বিশ্বের প্রায় দেড় শতাধিক রাষ্ট্রে মহামারি হিসাবে দেখা দেয়া করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশ কী ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে? জানতে চেয়েছেন কূটনীতিকরা। সোমবার মুজিববর্ষের কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এবং কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে উপস্থিত পূর্ব ও পশ্চিমা দুনিয়ার প্রতিনিধিরা ঢাকার পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চান। জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপিসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের অবহিত করেন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মার মাঠে অনুষ্ঠিত ওই ব্রিফিংয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিঙ্ক স্পষ্ট করে জানতে চান- করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে বাংলাদেশের স্বল্প ও মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনা কি? আর নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিসেল ব্লিকেনের জিজ্ঞাসা ছিল- ব্যাপকভাবে করোনা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে ফেরাদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতে সরকার কীভাবে কাজ করছে? প্রশ্নোত্তর পর্বে বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন রোহিঙ্গা শিবিরে করোনা ঠেকাতে সরকারের পদক্ষেপ বিষয়ে জানতে চান। আর জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো জানতে চান বিদেশি নাগরিকদের বাংলাদেশে আসতে যে সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সেটি আদতে কি ধরণের সনদ? বাংলাদেশের তরফে প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দেয়া হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতে করোনা না ছড়াতে পারে সে জন্য সরকার সচেষ্ট রয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশ গৃহীত পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন- বিদেশ থাকা আসা লোকজন এবং তাদের সংস্পর্শে যাওয়া মোট ৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ফলে জনগণের সুরক্ষায় বাংলাদেশের তরফে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কিছু দেশ থেকে আসা ফ্লাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
এরমধ্যেও যারা এসেছেন বা আসছেন তাঁদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে। কোয়ারেন্টিন বিষয়ে অন্য প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসন, স্থানীয় পর্যায়ে নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিদেশ থেকে কেউ এলেই তাকে কোয়ারেন্টিনে পাঠাতে। এর ব্যত্যয় ঘটলে সরকার কঠোর হচ্ছে জানিয়ে মোমেন বলেন, সম্প্রতি এমন একজনকে ম্যাজিস্ট্রেট জরিমানা করেছেন এবং নিজ বাড়িতে ফের কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছেন।
সরকারী অ্যাকশনের বিষয়ে এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারাই ফিরছেন, তাদের প্রত্যেকের নাম, ঠিকানার বিস্তারিত তথ্য বিমানবন্দরে জমা নেয়া হচ্ছে। ফলে তাদের নজরদারিতে রেখে সেলফ কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের জন্য কঠিন নয়। ব্রিফিংয়ে উত্থাপিত চিকিৎসা সনদে ধরণ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন ব্রিফিংয়ে উপস্থিত স্বাস্থ্য সচিব। বলেন, চিকিৎসা সনদে এটা নিশ্চিত করতে হবে ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন এবং ভিসা প্রার্থী ওই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়ার মতো অবস্থায় যাননি। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।