শারমিন সরকার: কভিড-১৯ করোনাভাইরাস বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়ার আগে থেকেই আলোচনায় রয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। প্রতিদিন আইইডিসিআরের ব্রিফিংয়ের অপেক্ষায় থাকেন বাংলাদেশের মানুষ। রোগী শনাক্ত না হলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন, প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন ১৬ কোটি মানুষকে নিয়মিত নানা দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের হয়ে বেশ কয়েকজন কথা বললেও প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন এর পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। প্রতিদিনই তিনি ক্যামেরার সামনে এসে আমাদের করণীয় মনে করিয়ে দিচ্ছেন, নানা দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। করোনা প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন করার পাশাপাশি আশ্বস্ত করারও প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। এ সঙ্কটজনক মুহূর্তে সবাইকে সমমর্মী ও সহানুভূতিশীল হওয়ার, ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানাচ্ছেন।
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বাংলাদেশি রোগতত্ত্ববিদ এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তিনি ফাউন্ডেশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের ফেলো। ১৯৮৩ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করার পর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। পরে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) থেকে রোগতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করে তিন বছর গবেষণা করেন। তিনি নিপসমে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
২০১৬ সালে অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মহামারী সৃষ্টিকারী ভাইরাস ও রোগ বিস্তার প্রতিরোধে বিভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গবেষণা করেন। মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব দ্য ন্যাশনাল পাবলিক হেল্থ ইনস্টিটিউটের সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। ফাউন্ডেশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল অ্যাডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের একজন সম্মানিত ফেলো তিনি।
করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটিকে মহামারি হিসেবে আখ্যা দেয়ার পর আমার আর এই বিষয়ে বলার কিছু থাকে না। আমরা অধিক জনসংখ্যার একটি দেশ। তাই করোনা প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলাটাই আমাদের জন্য যথার্থ হবে। করোনা প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একজন রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি নিজে থেকেই এক ধরনের তাড়না বা চাপ বোধ করছি। কারণ এই গোটা বিষয়টি আমাদেরসহ সমগ্র পৃথিবীর জন্যই বেশ উদ্বেগের। যেহেতু আমরা এখন পর্যন্ত নিরাপদে আছি, আমাদের বাড়তি সচেতনতা জরুরি।
করোনা প্রতিরোধে অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রাণঘাতী ভাইরাসটি দেশে শনাক্তের আগে থেকেই এ নিয়ে নানা শঙ্কার কথা, এর থেকে বাঁচতে দেশের মানুষকে সচেতন করা এবং এ বিষয়ে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের কথা প্রতিনিয়ত দেশবাসীর কাছে তুলে ধরছেন তিনি। তার তত্ত্বাবধানেই জিকা ভাইরাস প্রতিরোধে সফলতা পায় বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা কারও অজানা নয়। বর্তমানে ব্যস্ত আছেন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস নিয়ে। এর মধ্যেও অনর্থক সমালোচনায় পড়েছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষের চোখ আছে, মানুষের মুখ আছে, মানুষ মন্তব্য করতেই পারে। আমি বৈজ্ঞানিক তথ্যের বাইরে কোনও মন্তব্য করতে রাজি না।