কলকাত: ভারতে লকডাউন এবং সমস্ত পরিবহনের ক্ষেত্রে বন্ধের নির্দেশিকা চালু হওয়ায় নানা শহরে আটকে পড়েছেন বহু বাংলাদেশি। একই সঙ্গে তারা আর্থিক সঙ্কটে পরে দিশাহারা। এদের মধ্যে অধিকাংশই ভারতে এসেছেন কেউ পিতার, কেউ স্ত্রীর, কেউ ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য। প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে রয়েছেন পরিবারের একাধিক সদস্য। কলকাতা ছাড়াও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন শহরে তারা চিকিৎসার জন্য গিয়ে আর দেশে ফিরতে পারছেন না। আরেক দল ভারতে বেড়াতে এসে আটকে পড়েছেন। এদের সকলের কথায় অসহায় আর্তি। অবশ্য অনেকেই আবার ভারতে করোনা পরিস্থিতি যে দ্রুত বিপজ্জনক রূপ নেবে তা আন্দাজ করেন নি।
অনেকের আবার চিকিৎসাই শেষ হয়েছে কয়েকদিন আগে। এই সঙ্কটজনক অবস্থায় কয়েকজন বাংলাদেশ হাইকমিশন ও উপ-হাইকমিশনে যোগাযোগ করেছেন। জানিয়েছেন তাদের সমস্যার কথা। উপ-হাইকমিশনে যোগাযোগ করা একটি পরিবারের একজনের ক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথেরাপি চলছে। অন্য পরিবারটি চেন্নাইয়ে আটকে রয়েছেন। জানা গেছে, ভারতে চিকিৎসা করতে আসা সকলকে বাংলাদেশে ফেরার আগে স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছ থেকে করোনার উপসর্গ নেই এমন সার্টিফিকেট নিতে হবে। সীমান্তে এই সার্টিফিকেট দেখাতে হতে পারে। চেন্নাইয়ে আটকে পড়া নোয়াখালীর জাফর হোসেন তার পিতা আবু তাহেরের ওপেন হার্ট সার্জারি করাতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে রয়েছে তার ভাইও। সার্জারি ঠিকভাবেই হয়েছে। গত সোমবারই সেলাই কাটা হয়েছে। কিন্তু কলকাতায় ফিরে দেশে ফেরার কোন রাস্তাই তিনি খুঁজে পাননি। এর উপর পশ্চিমবঙ্গে সম্পূর্ণ লকডাউন চালু হওয়ায় তাদের মাথায় হাত।
ভারতের বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে এসেছিলেন বরিশালের ১১ জনের একটি দল। এই দলের সদস্য নাবিলা আঞ্জুমান টেলিফোনে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, তারা প্রায় এক মাস আগে ভারতে এসেছেন। তখন কোনও সমস্যা আঁচ করতে পারেননি। বরং নির্বিঘেœই ভারতের বিভিন্ন পর্যটনস্থানগুলি দেখে তারা মহীসুরে এসেছিলেন কয়েকদিন আগে। কিন্তু ফেরার মুখে লকডাউনের সমস্যায় পড়েছেন। বর্তমানে মহীসুরে তারা নিরাপদ আশ্রয়েই রয়েছেন। তবে তাদের হাতে অর্থ প্রায় শেষ। এই অবস্থায় বরিশালে পরিজনের কাছে অর্থ পাঠানোর করুণ আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু সেই টাকা পৌঁছানোও সমস্যা বলে জানা গেছে। তিনি জানিয়েছেন, তাদের পাশে থাকা আরেকটি বাংলাদেশি পরিবারও একইভাবে সেখানে আটকে রয়েছেন। ফলে আটকেপড়া বাংলাদেশিরা সকলেই দেশে ফিরতে চাইলেও এখন তা প্রায় অসম্ভব। ভারত থেকে সমস্ত আন্তর্জাতিক বিমানের ফ্লাইট ৩১শে মার্চ পর্যন্ত বন্ধ। ফলে, বিমানে তারা বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন না। ৩১শে মার্চ পর্যন্ত ভারতে অপেক্ষা করেও নিস্তার নেই। কারণ, ২৬শে মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার লকডাউন ঘোষণা দিয়েছে। ফলে ২৬শে মার্চের আগে দেশে না ফিরতে পারলে ৪ঠা এপ্রিলের আগে তাদের পক্ষে ফেরা মুশকিল। এরই মধ্যে কলকাতায় ফিরে যে কয়েকটা দিন অপেক্ষা করবেন সেটাও সম্ভব হবে না। পশ্চিমবঙ্গে মঙ্গলবার থেকে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
কলকাতায় বিভিন্ন গেষ্ট হাউসে আটকে রয়েছেন বেশ কয়েকটি পরিবার। এদের মধ্যে অনেকেই চিকিৎসার জন্য এসেছেন। তবে কেউ কেউ বেড়াতেও এসেছেন। তাদের সকলের মধ্যে আতঙ্ক কীভাবে দ্রুত দেশে ফিরবেন তা ভেবে। কলকাতায় ঘুরতে এসে বাংলাদেশের আটজনের একটি দল গেস্ট হাউজেই বন্দি রয়েছেন। এই দলের সদস্য রাইফাত হোসেন জানিয়েছেন, কলকাতায় ঘুরতে এসেছিলাম। কিন্তু করোনার জন্য সব জায়গা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফিরতেও সমস্যা হচ্ছে। রাইফাতের দাদাও পরিবারসহ আটকে পড়েছেন কলকাতায়। ঝিনাইদহের বাসিন্দা শামিম আহমেদ স্ত্রী নার্গিস আখতারের চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এসেছিলেন। ২৮শে মার্চ চিকিৎসকের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট। কিন্তু দেখানো যাবে কিনা তা নিয়ে তিনি যেমন চিন্তিত তেমনি কীভাবে দেশে ফিরবেন তা ভেবেও কোনো কূল পাচ্ছেন না। গাজীপুরের জেসমিন আখতার বৃদ্ধা মাকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে এসে এমন সঙ্কটে পড়বেন তা ভাবতেও পারেননি।