আজ শহীদ কমরেড তাজুল দিবস

Slider জাতীয়


ঢাকা: আজ ১ মার্চ শহীদ কমরেড তাজুল দিবস। স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মানবমুক্তির সংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ শহীদ কমরেড তাজুল ইসলাম এই দিন শহীদ হন। ১৯৮৪ সালের এই দিনে এরশাদের সামরিক স্বরশাসনের বিরুদ্ধে এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের ৫ দফা দাবিতে ১৫ দল, ৭ দল ও ১১টি শ্রমিক ফেডারেশনের ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন দমনে এরশাদ সরকারের লেলিয়ে দেওয়া গুন্ডাবাহিনীর হাতে তাজুল শহীদ হন। তাজুল ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-র আদমজী শাখার সম্পাদক এবং ‘আদমজী মজদুর ট্রেড ইউনিয়নে’র নেতা।

উল্লেখ্য, কুমিল্লা জেলার মতলব থানার ইছাখালি গ্রামের এক সাধারণ পরিবারের ছেলে তাজুল �শশবে মাতৃহারা হয়ে আর্থিক সংকট মোকাবেলার জন্য ঢাকা শহরে গৃহভৃত্য ও আইসক্রিম বিক্রির কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। প্রবল প্রতিকূলতা তাজুলের শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ কমাতে পারেনি। মামার অভিভাবকত্বে তিনি শিক্ষা গ্রহণে ব্রতী হন। তিনি পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় কুমিল্লায় প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং ১৯৬৬ সালে মতলব হাইস্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় ৩টি লেটারসহ এবং পরবর্তীকালে এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।

১৯৬৮ সালে তাজুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে বিএ অনার্সে ভর্তি হন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নে যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন ও বিভিন্ন গণসংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে তাজুল মুক্তিযুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অধ্যায়ন শেষে তাজুল সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তির লক্ষ্য নিয়ে ’৭৪ সালে শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত হন এবং প্রধান কর্মক্ষেত্রে হিসেবে দেশের বৃহত্তর আদমজী জুট মিল বেছে নেন।

এক পর্যায়ে বেসিক ইউনিয়নের কমিটিতে ২৫ শতাংশ বহিরাগত ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের থাকার আইন বাতিল হলে তাজুল আদমজীতে সাধারণ শ্রমিকের কাজ গ্রহণ করেন। স্ত্রী, দু’সন্তান নিয়ে একদিকে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট, প্রতিকূল পরিস্থিতি, ভয়ভীতি; অপরদিকে সচ্ছল জীবনের সুযোগ ও হাতছানি তাজুলকে তাঁর আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।

২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ১১টি শ্রমিক সংগঠন (পরবর্তীকালে স্কপ), ১৫ দল ও ৭ দল আহূত ১ মার্চ দেশব্যাপী হরতাল সফল করার লক্ষ্যে আদমজী মিলের শ্রমিকদের নিয়ে মিছিল করার সময় সরকারের সন্ত্রাসী বাহিনী তাজুলের ওপর হামলা চালায়। কমরেড তাজুলের শাহাদাৎ বরণ সারাদেশে শ্রমিকশ্রেণির সংগ্রাম ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তীব্র গতিবেগ সঞ্চার করে। রাজনীতি, শ্রমিক আন্দোলন ও সমাজ জীবনে সন্ত্রাস, কালো টাকা ও সুবিধাবাদের যে বিষায়ন প্রক্রিয়া চলছে তার বিপরীতে শহীদ কমরেড তাজুলের সততা, আদর্শনিষ্ঠ, দেশপ্রেম, সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *