আমীন মোহাম্মদ
সৌদি আরব করেসপন্ডেন্ট
রিয়াদ: আন্তর্জাতিক এভিয়েশন কতৃপক্ষের শর্ত অনুযায়ী ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বরের পর মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ছাড়া কেউ উড়োজাহাজে ভ্রমণ করতে পারবেন না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সৌদি আরবে বসবাসরত প্রায় ২৮ লক্ষ বাংলাদেশিকে এমআরপি দেওয়া দূতাবাস এবং কনস্যুলেটের পক্ষে কোনো মতেই সম্ভব নয়।
তাই এই সময়ের মধ্যে সবাইকে এমআরপি দিতে মালয়েশিয়াভিত্তিক আউট সোর্সিং কোম্পানি আইরিশকে নিয়োগ দেয় পাসপোর্ট অধিদপ্তর। গত ১৮ আগস্ট রিয়াদে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আইরিশের কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন,“সরকার চায় না প্রবাসীরা কোনো ধরনের ঝামেলায় পড়ুক। তাই নির্ধারিত সময়ে প্রবাসীদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট দিতে সরকার আউটসোর্সিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ঘরে বসে এমআরপি পাবেন প্রবাসীরা”।
নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সৌদি প্রবাসীদেরকে এমআরপি দেওয়ার লক্ষ্যে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে অস্থায়ী জনবল নিয়োগ করে এনরোলমেন্ট (ডাটা এন্ট্রি,ছবি তোলা এবং ফিঙ্গারপ্রিন্টে)র কাজ করে যাচ্ছে দূতাবাস।দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে প্রতিদিন দূতাবাস এবং কনস্যুলেটে ভিড় জমাচ্ছেন হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি। বিশাল সংখ্যক সৌদি প্রবাসীকে সেবা দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা। আর এ নিয়ে প্রায় নিয়মিতই প্রবাসীদের সঙ্গে দূতাবাস কর্মকর্তাদের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।
উদ্বোধনের পর প্রায় ৫ মাস হয়ে গেলেও এখনো কাজ শুরু করতে পারেনি আইরিশ। অন্য স্পন্সরের কাছ থেকে চুক্তিভিত্তিক ১৫/২০জন্য জনবল নিয়োগ দিয়ে ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সপ্তাহখানেক পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে ৪৮২জনের পাসপোর্টের আংশিক এনরোলমেন্ট করে। এই সপ্তাহখানের কাজও রয়ে গেছে অসম্পূর্ণ। এমআরপি পাসপোর্টের জন্য জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক। অথচ এখন পর্যন্ত এই অসম্পূর্ণ এনরোলমেন্টে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত জন্মনিবন্ধন সনদ সাবমিট করতে পারেনি আইরিশ।
এদিকে সপ্তাহখানেকের পরীক্ষামূলক এনরোলমেন্ট করা পেপারগুলো এখনো সম্পূর্ণ হয়নি জানিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, আইরিশ এমআরপি এনরোলমেন্ট করার সময় জন্মনিবন্ধনের টাকা গ্রহণ করলেও তাদের করা ৪৮২টি এনরোলমেন্টে জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট এখনো সাবমিট করা হয়নি। আর এই জন্মনিবন্ধনে কে স্বাক্ষর করবেন সেব্যাপারেও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।আর জন্মনিবন্ধন সাবমিট না করলে পাসপোর্ট হবে না বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
তবে এই সময়ের মধ্যেই কাঙ্ক্ষিত সেবা দেয়ার পরিবর্তে প্রবাসীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আইরিশ (IRIS) প্রবাসীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য তাদের বিশ্বস্ত কিছু লোককে পাসপোর্ট ফি আদায়ের জন্য ইউজার পাসওয়ার্ড সরবরাহ করে। তারা নির্ধারিত ১৮০ রিয়ালের পরিবর্তে পাসপোর্ট প্রতি নিচ্ছে ২৫৫ থেকে ৩৫০ রিয়াল। কিন্তু রশিদ দিচ্ছে ১৮০ রিয়ালের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইরিশ রিয়াদ অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, অতিরিক্ত টাকা আদায়কারীদের সাথে আইরিশের সম্পর্ক নেই কথাটা সত্য নয়। আইরিশ অফিস থেকে তাদেরকে ইউজার পাসওয়ার্ড দেয়া হচ্ছে এবং আদায়কৃত টাকা সংগ্রহ করছেন।
বাথা বাংলা মার্কেটে একাধিক ষ্টুডিও, মেনিলা প্লাজা, নাসিম, হারাসহ বেশ কয়েক জায়গায় এই অবৈধ ইউজার পাসওয়ার্ডের প্রমাণ মিলেছে। ইউজার পাসওয়ার্ড সরবরাহকারীদের কাছ থেকে দূরত্ব বিবেচনায় নিকটবর্তী এজেন্টদের কাছ থেকে দিনে একাধিকবার এবং দূরবর্তীদের কাছ থেকে রাতে সারাদিনের কালেকশন (এমআরপি ফি এবং অতিরিক্ত টাকার কিছু অংশ) বুঝে নেওয়া হয়।
সিদ্দিক খান। কাজ করেন সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ থেকে চারশত কিলোমিটার দূরের শহর দাম্মাম।
তিনি বলেন, দুইদিনের ডিউটি মিস করে ৫০০/ ৬০০শ রিয়াল. (১২ হাজার টাকা) খরচ করে দাম্মাম থেকে আসলাম। ১৮০ রিয়াল নেওয়ার কথা থাকলেও আমার কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ২৫৫ রিয়াল। কিন্তু স্লিপে (রসিদ) লেখা ১৮০ রিয়াল।
শুধু সিদ্দিক খান নন, ওয়াজ উদ্দিন,মিজান,গোলাম মোস্তফা,আব্দুল গফুরসহ অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশি অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছে বলে বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করেন।
এই ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আইরিশের রিয়াদ শাখার সমন্বয়কারী সামি আল বশির প্রথমে মন্তব্য করতে রাজি হলেও কিছ সময় পর কাজে ব্যস্ত আছেন বলে প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। প্রয়োজনে সৌদি বাদশার সাধারণ ক্ষমার সময়ের মতো ঢাকা থেকে জনবল এনে যথাসময়ে প্রবাসীদের কাছে পাসপোর্ট পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করবো।
আইরিশ যে এখনো কাজ শুরু করতে পারেনি এবং পরীক্ষামূলক কাজের সময় অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছে সে ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলকে জানিয়েছি। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত এলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।