ঢাকা: কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অস্ত্র, ইয়াবা ও হেরোইন পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার পুলিশের এক উপপরিদর্শককে (এসআই) অস্ত্র মামলায় দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
আসামির নাম আবদুল জলিল মাতব্বর। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় রাজধানীর দারুস সালাম থানা এলাকা থেকে। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি তাঁকে গোপালগঞ্জ জেলায় বদলি করা হয়।
মামলার কাগজপত্র এবং পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবদুল জলিল নিজ নামে একটি কুরিয়ার সার্ভিসে নারায়ণগঞ্জ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি মালামাল বুকিং দেন। ওই মালামাল যাওয়ার কথা ছিল গোপালগঞ্জে। জলিলের পাঠানো মালামাল গাড়িতে করে আনা হয় কুরিয়ার সার্ভিসের দারুস সালাম অফিসে। মালামাল লোড-আনলোড করার সময় মদের গন্ধ বের হয়। তখন কুরিয়ার সার্ভিসের লোকজন পুলিশকে খবর দেন। ঘটনাস্থলে এসে দারুস সালাম থানার পুলিশ অস্ত্র, ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা, বিয়ারসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ করে।
এ ঘটনায় দারুস সালাম থানার পরিদর্শক মো. দুলাল হোসেন বাদী হয়ে এসআই আবদুল জলিল মাতব্বরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন।
আজ বৃহস্পতিবার অস্ত্র মামলায় আবদুল জলিলকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করা হয়। আদালতে জলিলের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আদালত সূত্র বলছে, শুনানির সময় এসআই আবদুল জলিল আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তিনি প্রভাবশালী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী। এমন একই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে পুলিশের এক পদস্থ কর্মকর্তাও সম্প্রতি বদলি হয়েছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দারুস সালাম থানার এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ কেন আবদুল জলিলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেবে। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অস্ত্র, মাদকসহ বিভিন্ন মালামাল পাঠানোর সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এসআই জলিলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুরো ঘটনার রহস্য জানা সম্ভব হবে।
দারুস সালাম থানার পরিদর্শক দুলাল হোসেন মামলায় দাবি করেন, কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠানো আবদুল জলিল মাতব্বরের মালামাল দারুস সালাম এলাকায় আনলোডের সময় ফাইল কেবিনেটের ঝাঁকুনিতে তালা খুলে যায়। তখন ফাইল কেবিনেটের ড্রয়ারগুলো খুলে যায়। তখন মদের গন্ধ বের হয়। খোলা ড্রয়ারে দেখা যায় বিয়ার, ইয়াবা ও গুলি। কুরিয়ার সার্ভিসের লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে সেখানে তিনি যান। পরে এসআই আবদুল জলিলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। জলিল পরে থানায় আসেন। কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠানো অস্ত্র, ইয়াবা ও হেরোইন নিজের বলে দাবি করেন। জিজ্ঞাসাবাদে জলিল জানান, ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জের কুরিয়ার সার্ভিসের অফিস থেকে মালামাল পাঠান তিনি। প্রাপক হিসেবেও নিজের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জ ডিবি থেকে গোপালগঞ্জ জেলায় বদলির আদেশ হয়েছে। তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ করে গোপালগঞ্জ জেলায় যোগ দিয়েছেন।
এসআই জলিলের যত মালামাল
মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এসআই আবদুল জলিলের পাঠানো ৫ হাজার ২৮৯টি ইয়াবা, ৪০ দশমিক ৭৫ গ্রাম হেরোইন, একটি পুরোনো পিস্তল, পিস্তলের গুলি, চায়না রাইফেলের ১০টি গুলি, ছয়টি বিয়ার ক্যান, ১ কেজি ৩০০ গ্রাম গাঁজা, সোনার গলার হার, পাঁচটি মোবাইল ফোন, দুটি হাতুড়ি, একটি সুইস গিয়ার চাকু, ১১টি সিম্ফনি পুরোনো ব্যবহৃত মোবাইল, দুটি পুরোনো স্যামসাং মোবাইল, একটি ল্যাপটপ, একটি প্রিন্টার, একটি মামলার কেস ডকেট, পেনড্রাইভসহ ৬৩ ধরনের মালামাল জব্দ করা হয়।
জব্দ করা মালামালের ব্যাপারে কুরিয়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, এসআই জলিল ইউনিফর্ম পরেই তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে মালামাল বুকিং দিয়েছিলেন। মামলার বাদী পুলিশ কর্মকর্তা দুলাল হোসেন দাবি করেন, মামলার তদন্ত চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো ইয়াবা, হেরোইন এবং অবৈধ অস্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা সম্ভব হবে।