সিলেট: করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশে চলছে অঘোষিত ‘লকডাউন’। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না জনসাধারণ। ফলে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও বিভিন্ন পেশার নিম্নআয়ের মানুষ। কর্মহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।
এমতাবস্থায় সিলেটে বেকার হয়ে পড়া অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি। চলমান এ দুঃসময়ে অসহায়দের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা। পরিস্থিতির উত্তরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা অসহায়দের পাশে থাকারও ঘোষণা দিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, অঘোষিত লকডাউনের কারণে সিলেটে বস্তির প্রায় ৬৬ হাজার পরিবারের আড়াই লাখ নিম্নআয়ের মানুষ পড়েছেন ভোগান্তিতে। এদের বেশিরভাগই দিনমজুর ও রিকশাচালক। বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজ না পেয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন তারা। এমতাবস্থায় নগরীর নিম্নআয়ের প্রায় তিন হাজার পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। মঙ্গলবার প্রথম ধাপে সাড়ে ৩০০ পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় খাদ্যসামগ্রী।
গতকাল দ্বিতীয় দফায় সিলেট সদর উপজেলা ও নগরীর বিভিন্ন বস্তিতে আরও আড়াই হাজার পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয় খাদ্যসামগ্রী। প্রতিটি প্যাকেটে ছিল ১০ কেজি চাল, পাঁচ কেজি আলু, দুই কজি ডাল, এক লিটার তেল ও সাবান। এদিকে, গতকাল থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেও বিভিন্ন উপজেলা ও নগরীতে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম জানান, সরকার থেকে ১০০ টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। অসহায়দের পাশে থাকতে আরও বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। বস্তি ও বাসাবাড়িতে কর্মহীন হয়ে পড়া লোকজনের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশনও। এ নিয়ে গতকাল জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সভা করেন মেয়র ও কাউন্সিলরা। ওই সভায় নগরীর অসহায় লোকজনকে এক সপ্তাহের খাবার পৌঁছে দিতে জেলা প্রশাসনের কাছে ৬৪০ টন চাল বরাদ্দ চাওয়া হয়। জেলা প্রশাসন থেকে চাল পাওয়া গেলে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসপত্র করপোরেশন থেকে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র। তিনি জানান, সিটি করপোরেশনের ভিতরে ৬৬ হাজার পরিবারের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ অসহায়। অঘোষিত লকডাউনের কারণে তারা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। বাইরেও কোনো কাজ নেই। ফলে তারা অনাহারে-অর্ধাহারে থাকার উপক্রম হয়েছে। তাই সিটি করপোরেশন তাদের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহৎ এ জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৪০ কোটি টাকার প্রয়োজন। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এত বিশাল অঙ্কের অর্থের সংস্থান দেওয়া কষ্টসাধ্য। এ জন্য সরকারের অন্যান্য বিভাগ ও সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মেয়র।
সিটি করপোরেশনের চাহিদা প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম জানান, ‘সিটি করপোরেশন যে চাহিদা দিয়েছে তা বাস্তবসম্মত মনে হচ্ছে না। তারা বলছে, নগরীর দেড় লাখ পরিবারের মধ্যে ৬৬ হাজার পরিবার অসহায়। আর ৯ লাখ লোকের মধ্যে আড়াই লাখ লোকের সাহায্য প্রয়োজন। এ পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাস্তবতার অনেক ফারাক। সিটি করপোরেশনের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে তা বিতরণ করা হবে।’ এদিকে, সরকারি উদ্যোগ ছাড়াও গতকাল বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান অসহায়দের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে। অনেকে প্রতিটি পরিবারকে এক মাসের করেও খাবার পৌঁছে দিয়েছে।