ঢাকা: গভীর রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে আটক এবং পরে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোছা. সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রোববার দুপুরে সচিবালয়ে নিজের কক্ষে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক তদন্তে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসকের বিষয়ে বেশ অনিয়মের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসক রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। চূড়ান্ত প্রমাণ সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ বিস্তারিত পর্যালোচনা ও তদন্ত করে বিভাগীয় মামলা হবে।
তিনি বলেন, ডিসির কার্যকলাপে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ায় শিগগিরই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে তদন্ত কমিটির লিখিত রিপোর্ট ও সুপারিশ পেলে মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাংবাদিক আরিফুলকে সাজা দিয়েছেন তাকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে বলে এ সময় জানান প্রতিমন্ত্রী।
জানা যায়, গত শুক্রবার মধ্যরাতে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আনসার সদস্যদের একটি টিম কুড়িগ্রাম শহরের চড়ুয়াপাড়ায় বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগ্যানের বাড়িতে হানা দেয়। এরপর মারধর করতে করতে তাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তার পোশাক খুলে দুই চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়। এসব ঘটনার নেতৃত্ব দেন ডিসি কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন। এরপর মাদকবিরোধী অভিযানে আটক এবং পরে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে আরিফুলকে কারাগারে পাঠান ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে শনিবার রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আবু তাহের মো. মাসুদ রানাকে দিয়ে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির এই সদস্য তাৎক্ষণিকভাবে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করেন। তদন্ত শেষে শনিবারই বিভাগীয় কমিশনাররের কাছে প্রতিবেদন জমা পড়ে। এরপর রোববার ডিসি সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।
এদিকে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে জামিন দিয়েছেন কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। রোববার সকালে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল এবং জামিন আবেদন করা হলে তিনি তা শুনানির জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পাঠান। এরপর সকাল ১১টার দিকে শুনানি শেষে ২৫ হাজার টাকা বন্ডে এবং একজন আইনজীবী ও প্রেসক্লাবের সভাপতির জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলা।