শি জিন পিংকে প্রধানমন্ত্রীর চিঠি চীনে ৫ লাখ মাস্ক ১০ লাখ গ্লাভস পাঠাচ্ছে ঢাকা

Slider জাতীয়


কূটনৈতিক রিপোর্টার: করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত চীনের জনগণের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে ৫ লাখ পিস মাস্ক, ৫ লাখ জোড়া হ্যান্ড গ্লাভস, দেড় লাখ পিস ক্যাপ, ১ লাখ পিস স্যানিটাইজেশন এবং ৫০ হাজার পিস সু-কভার পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ। গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি চিঠি ও প্রতীকী স্বাস্থ্য সামগ্রী হস্তান্তর করেন।

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংকে লেখা সরকার প্রধানের চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী করোনা ভাইরাসের আক্রমণে স্বজন হারানো চীনা পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে সরকার প্রধান এই দুর্যোগ মোকাবিলায় যে কোন ধরণের সহায়তা নিয়ে চীনের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংকে পাশে নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, সিঙ্গাপুরে ৫ জন ছাড়া আর কোথাও বাংলাদেশি করোনা আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নেই। ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল উহান থেকে যে ৩১২ জন বাংলাদেশিকে ফেরানো হয়েছিল তাদের সবাই সুস্থতার সঙ্গে বাসায় ফিরেছেন। উহানে এখনও থাকা ১৭১ বাংলাদেশিকে পর্যায়ক্রমে ফেরত আনা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, চীন ফেরতরা সুস্থতার সঙ্গে বাড়ি ফেরার কারণে হজ ক্যাম্প খালি হয়েছে। এখন আমরা বাকীদের ফেরানোর বিষয়ে ভাবছি।

চীন সরকারের অনুমতি পাওয়া সাপেক্ষে সরকারী খরচেই তাদের ফেরানো হবে। ভাইরাসের কারণে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য কমবে কি-না? এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, সাময়িক সমস্যা হতে পারে, কিন্তু বড় কোনও ঝামেলা হবে না বলে আশা রাখি। চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, অনেক চাইনিজ এখানে আছেন। অনেকে ছুটিতে গেছেন। তারা পরে আসবেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, আমি অনেক সান্তনাসূচক চিঠি পেয়েছি এবং স্থানীয় সংস্থা ও মানুষের কাছ থেকে অনুদান পাচ্ছি। চীনে নববর্ষ ছুটি দীর্ঘায়িত করা হয়েছিল, এখন চাইনিজরা কাজে ফিরছে। আমার বিবেচনায় বৈশ্বিক বাণিজ্যে ভাইরাসের তেমন প্রভাব পড়বে না। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি করা হয় এবং এর সরবরাহেও কোনও প্রভাব পড়বে না বলে আশা করেন রাষ্ট্রদূত।

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের না পাঠানোর সুপারিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর: এদিকে চীনের রাষ্ট্রদূতকে বিদায় দিয়ে ফের গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মোমেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের না পাঠিয়ে বাংলাদেশিদের পাঠানো এবং সেখানে একটি রিসোর্ট করা যায়। শুক্রবার ভাসানচর পরির্দশন করেন মন্ত্রী। সেখানে উন্নয়ন প্রকল্প ঘুরে দেখেন তিনি এবং তার সফরসঙ্গীরা। মন্ত্রী বলেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গা না পাঠানোর বিষয়ে আমার বক্তব্য এটা একান্তই আমার ভাবনা। সরকারিভাবে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। ভাসানচর দেখে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ভাবলাম খামোখা অন্যদের সেখানে পাঠাবো কেন? তিনি বলেন, ভাসানচরে বিরাট লেক আছে এবং রিসোর্ট হতে পারে। এটি অত্যন্ত সুন্দর জায়গা। সেখানে রোহিঙ্গা পাঠানোর বিষয়টি না ভেবে আমরা বিকল্প চিন্তা করতে পারি। দেশে অনেক গৃহহীন আছে এবং ভাসানচরে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুযোগ আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি সেখানে বিরাট সম্ভাবনা দেখছি। আমি যা বলছি সেটি সরকারের নীতি নির্ধারণী মহলে সুপারিশ আকারে পাঠাবো। ভাসানচরে না পাঠালে রোহিঙ্গাদের কোথায় স্থানান্তরের চিন্তা করছে সরকার? এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, তাদের চূড়ান্ত গন্তব্য রাখাইন। আমরা সেখানেই তাদের স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের চেষ্টায় রয়েছি।

ওদিকে মানবপাচারে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার কারবারে সম্পৃক্ততার অভিযোগে পরিচালিত সাঁড়াশি অভিযানের মুখে বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্যের কুয়েত ত্যাগ সংক্রান্ত দেশটির মিডিয়া রিপোর্টকে ‘ফেক নিউজ’ হিসাবে অভিহিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী মোমেন বলেন, আমরা শুনেছি এটা ফেক নিউজ। আমাদের কাছে এ ধরনের কোনও তথ্য নেই। আমাদের মিশন ওখান থেকে কোন খবর দেয়নি। এ নিয়ে আমরা এখনও (বিস্তারিত) জানি না। খবরটি বোধহয় কুয়েতের কোনও একটা পত্রিকায় বের হয়েছিল এবং পরবর্তীতে ওই পত্রিকাই না-কী বলেছে এর সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ আছে। কুয়েতি সংবাদ মাধ্যম আল-কাবাস এবং আরব টাইমস- এ বাংলাদেশি সাসংদের মানবপাচারে হাজার কোটি টাকার কারবারে সম্পৃক্ততা, কাজ পেতে ৫টি লাক্সারি কার গিফট দেয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ সরিয়ে নেয়া সংক্রান্ত রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল। ৪৮ বছর বয়সী ঐতিহ্যবাহী কুয়েত সিটির অ্যরাবিক সংবাদ মাধ্যম আল-কাবাস এ নিয়ে পরপর দু’টি সংবাদ প্রচার করে। যার সূত্রে কুয়েতের ইংরেজী দৈনিক আরব টাইম খবর প্রচার করে। ঢাকায়ও বাংলা এবং ইংরোজী বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কুয়েতের সংবাদ মাধ্যমের সূত্রে খবরটি ব্যাপক প্রচার পায়। রিপোর্টটিকে ‘ফেইক নিউজ’ বললেও আল-কাবাস বা আরব টাইমস কোথায়, কিভাবে তাদের রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মন্ত্রী তা খোলাসা করেননি। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কুয়েতি সংবাদ মাধ্যমের অনলাইনে খবরটির অস্থিত্ব পুরোমাত্রায় বিদ্যমান ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *