নারায়নগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে পৃথকভাবে বিএনপি ও ছাত্রদলের মিছিলে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। এতে কমপক্ষে ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়েছে। ঘটনা দুটি ঘটেছে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সোয়া ১১টা পর্যন্ত শহরের মিশনপাড়া ও বন্দরে। বিক্ষুব্ধরা পুলিশের একটি টেম্পোতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। দুটি ঘটনায় পুলিশ শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়েছে বলে জানা যায়। তবে সদর মডেল থানা পুলিশ ৩৩ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ার কথা স্বীকার করলেও বন্দর থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক গুলির সংখ্যা জানাতে পারেননি। এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোর থেকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব মোতায়েন করা হয়। জানা যায়, বেলা ১১টার দিকে শহরের মিশনপাড়া এলাকায় জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিবের নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সমবেত হয়। সোয়া ১১টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে চাষাঢ়ার দিকে অগ্রসর হতে চাইলে শহরের বাগে জান্নাত মসজিদের সামনে আসামাত্র পুলিশ বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে চাষাঢ়া বিজয় স্তম্ভে জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে থাকা নেতাকর্মীরাও পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয়ায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে ছাত্রদলের মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মঞ্জুর কাদের জানান, পুলিশ ৩৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। অন্যদিকে বন্দরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষে অন্তত ১০জন গুলিবিদ্ধসহ ২০জন আহত হয়েছে। যাদের মধ্যে এটিএন নিউজের ক্যামেরাম্যান জামিল হোসেন উল্লাস রয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, বিএনপির গণহত্যা বা কালো দিবস উপলক্ষে সাবেক সদস্য এডভোকেট আলহাজ আবুল কালাম ও উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশার নেতৃত্বে সকালে বন্দরের নবীগঞ্জ থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন নেতাকর্মীরা একটি কালো পতাকা মিছিল বের করে। মিছিলটি কিছুদূর যেতেই পুলিশ বাধা দিলে উভয়ে মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ গুলি ছুড়লে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নবীগঞ্জ এলাকা। গুলিবিদ্ধ বিএনপির ১০ জন নেতাকর্মীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছেন বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান, শাহ আলম। এ ঘটনায় ইমরান (১১) নামে এক শিশুর গায়ে তিনটি রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়। তাছাড়াও বিএনপি নেতাকর্মীদের ইটপাটকেলের আঘাতে ৭/৮ জন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়। এবং পুলিশের একটি টেম্পোতে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে করে ৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশা জানান, পুলিশের ছোড়া গুলিতে অন্তত ১০জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ১৫-২০ জন। বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. মোকাররম হোসেন সাংবাদিকদের জানান, সকালের ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ৪৫/৫০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে পুলিশ। এ ঘটনায় আনুমানিক ১০/১২ জনকে আটক করা হয়েছে। বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে।
শহরে বিএনপি-যুবদলের কালোপতাকা মিছিল: এদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরে সকালে কালো পতাকা নিয়ে মিছিল করেছে বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীরা। গতকাল সকাল ৭টায় শহরের জয়গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয় এলাকা থেকে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটি এম কামালের নেতৃত্বে কালো পতাকা মিছিলটি বের হয়। মিছিলটি জল্লারপাড়া, বাবুরাইল ও জিমখানা হয়ে ডিআইটি এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা সামসুজ্জামান খান ভাষাণী, নুরুল হক চৌধুরী দিপু, ফারুক হোসেন, জেলা কৃষক দলের সেক্রেটারি উজ্জ্বল হোসেন, জেলা ছাত্রদল যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান রনি, মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশিদুর রহমান রশো, শেখ অপু, যুবদল নেতা মাসুদ রানা, সরকার আলম, জুলহাস প্রমুখ।
বিপর্যস্ত নারায়ণগঞ্জের জীবনযাত্রা: এদিকে বিএনপির ঢাকার সমাবেশকে ঘিরে অঘোষিতভাবে রোববার দুপুরের পর থেকে নারায়ণগঞ্জে গণপরিবহন বন্ধ কের দেয়া হয়েছে। রীতিমত রাজধানীর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। যানবাহন সঙ্কট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা, বিএনপি মিছিল ও সংঘর্ষের কারণে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। জরুরি প্রয়োজনে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঘর থেকে বের হওয়া মানুষ। বেশির ভাগ মার্কেট ও বিপণী বিতান খোলা হয়নি। শহরবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছিল। গ্রেপ্তার ৫ই জানুয়ারির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে পুলিশ বেপক ধরপাকড় চালিয়েছে। নেতাদের বাড়ি বাড়ি হানা দিয়েছে পুলিশ। পুলিশের তৎপরতায় বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী বাড়ি-ঘর ছাড়া। রাতে বাড়ির বাইরে সময় কাটিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
সিদ্ধিরগঞ্জে আওয়ামী লীগের শোডাউন: ওদিকে সরকারের বছর পূর্তিতে সোমবার সিদ্ধিরগঞ্জে শোডাউন করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সকাল ৯টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়, মাদানীনগর, মৌচাক বাসস্ট্যান্ড, সানারপাড়, সাইনবোর্ড এলাকায় অবস্থান নেয় নেতাকর্মীরা। পরে সরকারের বছর পূর্তিতে খণ্ড খণ্ড আনন্দ মিছিল করে তারা। আওয়ামী লীগের এ শোডাউনের নেতৃত্বে দেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মজিবুর রহমান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতি। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগ নেতা রিয়াজ উদ্দিন রেনু, নাসিক কাউন্সিলর আবদুর রহিম, আলী হোসেন আলা ও রুহুল আমীন মোল্লা, আওয়ামী লীগ নেতা এমএ বারী, শাহ আলম, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী মনোয়ারা বেগম, যুবলীগ নেতা এমএ জামান, নজরুল ইসলাম ওরফে ছোট নজরুল, ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল হক খোকা, মোস্তাফিজুর রহমান সুলতান, পারভেজ, শ্রমিকলীগ নেতা সামাদ বেপারি, আবদুল আজিজ, সেলিম মোল্লা প্রমুখ। তবে আওয়ামী লীগের দিনভর শোডাউন চলাকালে সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপির কোন নেতাকর্মীকে রাজপথে দেখা যায়নি।