ঢাকা:পাওনা ১২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে গ্রামীণ ফোন ১০০ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে ছিলো বিটিআরসিকে। কিন্তু এই প্রস্তাবে সরাসরি ‘না’ বলে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আর বিটিআরসি বলছে, সর্বোচ্চ আদালত ইতোমধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে গ্রামীণফোনকে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এর বাইরে যেতে পারে না।
গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আলোচনা করছিলাম এবং আলোচনার মাধ্যমে যেহেতু এগিয়ে যেতে চাই, তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এই দিনে এই প্রথমবারের মতো গ্রামীণফোনের দিক থেকে ১০০ কোটি টাকা প্রস্তাব করেছিলাম।’
‘আমরা একটা ডিপোজিট করেছি। সেই ডিপোজিটটার মাধ্যমে আমরা চাচ্ছিলাম, আমাদের যে আলোচনাটা চলছে, বিটিআরসি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে, সেই আলোচনাটাকে ত্বরান্বিত হোক।’
কিন্তু গ্রামীণফোনের প্রস্তাবে বিটিআরসি সায় দেয়নি জানিয়ে সাদাত বলেন, ‘যেহেতু আমরা একটা প্রস্তাব দিয়েছি, বিটিআরসির স্বাভাবিকভাবে অনেক চিন্তাভাবনা আছে, তারা তা করবেন।’
‘আজকের দিনে রেজাল্টটা হচ্ছে, উনারা এই চেকটি বা ১০০ কোটি টাকার যে প্রস্তাব, সেটা নিতে উনারা অপরাগতা প্রকাশ করেছেন।’
বিটিআরসি বলে আসছে, গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার পাশাপাশি রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তাদের।
কয়েক দফা চেষ্টায় সেই টাকা আদায় করতে না পেরে বিটিআরসি লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে দুই অপারেটরকে নোটিস পাঠায়।
বিটিআরসি সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় দুই অপারেটর আদালতের দ্বারস্থ হয়। পরে অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগে গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির কর্মকর্তাদের মধ্যে দুই দফা বৈঠক হলেও তাতে সফলতা আসেনি।
গ্রামীণফোনের আবেদনে গত ১৭ অক্টোবর বিটিআরসির নিরীক্ষা আপত্তি দাবির নোটিসের ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় হাই কোর্ট। বিটিআরসি লিভ টু আপিল করলে আপিল বিভাগ ২৪ নভেম্বর গ্রামীণ ফোনকে দুই হাজার কোটি টাকা দিতে নির্দেশ দেয়।
ওই আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য ২৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন (রিভিউ) করেছে গ্রামীণফোন। সেই পুনর্বিবেচনার আবেদনের উপর শুনানির আগের বিটিআরসিকে ১০০ কোটি টাকা দিতে চেয়ে ব্যর্থ হল দেশের শীর্ষ এই মোবাইল অপারেটর।
গ্রামীণফোন কর্মকর্তা সাদাত বলেন, ‘১০০ কোটি টাকা দেওয়ার যে প্রস্তাব, সেটা কিন্তু আলোচনার যে ট্র্যাক এটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আলোচনার ট্র্যাক একটা, আইনি প্রক্রিয়া আরেকটা। দুইটা কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। একটার সাথে একটা মেলাবো না।’
‘কোর্ট থেকে যে আউটকাম আসবে, সেটার গাইডেন্স নিয়ে আমরা এগোবো। যেহেতু আলোচনার মাধ্যমে কাজটা এগিয়ে নিতে চাই, তার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব।’
গ্রামীণফোনের রিভিউ আবেদনের ওপর বৃহস্পতিবার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান হোসেন সাদাত।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা অফিসিয়াল প্রসেসে উনাদের কাছে গিয়েছিলাম। আদালত ও আলোচনার প্রসেসকে আমরা মেলাচ্ছি না। আগামীকাল যদি শুনানি হয়, সেটার আউটকামের ওপর নির্ভর করবে আমাদের নেক্সট প্রসেস কী হবে।’
গ্রামীণফোনের এসব বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিটিআরসির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) জাকির হোসেন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘যেহেতু গ্রামীনফোনের নিরীক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে আদালতের একটি নির্দেশনা রয়েছে, সেক্ষেত্রে বিটিআরসি উক্ত নির্দেশনার বাইরে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে না। কমিশন উক্ত নির্দেশনা প্রতিপালনে সচেষ্ট আছে।’
বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক ফেব্রুয়ারির শুরুতে বলেছিলেন, দুই হাজার কোটি টাকা দেয়ার জন্য গ্রামীণফোনকে আপিল বিভাগের বেঁধে দেয়া তিন মাস সময় শেষ হচ্ছে ২৪ ফেব্রুয়ারি। তার মধ্যে যদি আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন না আসে, আর গ্রামীণফোন যদি টাকা না দেয়, তাহলে তারা ‘প্রশাসক বসানোর যোগ্য’ হবে।
‘তখন বিটিআরসি যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে এবং প্রশাসক বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।’