রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদমাধ্যম যদি ঠিকমত কাজ করতে পারে, তাহলে রাষ্ট্রের অন্য তিনটি স্তম্ভ শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ ঠিক থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মোহাম্মদ রাশেদ জাহাঙ্গিরের দ্বৈত বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে, ভ্রাম্যমান আদালত কর্তৃক কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে সাজা দেয়ার সকল নথিপত্র তলব করেছে হাইকোর্ট। আগামী ২৩শে মার্চ সোমবার সাংবাদিক আরিফুল আসলামকে সম্ভব হলে হাজির হয়ে প্রকৃত ঘটনা জানাতে বলেন আদালত।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন ব্যারিস্টার এবং ইসরাত হাসান। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য। শুনানিতে এ এম আমিন উদ্দিন আদালতে বলেন, সাংবাদিকরা হচ্ছে সমাজের দর্পণ। তারাই সমাজের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরেন। সাংবাদিকরা জেগে থাকলে সমাজে অন্যায় কম হয়।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, সংবাদপত্র হচ্ছে সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ। এই চতুর্থ স্তম্ভ (সাংবাদিকরা) যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে রাষ্ট্রের বাকি তিন স্তম্ভ (আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ) সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে। এরপর আইনজীবী আমিন উদ্দিন আদালতকে বলেন, মধ্যরাতে বাসার দরজা ভেঙে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে একজন সাংবাদিককে যেভাবে দন্ড দেয়া হল, সেটা ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়।
এরপর রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী ডেপুর্টি অ্যাটর্নী জেনারেল দেবাশীষ ভট্রাচার্য আদালতে নথির ফটোকপি আদালতে দাখিল করেন। তিনি আদালতকে জানান, সব আইনি প্রক্রিয়া মেনেই কুড়িগ্রামের সাংবাদিককে সাজা দেয়া হয়েছে।
এর আগে গত রোববার বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদের পক্ষে আইনজীবী ইশরাত হাসান জনস্বার্থে রিটটি দায়ের করেন। রিটে ফৌজদারি কার্যবিধি, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এর সংবিধানের ৩১, ৩২, ৩৫ এবং ৩৬ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, আইন মন্ত্রণালয় সচিবসহ ১৭ জনকে বিবাদী করা হয়। রিট আবেদনে টাস্কফোর্সের নামে আরিফুল ইসলামকে অবৈধ সাজা ও আটক করা কেন সংবিধান পরিপন্থী হবে না, আরিফুল ইসলামকে কেন ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না-মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। এছাড়া কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক, সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে তাদের ভূমিকার ব্যাখ্যা দিতে আদালতে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়।