ঢাকা: ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে ভোট ‘ছিনতাইয়ের’ আলোচনার মধ্যেই ফল পরিবর্তনের অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত একজন কাউন্সিলর প্রার্থী। তার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের ফল স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে দালিলিক প্রমাণ হাজির করে তিনি জানিয়েছেন, ইভিএম মেশিন থেকে নির্বাচন শেষে যে ফল দেয়া হয়েছিল রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে তা পরিবর্তন করে অন্য এক প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এটি যে ইচ্ছাকৃত ছিল তা প্রমাণে তিনি ইভিএম মেশিন থেকে বের হওয়া ফলের কপি ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দেয়া ফলের কপি নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছেন। অভিযোগ আসার পর রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ঢাকা দক্ষিণের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের ফল স্থগিত করার ঘোষণা দেয়া হয়। শনিবার ঢাকার দুই সিটিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। কাউন্সিলর পদেও ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীদের জয়জয়কার। তবে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে পরাজিত দেখিয়ে স্বতন্ত্র (দলের বিদ্রোহী) প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
এ ওয়ার্ডে ফল জালিয়াতির ঘটনায় ঘোষিত ফল নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
দক্ষিণের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ আলমগীর অভিযোগ করেন, তার ভোট পাল্টে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। প্রথমে তিনি আপত্তি জানালেও তা আমলে নেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে তিনি কেন্দ্র ও রিটার্নিং কর্মকর্তার ফলে কপি সংগ্রহ করে চ্যালেঞ্জ করেন। তথ্য প্রমাণ হাজির করায় রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন ফল বাতিল করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন। শেখ আলমগীর মানবজমিনকে বলেন, এটা খুব দুঃখজনক। এটা কোনো ভুল হতে পারে না। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমার কাছে এমন প্রমাণ আছে। এই ফলাফল এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
শনিবার দিবাগত রাতে দক্ষিণ সিটির ফল ঘোষণার সময় ওই ওয়ার্ডে টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকের প্রার্থী জুবায়ের আদেলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। শেখ আলমগীরের ছোট ভাই মো. জাহাঙ্গীর বলেন, সমস্যা হয়েছে মূলত আরমানিটোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরুষ ভোটকেন্দ্রে (কেন্দ্র-৫২০)। সেখানে ঘুড়ি প্রতীকের প্রার্থী ইরোজ আহমেদ পেয়েছেন ২০২ ভোট আর মোহাম্মদ আলমগীর পেয়েছেন ৪৩৯ ভোট। কিন্তু ফলাফল ঘোষণায় দেখা যায়, ঘুড়ি প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন ৪৩৯ ভোট আর মোহাম্মদ আলমগীর পেয়েছেন ২০২ ভোট। তাই আমাদের প্রার্থী ১৭ ভোটে হেরেছেন। আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। এদিকে, রোববার এ ওয়ার্ডে ফলাফল স্থগিতের এক গণ-বিজ্ঞপ্তিততে বলা হয়, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা ২০১০-এর বিধি ৪২(১) অনুসারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাধারণ ওয়ার্ডে ৩১ নম্বরের নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হলো। নির্বাচন স্থগিতের পর সরজমিনে আরমানিটোলা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়েও এমন ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। নামপ্রকাশ না করার শর্তে এই স্কুলের এক কর্মচারী বলেন, ঘটনা আমরাও শুনেছি।
এখানে যে সমস্যা ঘুড়ি আর ঝুড়ি প্রতীক নিয়ে। আমরা যেটা শুনেছি ঘুড়ির ভোট উল্টে ঝুড়ির ঘোষণা হয়েছে। এই ওয়ার্ডের মহল্লায় মহল্লায়, চা দোকানে সর্বত্রই এখন এমন আলোচনা। ওয়ার্ডের বাসিন্দা শামসুর রহমান বলেন, বিজয়ী পার্থী আদেল ও আওয়ামী লীগের পার্থী দুইজনই যোগ্য। এখন আমরাও চাই, যিনি প্রকৃত বিজয়ী তার নাম ঘোষণা করা হোক। বিজয়ী জোবায়ের আদেলের সমর্থক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আদেল সাহেব স্বতন্ত্র
হলেও এই এলাকায় তার জনপ্রিয়তা আছে। তাই তিনি নির্বাচিত হয়েছেন।
ওনাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সত্যের জয় হোক। আমরাও চাই। শনিবার ঢাকার দুই সিটিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট পড়ে গড়ে ২৭ ভাগ। এতো কম ভোটের হার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহল থেকে। এতো কম ভোটেও ভোট কেন্দ্র এক পক্ষের দখলে থাকা এবং সাধারণ ভোটারদের ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার পর নির্ধারিত প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়। কোন কোন কেন্দ্রে ভোটারদের ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার পর ভোট হয়ে গেছে বলে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচন কমিশন ভোটের আগে বলেছিল ইভিএমের মাধ্যমে ভোটারদের ভোটাধিকার সুরক্ষিত হবে। তবে ভোটের পর আলোচনা মেশিনে ভোট ছিনতাই নিয়ে। এমন অভিযোগ আর আলোচনার মধ্যেই ইভিএমের ফল পরিবর্তনের অভিযোগ এলো। এ অভিযোগ খোদ সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষ থেকে করায় অনেকে বলছেন, এখন প্রতিদ্বন্দ্বি আরও প্রার্থী এমন অভিযোগ করতে পারেন।
এদিকে, ভোটের ফল ঘোষণার দিন মাঝ খানে দীর্ঘ সময় বিরতি দিয়ে মধ্যরাতের পর ফল ঘোষণা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। যে ওয়ার্ডে ফল জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এর ফল ঘোষণা করা হয় মধ্যরাতের পর। অথচ যে কেন্দ্রের ফল বদলের অভিযোগ এসেছে ওই কেন্দ্রের ফল ঘোষণার নথিতে সময় উল্লেখ করা হয়েছে বিকাল চারটা ৪৭ মিনিট।