ভারতের রাজধানী দিল্লির সফদরজঙ্গ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে বুধবারই এক ব্যক্তিকে ভর্তি করিয়েছিল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সন্দেহ ছিল করোনাভাইরাস সংক্রমণ। তার দেহরসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তির কিছু ক্ষণের মধ্যেই আটতলার জানলা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি।
ভারতে করোনা-সংক্রমিতের সংখ্যা বুধবার বেড়ে হয়েছে ১৫১। রাজ্যসভায় লিখিত জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরন জানিয়েছেন, বিদেশে ২৭৬ জন ভারতীয় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২৫৫ জন আছেন ইরানে, ১২ জন সংযুক্ত আরব আমিরাতে, ৫ জন ইতালিতে, হংকং, কুয়েত, রুয়ান্ডা এবং শ্রীলঙ্কায় ১ জন করে। গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দাম্মু রবি বলেছিলেন, এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। কিন্তু স্বেচ্ছা-কোয়রান্টিনে যাওয়া মুরলীধরন এই হিসেব দিয়ে জানিয়েছেন, ইরান-কুয়েত-সহ আরব দেশগুলোতে ছ’হাজারেরও বেশি ভারতীয় আটকে রয়েছেন। এদের মধ্যে ইরান থেকে বুধবার সন্ধ্যায় আরও ১৯৫ জনকে ফিরিয়ে এনে জয়সলমেরে সেনা-শিবিরে রাখা হয়েছে।
বুধবার ভারতীয় সেনাবাহিনীতে প্রথম করোনা-সংক্রমণ ধরা পড়ার পরে সব বাহিনীকে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করতে বলেছে কেন্দ্র। ‘যুদ্ধের’ প্রস্তুতি অবশ্য চলেছে ভারতজুড়েই। দিল্লি সরকার এখন পর্যন্ত গণ-পরিবহণের ৭,৮৭৭টি গাড়ি জীবাণুমুক্ত করেছে। রোজ সকালে-বিকেলে দুই শিফটে বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে এই পরিষেবা। এর মধ্যে পড়ছে অটোরিকশাও। সংশ্লিষ্ট গাড়িকে ‘জীবাণুমুক্ত’ সার্টিফিকেটও দেওয়া হচ্ছে। দিল্লির পরিবহণ মন্ত্রী কৈলাস গহলৌত বলেন, ‘‘গণপরিবহণের গাড়ির মালিক ও পরিচালকদের অনুরোধ, রোজ গাড়ি জীবাণুমুক্ত করিয়ে নিন, যাতে আমরা সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারি।’’
পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১৭টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ছড়িয়েছে করোনা। বুধবারই কাশ্মীর উপত্যকায় প্রথম সংক্রমণের খবর এসেছে। সৌদি আরবে উমরাহ করে ফেরার পরে শ্রীনগরের খানিয়ার এলাকার ৬৭ বছরের এক বৃদ্ধার শরীরে করোনা ধরা পড়েছে।
কেন্দ্রের হিসেবে, আক্রান্তদের মধ্যে ২৫ জন বিদেশি রয়েছেন। দেশজুড়ে আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ৫৭০০ জনেরও বেশি মানুষ নজরদারিতে রয়েছেন। আজ মথুরার হাসপাতালে করোনা-আক্রান্ত সন্দেহে চিকিৎসাধীন এক ব্যক্তি কাউকে কিছু না-জানিয়ে বাড়ি চলে যান। সম্প্রতি মুম্বইয়ে তিনি এক বিদেশির সংস্পর্শে এসেছিলেন বলে জানার পরেই তাঁকে কে ডি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করে দেহরসের নমুনা নেওয়া হয়েছিল। ম্যাজিস্ট্রেট মনোজ কুমার জানান, ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে ফিরতে বলা হয়েছে। অন্যথায় এফআইআর হবে।
গোটা দক্ষিণ ভারতই কার্যত তালাবন্ধ অবস্থার দিকে এগোচ্ছে। কেরল, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানায় সমস্ত স্কুল বন্ধ। বন্ধ শপিং মলও। কেরলে সমস্ত সরকারি বাস জীবাণুমুক্ত না-করা পর্যন্ত সেগুলো চালানো হবে না। আমজনতাকে ধর্মস্থানে না-আসতেও অনুরোধ করেছে সরকার।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা