লকডাউন বৃটেন

Slider জাতীয় সারাবিশ্ব


লকডাউন বৃটেন। অত্যাবশ্যকীয় কাজ বাদে ঘর থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ। গত ২৪ ঘন্টায় সেখানে করোনা ভাইরাসে কমপক্ষে ৫৪ জনের মৃত্যুর পর এ ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। মৃত্যুর এই মিছিলে নতুন নতুন মানুষ যোগ হওয়ার প্রেক্ষিতে তিনি বৃটিশ নাগরিকদের জীবন রক্ষার জন্য নতুন এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, শরীরচর্চার জন্য দিনে মাত্র একবার ঘর থেকে বের হতে পারবেন নাগরিকরা। অত্যাবশ্যকীয় কাজে যোগ দিতে এবং ফিরতে পারবেন। খুব দরকারি জিনিসপত্র কিনতে দোকানে যেতে পারবেন। কিনতে পারবেন ওষুধপত্র।

সেবা প্রয়োজন হলে সেটা নিতে পারবেন। তবে এর বাইরে অন্য কোনো কাজে ঘরের বাইরে যাওয়া চলবে না। তাই অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন সব পণ্য বিক্রি করে যেসব দোকান তা বন্ধ করতে বলা হয়েছে। দু’জনের বেশি মানুষ একত্রিত না হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি লোকজন এসব নির্দেশ না মানে তাহলে তাদের ওপর শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে পুলিশকে। তারা নির্দেশ অমান্যকারীকে জরিমানা করতে পারবেন। ছত্রভঙ্গ করে দিতে পারবে দলবদ্ধ লোকজনকে। ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেছেন বরিস জনসন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি, ডেইলি মেইলসহ বৃটিশ সব মিডিয়া।

সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে, বৃটেনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৫৪ বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩৩৫। এমন প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বরিস জনসন বলেছেন, দেশ এই মুহূর্তে একটি জাতীয় জরুরি অবস্থার মুখে। এক্ষেত্রে জাতীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক স্কিম এবং জীবন রক্ষার জন্য সবাইকে ঘরে থাকা প্রয়োজন। এই বিধিনিষেধ কমপক্ষে তিন সপ্তাহ অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন। অব্যাহতভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে বলেও মন্তব্য করেন জনসন। এতে তিনি লোকজনকে যত কম সম্ভব ঘরের বাইরে থাকতে উৎসাহিত করেছেন। বলেছেন, যাদের সঙ্গে বসবাস করছেন না এমন লোকজন থেকে দুই মিটার বা ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে।

এই লকডাউনে সরকার বিয়ে, ব্যাপ্টিজম ও অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ সব রকম সামাজিক ইভেন্ট বন্ধ ঘোষণা করেছে। তবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এর বাইরে থাকবে। যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে না তার মধ্যে রয়েছে রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, ক্যান্টিন। তবে তা খোলা থাকবে শুধু খাদ্য সরবরাহ ও সেবা দেয়ার জন্য। খোলা থাকবে সুপারমার্কেট ও খাদ্য বিক্রিকারক অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। ওষুধের দোকানও খোলা থাকবে। খোলা থাকবে পেট্রোল পাম্প, গ্যারেজ ও কার রেন্টাল ব্যবসা, বাইসাইকেলের দোকান, গৃহস্থালির হার্ডওয়্যারের দোকান, ড্রাই ক্লিনার্স, পোশা প্রাণির দোকান, কর্নার শপ, পত্রিকা বিক্রি, পোস্ট অফিস ও ব্যাংক।

বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। যেমন লাইব্রেরি, অপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রয়কারী দোকান, খেলার মাঠ, আউটডোর জিম, উপাসনালয়। শরীর চর্চার জন্য খোলা থাকবে পার্ক। তবে সেখানে দলবদ্ধ হওয়া যাবে না। কমিউনিটি সেন্টার খোলা থাকবে তবে তা ব্যবহার হতে হবে পাবলিক সার্ভিসের কাজে। যেমন খাদ্য ব্যাংক অথবা গৃহহীন মানুষের সেবায়। মূল কর্মীদের অবস্থান ভিতরে না হলে হোটেল, হোস্টেল, ক্যাম্প সাইট ও ক্যারাভান পার্ক অবশ্যই বন্ধ রাখতে হবে।

ওদিকে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ২.৫ জন ব্যক্তিকে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত করতে পারেন। এতে সময় লাগে প্রায় ৫ দিন। এর অর্থ হলো ৩০ দিন সময়ের মধ্যে ওই একজন ব্যক্তি সংক্রমিত করতে পারেন কমপক্ষে ৪০০ মানুষকে। ওদিকে পুলিশ বলেছে, তারা নতুন এই বিধিনিষেধের বিষয়ে ক্লারিফিকেশন চেয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের ফোনকল পাচ্ছে। নর্দাম্পটনশায়ার পুলিশের চিফ কনস্টেবল নিক অ্যাডারলি জনগণকে এভাবে ফোন কল করে পুলিশকে বিরক্ত না করতে অনুরোধ করেছেন। ন্যাশনাল পুলিশ চিফস কাউন্সিলের চেয়ার মার্টিন হিউয়িট বলেছেন, তারা নতুন বিধিনিষেধ নিয়ে সরকার ও অন্য এজেন্সিগুলোর সঙ্গে কাজ করছেন- কিভাবে এই নিয়ম প্রয়োগ করা যায় তা নিয়ে।

কিন্তু মেট্রোপলিটন পুলিশ ফেডারেশনের চেয়ারম্যান কেন মার্শ বলেছেন, এরই মধ্যে লন্ডনজুড়ে বিপুল পরিমাণ পুলিশ অফিসারের মধ্যে ‘সিকনেস’ বা অসুস্থতা দেখতে পাচ্ছেন। ফলে নতুন এই বিধিনিষেধের প্রয়োগ হতে পারে বাস্তবেই একটি চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেছেন, আমরা এ নিয়ে কাজ করবো। তবে আমি নিশ্চিত নই যে, এ কাজটা করার মতো সক্ষম জনবল আমাদের আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল টুইটে বলেছেন, আগামী কয়েকটি সপ্তাহ হবে পুলিশের জন্য পরীক্ষার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *