ঢাকা: বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখা থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির আলোকে প্রণীত পৃথক প্রশ্নপত্রে এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কলেজগুলোর স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির জন্যও এই প্রক্রিয়া প্রযোজ্য হবে।
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) মঙ্গলবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির ২৬২তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শেকৃবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়ে বলা হয়, সভায় প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত লিখিত উত্তর বিশিষ্ট পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণের প্রস্তাব করা হয়।
‘এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের অল্প সময়ের মধ্যে অনলাইনে দরখাস্ত আহ্বান করা হবে। নভেম্বর মাসের মধ্যেই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদার আলোকে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।’
রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে সভায় উপস্থিত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা সর্বসম্মতিক্রমে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে মত দেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এই বৈঠকে উপস্থিত একজন ভিসি জানান, সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা উপস্থিত ছিলেন না। তাই কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় এক মত কি না, এখনও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এসব ভিসিদের সাথে আলোচনা করে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি চূড়ান্ত করবে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয় বলে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দিতে হয়। একই বিষয়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা দিতে তাদের ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়।
এ ব্যবস্থার বদলে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এক দিনে এক পদ্ধতিতে নেয়ার কথা ভাবছে সরকার, যাকে বলা হচ্ছে সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতি।
এ পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থী একবার পরীক্ষা দিলেই চলবে, প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে তাকে গুচ্ছে থাকা কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেয়া হবে, যেভাবে মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার আয়োজন করেও শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের মুখে তা বাতিল করে।
সরকারের গত মেয়াদে তখনকার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন পক্ষের বিরোধিতায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গতবছর আবারও বিষয়টি বাস্তবায়নে উদ্যোগী হন এবং ২০২০ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত পদ্ধতিতে নেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
দীপু মনির যুক্তি, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া গেলে শিক্ষার্থীদের হয়রানি আর অর্থের অপচয় কমে যাবে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ আরও প্রশস্ত হবে। কারণ এখন ইচ্ছা থাকলেও সব জায়গায় পরীক্ষা দেয়া তাদের সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহাম্মদের সভাপতিত্বে সভায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক শিরীন আখতার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মীজানুর রহমান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহাম্মদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুন উর রশিদ আসকারী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানসহ ২৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি উপস্থিত ছিলেন।