ঢাকা: করোনা সন্দেহ হলে, লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে সরাসরি জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন,‘ আইইডিসিআর না এসে বাড়িতে বসেই হটলাইনে ফোন করলেই সব শুনে নমুনা সংগ্রহের জন্য বাড়িতে পৌঁছে যাবে আইইডিসিআর টিম।’ শনিবার (৭ মার্চ) দুপুরে আইইডিসিআর মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘যারা আক্রান্ত দেশ থেকে ভ্রমণ করে এসেছেন এবং যাদের মধ্যে করোনার লক্ষণ—জ্বর. কাশি. গলাব্যথা বা শ্বাসকষ্টের উপসর্গ রয়েছে, তারা আমাদের হটলাইনে যোগাযোগ করবেন। অথবা নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে যাবেন। হটলাইন নম্বরগুলো হলো: ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১।’
শুক্রবার (৬ মার্চ)ও একজন সরাসরি আইইডিসিআরে গেছেন উল্লেখ করে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘সরাসরি আইইডিসিআরে আসার দরকার নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা যদি কোনো গণপরিবহনে আসেন, তাহলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকবে। এই কথাটা এজন্য বলছি, সন্দেহজনক তালিকায় যারা থাকেন, তাদের মধ্যে লক্ষণ ও উপসর্গগুলো রয়েছে, প্রথমে ধরে নিতে হয়, তাদের মধ্যে করোনা ভাইরাস থাকতে পারে।’
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘সেজন্য আমরা তাদের অনুরোধ করছি, আপনারা গণপরিবহন ব্যবহার না করে, আপনারা যদি মৃদু অসুস্থ থাকেন, তাহলে বাড়িতেই থাকুন। আমাদের সঙ্গে হটলাইনে যোগাযোগ করুন। আমাদের টিম আপনাদের বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে এসে পরীক্ষা করবে।’
যদি কারও মধ্যে শ্বাসকষ্ট থাকে তাহলে নিকটস্থ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, হাসপাতালে যাবেন এবং আমাদের সাথে হটলাইনেও যোগাযোগ করবেন। পাশাপাশি যেসব হাসপাতালে যাবেন আপনারা তারা, হাসপাতাল থেকেও কিন্তু আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিশ্চিত করা হবে করোনা আছে কিনা।
ফোন না করে বা হাসপাতালে না গিয়ে বাড়িতে বসে না থাকার আহ্বান জানিয়ে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ‘যদি আমরা লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে বসে থাকি, সে ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে কিন্তু করোনা রোগী শনাক্ত করে দ্রুত আলাদা করে ফেলা সম্ভব হবে না।’ কোনো লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দিলে বসে না থেকে আইইডিসিআরের হটলাইনে ফোন করার আহ্বান জানান তিনি।
ফ্লোরা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে রোগীকে শনাক্ত করে দ্রুত আলাদা করে নেওয়া।’
৪৩টি দেশে স্থানীয় সংক্রমণের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছে জানিয়ে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ‘বাইরের দেশ থেকে আক্রান্ত রোগী আসার পর ওই রোগীর সংস্পর্শে এসে সেই দেশে যারা আক্রান্ত হয়, তাকে স্থানীয় সংক্রমণ বলা হয়। তিনি বিদেশে যাননি কিন্তু বিদেশ থেকে আসা আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকেন, এরকম স্থানীয় সংক্রমণের ইতিহাস রয়েছে ৪৩টি দেশে। এই ৪৩টি দেশের মধ্যে ৩৩টি দেশে আমরা দেখতে পাচ্ছি নতুন রোগী রয়েছে। দশটি দেশে বেশ কিছুদিন ধরে নতুন করে আক্রান্ত হয়নি।’
আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ‘করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হবেন না। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই।’ ইতালির মতো দেশেও বাড়িতে বসে চিকিৎসা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাড়িতে বসে চিকিৎসা করা সম্ভব। বাড়িতে যদি আইসোলেশন নিশ্চিত করতে পারে বাড়িতে চিকিৎসা করা সম্ভব। সুতরাং আমরা সাবধান হবো। আতঙ্কিত হবো না।’
নিজেদের সচেতন হতে হবে উল্লেখ করে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ‘বাইরের দেশ থেকে যারা ফিরছেন, তাদের আমরা পরামর্শ দিয়েছি—বিমানবন্দর থেকে বাসায় যাওয়ার পথে মাক্স ব্যবহার করবেন। গণপরিবহন ব্যবহার করবেন না। নিজস্ব পরিবহন ব্যবহার করবেন। গাড়ির জানালা খোলা রাখবেন। এখানে আরো একটি বিষয় পরিষ্কার করে অনেক সময়, আমাদের দেশে একটা কালচার এর মধ্যে রয়েছে যে, বিদেশ থেকে কেউ ফিরলে আমরা পরিবারের অনেকেই বিমানবন্দরে তাকে রিসিভ করতে তাই। আমরা সেটা তো আপনাদের নিরুৎসাহিত করতে চাই। যেন কমসংখ্যক মানুষ ওই গাড়িতে থাকে। আপনারা জানেন যে ১ মিটার দূরত্বে সংক্রমণ হতে পারে। বিদেশ থেকে যিনি আসবেন, তার মধ্যে সংক্রমণ রয়েছে, সেটা নিশ্চিত নয়। কিন্তু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।’
আক্রান্ত দেশ থেকে আসাদের উদ্দেশে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ‘আক্রান্ত দেশ থেকে যদি কেউ না আসেন, তাহলে অত্যাবশ্যকীয় না হলে ১৪ দিনের বাড়ি থেকে বের হবেন না। যদি বের হতে হয় অবশ্যই মাক্স ব্যবহার করবেন। জনসমাগমে যাবেন না।’ নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করারও পরামর্শ দেন তিনি।