রাতুল মন্ডল শ্রীপুর: কৃষি জমি সুরক্ষা উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন শীর্ষক কমিউনিটি পরামর্শ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। (৯ ফেব্রুয়ারী রোববার) সকাল ১০টায় শ্রীপুর উপজেলার শৈলাট গ্রামে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ৬টি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের আয়োজনে ১৬৭ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা কর্মশালায় অংশ গ্রহণ করেন।
জানাযায় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত তিনটি গ্রাম শৈলাট, গাজীপুর, নয়াপাড়া মৌজার ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি জমি, জলাভূমি, পুকুর ও বসবসতবাড়ি কতিপয় শিল্পমালিক কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক জবর দখল ও ভরাট করে নানান ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এমন আইন বহির্ভূত কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য এলাকাবাসীর বিভিন্ন দপ্তরের কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিকারের দাবি জানিয়ে আসলেও তাতে কোন সাড়া মেলেনি। সর্বশেষ ভুক্তভোগী পরিবারের কৃষি জমি দখলের বিরুদ্ধে আইনগত সহায়তা চেয়ে এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ৬টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে জনস্বার্থে একটি রিট পিটিশন মামলা ৩২০৬/২০১৭ দায়ের করে।
পরবর্তীতে কৃষি জমির উপর শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের এরকম আইন ও জনস্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ড এবং শৈলাট, গাজীপুর, নয়াপাড়া গ্রামসমূহের কৃষি জমি সুরক্ষা ছয়টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কর্তৃক দায়েরকৃত জনস্বার্থমূলক মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে ১৪ মার্চ ২০১৭ মহামান্য হাইকোর্ট রুলে ও অন্তবর্তীকালীন আদেশ দিয়েছেন। রুলে আদালত দেশের কৃষি জমি সুরক্ষার লক্ষ্যে একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নে ব্যর্থতা ও কৃষিজমির বিরুদ্ধে ব্যবহার থেকে উল্লেখিত গ্রাম সমূহের কৃষি জমি সুরক্ষা ব্যর্থতা কেন অসাংবিধানিক, আইন বহির্ভূত ও জনস্বার্থের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে ১২টি সরকারি অফিস কে নির্দেশ দিয়েছেন।
একই সাথে কেন গাজীপুরের শ্রীপুরের শৈলাট, গাজীপুর, নয়াপাড়া তিনটি গ্রামের কৃষি জমি পুনরুদ্ধার করার নির্দেশ প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন। সেই সাথে আদালতে আদালতে গ্রাম ৩টিতে কি পরিমাণ কৃষিজমি ভিন্নভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে মেসার্স টোটাল কেয়ার প্লাটিনাম লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানের নামে নামজারিকৃত ২০৩.০৬ একর জমির মালিকানা, শ্রেণী পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্য এবং স্থানীয় জনগণের জমি জবর দখলের অভিযোগ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জেলা প্রশাসক গাজীপুর, ও সহকারী কমিশনার ভূমি শ্রীপুরকে নির্দেশ প্রধান করেছেন।
কর্মশালায় ভুক্তভোগী পরিবারের তাদের বর্তমান সমস্যার কথা তুলে ধরেন। শৈলাট গ্রামের ফজলুল হক মন্ডল বলেন, আমার জমির উপর ব্যাংক লোন দেয়ার জন একের পর এক ব্যাংকের কর্মকর্তারা জমি দেখার জন্য আসেন। এতে করে আমরা অনেক ভয়ে আছি কখন কবে জানি ভূয়া দলিলপত্র দেখিয়ে আমাদের জমি দেখিয়ে ওরা লোন করে নেয়।
একই গ্রামের মুনসুর আলী বলেন হাজরো মামলা দিয়েও এদের কাছ থেকে আমরা মুক্তি পাচ্ছি না। আমাদের জমি ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে নামজারি করে নিয়েছে, এখন চাইছে ব্যাংক লোন করতে। এসময় ৬টি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকর্তারা তাদের সকল সমস্যার আইনী সহযোগিতার আশ্বাস প্রধান করেন।
সংগঠনের নেতারা বলেন প্রধান মন্ত্রীরও দাবি কৃষিজমি দখল করে শিল্প নয়। তিনি বলছেন শিল্প প্রতিষ্ঠান করতে হবে, তবে কৃষিকে ত্যাগ করে নয়। কৃষিকে সঙ্গে নিয়ে শিল্পায়ন করতে হবে। কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ খাদ্য ও পুষ্টির মাধ্যমে কৃষি এবং কৃষক আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। কৃষিজমি রক্ষা করে কল-কারখানা স্থাপনের দিকে নজর দেওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, যত্রতত্র কল-কারখানা করা যাবে না। তিন ফসলি জমিতে কখনই না। তাই আমাদের বিশ্বাস খুবই দ্রুত কৃষি জমি সুরক্ষায় উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন হবে।