করোনাভাইরাসের কারণে খেটে খাওয়া মানুষরা বড় বিপাকে। তাদের ঝুঁকিটা শুধু স্বাস্থ্যগত নয়, বরং তার চেয়ে অনেক বেশি জীবন ধারণের। তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিটাও অন্যদের থেকে বেশি। তারা থাকেন অস্বাস্থ্যকর, ঘিঞ্জি ও নোংরা পরিবেশে। সেখানে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে না। ছোট্ট একটি কামরায় অনেক মানুষ গাদাগাদি করে থাকেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি। তবে করোনা মহামারীর কারণে নিম্ন আয়ের এ সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন, তার থেকে বেশি উৎকণ্ঠিত ক্ষুধা নিবারণের জন্য।
তাদের একটাই কথা- কাম না করলে খামু কেমনে? বউ-বাচ্চাকে কী খাওয়ামু?
কথা হয় বুুুড়িগঙ্গা নদীতে খেয়া পারাপার কারী রাজ্জাক মাঝির সঙ্গে। তিনি বলেন, হামাগ পেটতো চালাইতে হইবো। রোজ কাম করি। রোজ কামাই অয়। ওই টাকা দিয়ে সংসার চালাই, পোলাপানরে পড়াই। কাম না করলে টাকা পামু কই। আমাগো খাওয়াইবো ক্যাডা। ক্ষুধার জ্বালা বড় জ্বালা। এমন আক্ষেপের কথা বললেন বড়িগঙ্গা নদীতে খেয়া পারাপারকারী রাজ্জাক মাঝি। কথা হয় বুড়িগঙ্গার মাঝি বৃদ্ধ কাঞ্চন মিয়ার সঙ্গেও। তিনি বলেন, ভাড়া নৌকায় নদীতে খেয়া পারাপার করি। প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা আয় করতাম। সেখান থেকে ঘাট মালিককে ও নৌকার মালিককে দেয়ার পরে ৩০০ টাকা থাকতো। তা দিয়ে ছেলে মেয়েকে নিয়ে চলতাম। কাকডাকা ভোরে বইঠা হাতে নিতেন তিনি। কাজ শেষ হতে বেজে যায় রাত ১২টা। গত বিশ বছর ধরে আগানগর ঘাট থেকে মিটফোর্ড ঘাটে যাত্রী পারাপার করেছেন তিনি। এর আগে এমন পরিস্থিডু কখনো দেখননি বলে জানান কাঞ্চন মিয়া। কেরানীগঞ্জের কদমতলী মোড়ে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। ওই দোকান মেয়ের জামাইকে নিয়ে চালাতেন গত তিনদিন ধরে বন্ধ থাকায় খুব কষ্টে কাটছে তাদের দিন। ছয় ছেলে মেয়ে জামাই মিলে ১০ জনের সংসার। এতদিন মোটামুটি তাদের ভালোই চলছিল। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে তাদেরকে না খেয়ে মরতে হবে বলে জানান। চুনকুটিয়া পূর্ব আমিন পাড়ার তাসলিমা ও আন্না দুই বোন। দুজনেই কেরানীগঞ্জের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। বৃদ্ধ মায়ের কাছে সন্তান রেখে যেতেন তারা। নাতিদের দেখাশোনা করতেন মা। যে আয় রোজগার হতো তা দিয়ে চলতো তাদের সংসার। কিন্তু গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্ধেক টাকা পেয়েছেন তারা। তাসলিমা বলেন, এমন একটা অবস্থা আমাদের। সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য আসলেও, তা আমাদের ভাগ্যে জুটবে না। কারণ অনেকেই মনে করেন, যারা গার্মেন্টসে চাকরি করেন, তারা তো ভালো আয় করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টসে যারা চাকরি করেন, তারা যা পায় তা দিয়ে কোনমতে সংসার চলে। সরকার যদি আমাদের দিকে এখন না তাকায়, তাহলে আমাদেরকে অর্ধাহারে থাকতে হবে।