ঢাকা: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও কারচুপি মুক্ত হয়েছে। আসলে নির্বাচনে হেরে গেলে ফলাফল কেউই মানতে চায় না। বুধবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দপ্তর প্রধান এবং প্রকল্প পরিচালকদের নিয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের অগ্রগতি পর্যালাচনা ও নাগরিক সেবা প্রদান বিষয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির ফলাফল বর্জনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রশ্ন করেন, ‘হেরে গেলে হার কি কেউ মেনে নেন? বিএনপিও মানছে না। নির্বাচনে হেরে গেলে ফলাফল কেউই মানতে চায় না। ইভিএমএ কারচুপির কোনো সুযোগ নেই।’
কারচুপির অভিযোগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দুই সিটির নির্বাচনের ফল বাতিল করে নতুন নির্বাচন দেয়ার দাবির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির মহাসচিব হিসেবে নিজে কোন সাফল্য দেখাতে পারেননি বলেই, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারচুপির অভিযোগে দুই সিটির নির্বাচনের ফল বাতিল করে নতুন নির্বাচন দেয়ার দাবি করছেন।
তিনি বলেন, ইভিএমের মাধ্যমে এই নির্বাচনে কারচুপির বা ফলাফল বদলে দেয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। হেরে যাওয়ার কারণেই বিএনপি প্রার্থীরা ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের সব আহ্বান জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে কোন কারচুপির প্রমাণ পর্যবেক্ষকরা দিতে পারেননি এমনকি বলেনওনি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বড় দাগের সংঘাত হয়, এবার বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোন সংঘাত হয়নি। নির্বাচন ছিল কারচুপি ও জালিয়াতি মুক্ত।
তিনি বলেন, ফখরুল সাহেব কেন ফলাফল প্রত্যাখান করলেন জানি না। তাদের উদ্দেশ্য কি ছিল? কেন্দ্র দখল করে জালিয়াতি করে জেতার। এটা সম্ভব না, এই মেশিনে কারচুপি জালিয়াতির সুযোগ নেই। ইভিএমে ভোট করাই হয়েছে কারচুপি জালিয়াতি যেন না হয় সেজন্য। নির্বাচনে তাদের লোক দেখলাম না। মিছিলে তাদের অনেক লোক ছিল, নির্বাচনের দিন গেলো কোথায়।
ফলাফল পাল্টে দেয়ার বিষয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে কাদের বলেন, নির্বাচনে যেভাবে আশঙ্কা করা হয়েছিল, সেভাবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয়জয়কার কিন্তু হয়নি। ১৩ জন বিদ্রোহী জিতেছে। তারা যে সুবিধা করতে পেরেছে তা নয়। বেশিভাগই কাউন্সিলর হয়েছে। হেরে গেলে হার কি কেউ মেনে নেন, বিএনপিও মানছে না। তবে, ফলাফল পাল্টে দেয়ার সুযোগ ইভিএমে নেই।
পদ্মাসেতুতে আগামী দুই মাসে যদি (চীনের) এই অচলাবস্থার অবসান হয় তাহলে আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে চীনের নববর্ষ উপলক্ষে পদ্মাসেতু প্রকল্পে কর্মরত ৩৩২ জন কর্মী ছুটিতে গেছেন। সেটা প্রলম্বিত না হলে আগামী দুই মাসের মধ্যে পদ্মাসেতুর কাজের অগ্রগতিতে কোনো সংকট হবে না।
তিনি বলেন, পদ্মাসেতুতে মোট চীনা নাগরিক কাজ করেন ৯৮০ জন। এরমধ্যে নববর্ষ উপলক্ষে চীনে গেছেন ৩৩২ জন। তাদের মধ্যে ফিরে এসেছেন ৩৩ জন। এরমধ্যে ৮ জন কোয়ারেন্টাইন মুক্ত। অন্যরা কোয়ারেন্টাইনে আছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তরপ্রধান এবং প্রকল্প পরিচালকদের নিয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা হয়েছে। আপডেট জেনেছি কোথায় কী অগ্রগতি হয়েছে। যেখানে যেখানে প্রয়োজন সেখানে সেখানে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে সার্বিক অগ্রগতির হার ৭৭ শতাংশ। প্রধান সেতুর অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ। এ পর্যন্ত ২৩টি স্প্যান বসেছে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি ২৪তম স্প্যান বসবে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, পদ্মাসেতুর কাজ চলছে। কোনো ধরনের অসুবিধা না হলে জুলাইয়ের মধ্যে সব কয়টি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মেগা প্রকল্পের মধ্যে আমার মনে হয় সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে পদ্মাসেতুতে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আশা করছি আগামী মাসে ঢাকা-মাওয়া বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন।
মেট্রোরেল সার্বিক অগ্রগতি ৪২ শতাংশ জানিয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও ৬৮ শতাংশ এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে কাজ ৩৬ শতাংশ হয়েছে। এখানে চীনা নাগরিক আছেন ৫৮ জন, চীনে গেছেন ৩১ জন, ফেরত এসেছেন ১ জন। তিনি কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এখানে কোন প্রভাব পড়বে না।
আগামী বর্ষার আগে চলমান যে কাজগুলো আছে তারমধ্যে সব রাস্তা ব্যবহার উপযোগী করতে হবে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, যে সব ঠিকাদার সময়মতো কাজ শেষ করবে না অথবা কাজ শুরু করতে গড়িমসি করে ধীরে করবে তাদের ফাইনাল নোটিশ দিয়ে ওয়ার্ক অর্ডার বাতিল করা হবে। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। প্রয়োজনবোধে তাদের ব্ল্যাকলিস্ট করতে হবে।
এর আগে অনুষ্ঠিত সভায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান ড. মো. কামরুল আহসান, বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান মো. এহছানে এলাহী, ডিটিসিএ’র নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমানসহ প্রকল্প পরিচালকগণ উপস্থিত ছিলেন। সূত্র : বাসস