ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার এমদাদুলের অবিলম্বে, নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে অ্যামনেষ্টি

Slider জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি


ঢাকা: ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক এমদাদুল হক মিলনকে (৩৪) অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন বৃটেনভিত্তিক অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময়সীমা বর্ধিত করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে গত মাসে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। ‘আইন শৃংখলার অবনতি’ ঘটানোর ‘অস্পষ্ট অভিযোগে’ যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তার সাত বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। এ কথা লিখেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেয়া এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি বলেছেন, ‘‘ইমদাদুল হক মিলন হলেন ‘বিবেকের বন্দি’। শুধু ফেসবুকে তার মত শেয়ার করার কারণে তিনি অনির্দিষ্টকাল আটক থাকার মুখে। তাকে অবশ্যই অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া উচিত। এমনকি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয়ে তা বাস্তবায়নের আগে থেকেই এই আইনের অস্পষ্ট ও ব্যাপক বিস্তৃত বিধানগুলোর বিষয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। এসব বিধান বাংলাদেশের মানুষকে হয়রান (পারসিকিউট) করতে ব্যবহার করা হতে পারে।

আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি এর বিপজ্জনক কিছু প্রভাব। সেটা হলো, কিছু রাষ্ট্রীয় এজেন্সি এবং সুবিধাপ্রাপ্ত পদে থাকা মানুষ, এই আইনকে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে বৈধ চর্চা হিসেবে ব্যবহার করছেন।”

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আরো লিখেছে, গত ২৭ শে ফেব্রুয়ারি নিজের ফেসবুক একাউন্টে একটি পোস্ট দেন এমদাদুল। এতে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানোর সমালোচনা করেন। এটাকে বাঙালি জাতির গর্ব বঙ্গবন্ধুর প্রতি অসম্মান বলে মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের জনগণ তাকে (মোদি) স্বাগত জানাবে না বলেও মন্তব্য করেছেন এমদাদ। তার ফেসবুকের ওই পোস্টটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। তারা অভিযোগ করেছে যে, তিনি আরো একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন, যেখানে বাংলাদেশের একজন মন্ত্রীকে নিয়ে ব্যাঙ্গচিত্র করা হয়েছে। এতে ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায় তাকে।

এমদাদুলকে গত ৩রা মার্চ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, ‘অবমাননাকর’ ও ‘মানহানিকর’ কন্টেট প্রকাশ করার। বলা হয়েছে এতে আইন শৃংখলার অবনতি ঘটানো হয়েছে। তিনি অনির্দিষ্টকালের বন্দিত্বের মুখে রয়েছেন। যদি অভিযুক্ত হন তাহলে তাকে সাত বছর পর্যন্ত জেল এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে।

ওই বিবৃতিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ‘ড্রাকোনিয়ান ডিজিটাল ল’ বলে আখ্যায়িত করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এতে বলা হয়, অনলাইনে ডাটা চুরি, আর্থিক অপরাধ এবং প্রতারণার মতো অপরাধ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রবর্তন করে। এই আইনটি গ্রহণের পর থেকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা চর্চা করার কারণে লোকজনকে মর্জিমাফিক গ্রেপ্তার, ভীতি প্রদর্শন এবং হয়রান করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ল- এর অধীনে কোনো একজন পাবলিক ফিগারের বিরুদ্ধে মত প্রকাশকে অবমাননা বলে বিবেচনা করাই শাস্তি দেয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে, ইউএন হিউম্যান রাইটস কমিটি তার সদস্য রাষ্ট্রকে বলেছে, মানহানির মামলাগুলোকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করে (ডিক্রিমিনালাইজেশন) একে একটি সিভিল মামলা হিসেবে বিবেচনার করতে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে জরুরি ভিত্তিতে পর্যালোচনা করতে আহ্বান জানিয়েছে ইউএন হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস, যাতে এটা নিশ্চিত হয় যে, এটা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের আইন অনুসরণ করে চলে। একই সঙ্গে মর্জিমাফিক গ্রেপ্তার, আটক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার বৈধ অধিকারের বিরুদ্ধে অন্যান্য যেসব বিধিনিষেধ আছে তার প্রতি চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স প্রতিষ্ঠা হয়।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তার বিবৃতিতে আরো বলেছে, ২০১৮ সালের নভেম্বরে ‘মাজলিং ডিসেন্ট অনলাইন’ বা অনলাইনে ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ শীর্ষক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে অ্যামনেষ্টি। এতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু সেকশনের ওপর জোর দেয়া হয়। এসব সেকশন ‘ইন্টারন্যাশনাল কোভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস’সহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও এর মানদন্ডের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এখানে উল্লেখ্য, ‘ইন্টারন্যাশনাল কোভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস’-এ স্বাক্ষরকারী দেশ বাংলাদেশও। একই সঙ্গে ওই রিপোর্টে বাংলাদেশ সরকারকে এই আইনটি দ্রুততার সঙ্গে সংশোধন করার আহ্বান জানানো হয়।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আরো লিখেছে, এমদাদুলের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার একটি সহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে কমপক্ষে ১৪টি অপরাধের কথা বলা আছে, যা জামিন অযোগ্য। হিউম্যান রাইটস কমিটি পর্যবেক্ষণ করেছে যে, মত প্রকাশের কারণে কোনো একজন মানুষকে যদি গ্রেপ্তার, বিচার, আটক রাখা সহ হয়রান করা হয় তাহলে তা ‘ইন্টারন্যাশনাল কোভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস’-এর অনুচ্ছেদ ১৯-এর লঙ্ঘন হতে পারে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে কার্যকর হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এরপর প্রথম ১১ মাসে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রায় ৪০০ মামলা হয়েছে এর অধীনে। মিডিয়ার রিপোর্ট অনুসারে, এর মধ্যে কমপক্ষে ২০০ মামলা খারিজ হয়ে গেছে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *