উপনির্বাচন স্থগিতের দাবি বিএনপির

Slider জাতীয় বাংলার মুখোমুখি রাজনীতি


দেশে করোনাভাইরাস সংক্রামনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ পাঁচ উপ-নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার বিকালে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি করেন। একইসাথে একইসঙ্গে দেশের আদালতসমূহে যতদিন প্রয়োজন বন্ধের দাবি জানিয়েছে দলটি। করোনাভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের আতংকের কারণে জনগনের কাছ থেকে, বিভিন্ন জায়গা থেকে ইতিমধ্যে নির্বাচন বন্ধ করার কথা এসছে। কিছুক্ষণ আগে নির্বাচন কমিশন বলছে যে, ২১ তারিখে যে নির্বাচনগুলো আছে তা হবেই এবং ২৯ তারিখের নির্বাচনের ব্যাপারে ২১ তারিখ সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এটাকে একেবারেই একটা একপেশে সিদ্ধান্ত মনে করি এবং জনগনের সঙ্গে সম্পর্ক বিবর্জিত, জনগনের যে আশা-প্রত্যাশা যে, এই দুর্য়োগের সময়ে কমিশন মানবিক আচরণ করবে তারা সেটা করছেন না বরং অমানবিক আচরণ করছেন।আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আহবান জানাচ্ছি যে, কমিশন তাদের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাহার করে তারা জনগনের স্বার্থে, মানুষের বেঁচে থাকার স্বার্থে এই নির্বাচনগুলোকে আপাততঃ স্থগিত রাখবেন। পরবর্তিতে নির্বাচনে তারিখ ঘোষণা করা যেতে পারে। এমনিতে ভোটারের পারসেটেজ যেটা গত নির্বাচনে দেখেছি ৮%-৯% এর বেশি আসবে না। সেই ক্ষেত্রে এই করোনাভাইরাসের কারণে ভোটাররা কত পারসেন্ট আসবে, ভোটের টার্ণ আউট কী হবে সেটা আমরা সবাই অনুমান করতে পারি। বলেন বিএনপি মহাসচিব।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ মার্চ ঢাকা-১০, গাইবান্ধ-৩ এবং বাগেরহাট-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে ২১ আগস্ট এবং চট্টগ্রামসহ বগুড়া ও যশোরের উপনির্বাচনের ২৯ মার্চ ভোট গ্রহন হবে। ঢাকা-১০ আসনে শেখ ফজলে নূর তাপস সংসদ পদ ছেড়ে দেয়ায়, বাগেরহাট-৪ আসনে মোজাম্মেল হোসেন, গাইবান্ধা-৩ আসনে ইউনুস আলী সরকার, বগুড়া-১ আসনে সাংসদ আব্দুল মান্নান এবং ২১ জানুয়ারি যশোর- ৬ আসনের সাংসদ ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুতে এই আসনগুলো শূণ্য হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ডা. শাহাদাত হোসেন, ঢাকা-১০ আসনে শেখ রবিউল আলম রবি, গাইবান্ধা-৩ আসনে ডা. সৈয়দ মাইনুল হাসান সাদিক, বাগেরহাট-৪ আসনে কাজী খাইরুজ্জামান শিপন, বগুড়া- ১ আসনে একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির এবং যশোর-৬ আসনে আবুল হোসেন আজাদ ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান। এরমধ্যে বাগেরহাট উপ-নির্বাচনে শিপনের মনোনয়ন পরে বাতিল হয়ে যায়।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের আদালতগুলোতে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের ভিড় হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মিথ্যা মামলায় যারা আসামীদের তাদের আসতে হয়, হাজিরা দিতে হয়। প্রায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সেখানে উপস্থিত হন প্রায় প্রত্যেকটি আদালতগুলোতে। ঢাকা সবচেয়ে বেশি, অন্যান্যগুলোতে তাই এবং সংখ্যা হাজারের কম হবে না, প্রতিদিন হাজার হাজার লোক সেখানে যায়। আমি যে রিপোর্টটা পেয়েছি যে, ৩০ জন বিচারক ইতিমধ্যে কোয়ারেনটাইনে চলে গেছেন। ৩০ জন বিচারক যদি কোয়ারেনটাইনে যান, সেক্ষেত্রে এটা পরিস্কার আদালতগুলো এই ভাইরাসের সংক্রামণটা বেশি হচ্ছে। আমরা সেই কারণে আহবান জানাচ্ছি যে, এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে, জনগনের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে, তাদের জীবনের কথা চিন্তা করে আদালতগুলো আপাতত কিছু দিন বন্ধ রাখা প্রয়োজন। আমাদের আহবান থাকবে, আদালতের কার্য্ক্রম স্থগিত রাখা যতদিন প্রয়োজন। আমরা আশা করব, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা দেশের কথা চিন্তা করে, জনগনের কথা চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নেবেন।

তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, প্রথম থেকেই সরকার এই করোনাভাইরাসের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। আমরা প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম যে, এখানে দায়িত্বহীনতা পরিচয় দিচ্ছে সরকার। আমরা বলেছিলাম, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করুন। তারা বন্ধ করেননি। পরে ১৬ তারিখে তারা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী বলেছেন যে, প্রয়োজন হলে সব শাটডাউন করা হবে, যা যা দরকার সব বন্ধ করা হবে। এখন তো শাটডাউন করার জায়গাটা অলরেডি তো এসে গেছে। কারণ সা্টডাউন না করলে যেভাবে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে তা ভয়াবহ মহামারী আকার ধারণ করবে। বাংলাদেশ এমনিতেই একটা ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এদেশে এই ধরনের একটা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে, এখন এটা বাইরের থেকে আসার দরকার হবে না, এটা দেশের অভ্যন্তরে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের দ্বারা সব জায়গায় ছড়াবে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

ভাইরাসের সংক্রামকদের চিকিতসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্ধারণ, সংক্রামক সনাক্তকরণসহ চিকিতসক-নার্সদের প্রয়োজনীয় পোষাক (পিপিই) ও যন্ত্রপাতি কোনো কিছু সরকার ব্যবস্থা করতে পারেন বলে অভিযোগও করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *