চা-ওয়ালার হাতে দেশ ছাড়লে দেশের অবস্থা এমনই হয় বলে এক ভিডিও বার্তায় মন্তব্য করেছেন কাশ্মীরি এক তরুণী। বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে ভারতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে তরুণীর ভিডিও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। গত ১০ জানুয়ারি ভয়েস নিউজ নেটওয়ার্ক নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রথম ভিডিও পোস্ট করা হয়। যা পরে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
তরুণী এনআরসি, সিএএর বিরোধীর পাশাপাশি বিজেপি সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন ওই ভিডিওতে। নাম-পরিচয় বিস্তারিত জানা না গেলেও বক্তব্য থেকে বোঝা যায় তিনি দিল্লির জামিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। সম্প্রতি ভারতের লোকসভায় পাস হওয়া নতুন নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে যে সব ধর্মীয় সংখ্যালঘু নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে গেছেন তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে।
এর সমালোচনা করে ওই তরুণী বলেন, চার কোটি লোক আপনি পাকিস্তান-আফগানিস্তান থেকে এনে কোথায় রাখবেন? দিল্লি, বম্বে, ভোপাল! জায়গা কোথায়? আপনি তাদের কী কাজ দেবেন; তারা কি খাবে, কী পরবে?
এ কথা বলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তরুণী বলেন, তবে আমরা যদি একজন চা-ওয়ালার হাতে দেশটাকে তুলে দেই তাহলে এটাই হবে। আমি আইনের শিক্ষার্থী। সংবিধানের মতো বিষয় আমি পড়ি। তারা বলে আমরা স’ন্ত্রা’সী। আমরা সারারাত বসে বসে পড়াশুনা করি, গবেষণা করি এবং তারপরে পলিসি তৈরি করি। আর আপনি আমাদের আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন! আমাদের আন্দোলন অবশ্যই ভুল না। কেউ সেটা বললে আমি তাকে মূর্খ মনে করব। তিনি বলেন, আমার বাবা একজন পুলিশ সদস্য।
আমি কাশ্মিরি। আমি জানি পুলিশের কাজ কি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢুকে শিক্ষার্থীদের মারপিট করা পুলিশের কাজ না। আমি গতকাল রাতে ভালো করে বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহার পড়েছি। বিজেপির ম্যানিফেস্টোতে ১৩টি চ্যাপ্টার। এরমধ্যে প্রথম ১০ চ্যাপ্টারে উন্নয়ন, নারী নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ইস্যুর কিছুই নেই। এগুলো আছে শেষের দিকে গিয়ে।
আমরা যে সরকারকে ভোট দিয়েছি তাদের ম্যানিফেস্টোতে স্পষ্টভাবে লেখা ছিল এসব বিষয়- ৩৭০, রামমন্দির, এনআরসি, সিএএ। কিন্তু আমরা ভারতীয়, আমি নিজেই কোনো দলের ইশতেহার পড়িনি। আমরা এসব পড়িইনি, আমরা তো জানিই না। এখন যখন পড়লাম তখন বুঝতে পারলাম, নারী নিরাপত্তা কিংবা উন্নয়ন এসব বিষয়তো তাদের ইস্যুই না। তারা তো অন্য কিছুই করতে চায়।
ক’ঠোর স’মালোচনা করে তরুণী আরও বলেন, ভারত স্বাধীন হয়েছে ৭০ বছর হয়ে গেল। এখন আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে কিসের স্বাধীনতা চায়? আমি বলব, এ ভয় থেকে মুক্তি চাই। এখন আমার বাবা-মাকে যদি ফোন করে বলি, আন্দোলন করছি তাহলে তাদের জান বের হয়ে যাবে।
কারণ এখন সবাই জানে, যারা বের হয়ে এটার বি’রোধিতা করছে তারা এক রকম আ’ত্মহ’ত্যা করছে। কিন্তু তারপরও তো কথা বলতে হবে। এদিকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছেন নেটিজেনরা। ভারতীয়দের বেশিরভাগই ওই তরুণীর বক্তব্যকে যৌক্তিক উল্লেখ করে তার প্রশংসা করেছেন। তার সাহসিকতারও প্রশংসা করছেন অনেকে।