রিপন আনসারী: শাসক না সেবক এটা পরিস্কার না হলেও সেবার মাধ্যমে দেশ শাসন করতে হবে এটা পরিস্কার। কারণ সেবায় ভালোবাসা থাকে, শাসনে থাকে না। গণতন্ত্র স্বীকার করে দেশসেবা করতে হলে সেবাই করতে হবে শাসন নয়। আমাদের সংবিধানে সেবা ও শাসন নিয়ে এখনো ঝগড়া আছে। কারণ সংবিধান এখনো সেবার জন্য পুরোপুরি নয়। কারণ প্রজাতন্ত্র কথাটা থাকলে শাসনকে ইঙ্গিত করে। তবুও যেহেতু আমাদের দেশে গণতন্ত্র আছে বলে আমরা মনে করছি, সুতরাং সেবা করাই উচিত। সেবার মাধ্যমে দেশ চালানো দরকার। শাসনের মধ্যে ভালোবাসা থাকে না। শাসনের মধ্যে যে ভালোবাসার কথা বলা হয়, সেটা ভালো একটি বাসাও নয় বা ভাল একটি বাসাও হয় না। তাই ভালোবাসার মাধ্যমে দেশের সেবা করতে হলে রক্তচক্ষু দিয়ে শাসন করলে দেশ সেবা করা হবে না। তাই ভালোবাসার চর্চা করা উচিত। ভালোবাসা কাকে বলে সেটা না জানলে জেনে নেয়া ভাল। কারণ না জেনে ঔষুধ দিলে রোগী মারা যায়। রোগী মেরে ডাক্তার হওয়া যায় না। এই জন্য রোগী মারার ডাক্তার আমাদের দরকার নেই। রোগ হলে ডাক্তার আনব. যে ডাক্তার রোগীকে ভাল করবে সেই আশা করেই।
চলছে বিশ্ব মহামারী। পুরো বিশ্ব এই মহামারীতে আক্রান্ত। এই রোগের ঔষুধ এখনো আবিস্কার হয়নি। এমনকি রোগ চিহিৃত করার ঔষুধও আবিস্কার হয়েছে পুরোপুরি, সেটাও বলা যাবে না। করোনা ভাইরাসের সঠিক লক্ষন কি কি! তা এখনো আবিস্কার হয়নি। কারণ এখনো বলা হচ্ছে, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত অনেক রোগের পূর্ব লক্ষন ছিল না। সুতরাং বলতেই হবে, এই রোগের উপসর্গ এবং প্রতিষেধক একটিও এখনো পরিস্কারভাবে আবিস্কার হয়নি।
আমরা বলছি, মৃত্যুকে নয় সংক্রমন ঠেকাতে ঘরে বসে থাকতে হবে। আর এই সূত্র মেনেই আজ পুরো পৃথিবী লকডাউন বলা যায়। এই অবস্থার মধ্যেই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। প্রতি মুহূর্তেই লাশ ও আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে আমরা যুদ্ধ করছি। ঘরে বসে যুদ্ধ। এটা নতুন কৌশল। যুদ্ধ ঘরে বসে করতে হয় এটা যেমন নতুন, তেমনি আইন ভেঙ্গে বাইরে গিয়ে মার খেতে হয়, অপমান হতে হয়, ভারতে দেখা গেলো ধর্ষনও হতে হয়, এটাও নতুন। কারণ আইন অমান্য করলে কারাভোগ করতে হয়। পিতা বা দাদার বয়সি কাউকে কান ধরে উঠ-বস করানো হয় না। আইন অমান্য করলে ধর্ষন হতে হয় না। মার খেতে হয় না।
শেষ খবরে জানা গেছে, যশোরের মণিরামপুরের বৃদ্ধদের কান ধরে ওঠবস করানো সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসিল্যান্ড) সাইয়েমা হাসানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শনিবার সকালে জনপ্রশাসন সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। তবে সমালোচনা শুরু হলে তিনি মনিরামপুরের সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকারি দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনে ভুল হতে পারে। ঘটনাটি নিয়ে তিনি বিব্রত। ভুল হয়ে থাকলে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী।
বর্তমান অবস্থায় কেউ লকডাউন অমান্য করে বাইরে গেলে তাকে ভালোবাসার মাধ্যমে ঘরে পৌঁছে দেয়া উচিত। আর যারা বাইরে যাচ্ছেন, তারা যদি পেটের ক্ষুধা নিবারণে খাদ্যের জন্য বা জীবন বাঁচাতে ঔষুধের জন্য বা লজ্জা নিবারণে বস্ত্রের জন্য গিয়ে থাকেন, তখন তাদের সমস্য সমাধান করে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে আর সেটা অবশ্যই ভালোবাসার মাধ্যমে। কিন্তু বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা মানব জাতিকে বিমুর্ষ অবস্থা থেকে গুরুতর করে ফেলছে। ২৬ মার্চ একজন কর্মচারীর বা সেবকের সরকারী রুমে একজন মালিকের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে। বলা হয়েছে, ঘুষের জন্য হত্যাকান্ড। এমন হয়ে থাকলে দুঃখ বা লজ্জা দুটোই হার মানাবে। কারণ এই সময় যে কাজ হল, সেটা যেকোন সময়ের জন্য অমানবিক, অনাকাংখিত ও গুরুতর অপরাধ।
আমাদের লজ্জা হওয়া উচিত, কারণ অনেক দেশ বা শাসক মনে করতেন, তারা সব পারেন। রোবটও আবিস্কার করে ফেলেছেন। রোবট কথা বলতে পারে। শুনা গিয়েছে, রোবটের ভিতরে মানুষের আত্মা প্রবেশ করানোর কাজও চলছে। আজকের এই প্রেক্ষাপটে স্বীকার করতেই হবে, সব আবিস্কার ফেল। এখন সারা বিশ্ব যে রোগে আক্রান্ত তা অদৃশ্য কোন রোগ। বলা হচ্ছে ভাইরাস। মরণঘাতি ভাইরাস। যারা রোবটের ভিতরে মানুষ আবিস্কার করতে চাইছে, তারাও আজ আক্রান্ত হচ্ছে অজানা রোগে। যে রোগের কোন ঔষুধ নেই। নেই রোগ সনাক্তেরও তেমন কিছু। এরপরও যদি হুস না হওয়া যায়, তবে বলতে হবে, আমরা এখনো পাগলের স্বর্গে আছি। তাই এখনি সময় সেবার স্বর্গে ফিরে আসা।
সৃষ্টির্তার প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে একমাত্র সেবার মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। কারণ মানব সেবাই উত্তম ইবাদত। কোন ভাবেই অধর্ম করে বা অতিউৎসাহি হয়ে কিছু করতে গেলে পরিণাম হবে ভয়াবহ। যার প্রমান বর্তমান অসুস্থ বিশ্ব, সর্বদাই অসহায়। আর আমরা এখন পালিয়ে ঘরে গিয়ে সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করছি, যেন তিনি আমাদের ক্ষমা করেন। তাই এই সময়ে পরিশুদ্ধ হয়ে নতুন আঙ্গিকে সেবা করা উচিত, যা আগে করিনি।
প্রধান সম্পাদক
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম
তাং ২৮ মার্চ, ২০২০।