে পারছি না। একই সঙ্গে ওই সকল মৃত্যুর পর একটি লাশের দেহেও করোনার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে জানা নেই আমাদের। গণমাধ্যমে এসেছে, ওই সকল ব্যক্তি অসুস্থ হওয়ার পর ডাক্তার পায়নি। আবার হাসপাতালে গেলেও চিকিৎসা পায়নি। আবার বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার পর করোনা না পেলেও ওই ব্যক্তির পরিবার করোনা রোগীর পরিবারের আদলেই সম্মান পাচ্ছেন। তাহলে প্রশ্ন এসে যায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু না হলে মৃতের পরিবার কেন করোনার সম্মান পাবেন? এটা কেমন কথা?

আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, আজকের ভালোবাসা লাইলী-মজনু বা শিরিণ ফরহাদের ভালোবাসাাকে অনুসরণ করে বলা যাবে না। তাই, বর্তমানে মৃত্যু যে কারণেই হউক, এটা এখন সত্য যে, ভাইরাস বা ভাইরাসের আতঙ্কের কারণে ভালোবাসার কোন পাখিও দেখতে আসে না। যে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে, জানাজায়ও কোন ভলোবাসার মানুষ আসতে চায় না এমনকি চিকিৎসকও চিকিৎসা করতে ভয় পায়। সেই মরণঘাতি ভাইরাসের আক্রমন থেকে আমরা রক্ষা চাই এখন। আর অতিভালোবাসার ভাইরাসে যে টুকুই আক্রান্ত হয়েছি, সেটুকু কেটে ফেলে দিয়ে নতুন করে সেতুবন্ধন তৈরী করি, যেন সত্য তথ্য পেয়ে আমরা সম্মিলিতভাবে সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রেখে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারি।

যাই হউক, বিশ্বমহামারিতে আমরা এখন আক্রান্ত। বিশ্বের সকল আক্রান্ত মানুষের মতই আমরা জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে। তাই এখন আর অবিশ্বাস নয়, বিশ্বাস করতে চাই, সরকার আমাদেরকে যেভাবে যত্নআতি করছেন, ইনশাল্লাহ, আল্লাহর রহমতে আমরা মুক্তি পাবই। শুরু থেকে করা সব ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে অতিভালোবাসাবাসির ভাইরাসমুক্ত হয়ে সঠিক তথ্য জাতির সামনে উপস্থাপন করবেন। কারণ করোনা ভাইরাস বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতির হার-জিত হওয়ার কোন বিষয় নয়। সরকার আপ্রাান চেষ্টা করছে, জনগণও সহযোগিতা করছে। আমরা চাই, হিংসা বিদ্বেষ ভুলে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের জন্য কাজ করি। সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আমরা সকলকে নিয়ে যেন বেঁচে যাই। আমিন।

এডিটর ইনচীফ
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম

তাং ২৯ মার্চ ২০২০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *