মেশিনে ভোট। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ক্ষমতাবান তরুণদের জটলা। ভেতরেও তারাই রাজা। ভোটার উপস্থিতি কম। যারা ভয় কাটিয়ে কেন্দ্রে গেছেন তাদের বেশিরভাগেরই স্বাধীনভাবে ভোট দেয়ার অধিকার ছিল না। প্রিঙ্গার প্রিন্ট নিয়েই অনেককে বিদায় করে দেয়া হয়েছে। বাইরে এসে বহু ভোটার এ অভিযোগ করেছেন। কাউকে কাউকে আবার ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়।
তবে নির্দিষ্ট প্রতীকে।
এমনিতেই ভোটের প্রতি মানুষের আগের মতো আগ্রহ নেই। গত কয়েকবছরে ক্রমান্বয়ে ভোটের হার কমছে। তবুও ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে একধরনের কৌতূহল ছিল। সরকারি দলের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের। বলা হয়েছিল, এ নির্বাচনে হারলে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়বে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদাও বারবার আশ্বস্ত করেছেন, ইভিএমে জাল ভোটের সুযোগ নেই। ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন। আজকের ভোটে তার ফিঙ্গার প্রিন্টও মেলেনি। পরে অবশ্য জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ভোট দেয়ার সুযোগ পান তিনি।
সে যাই হোক। কেমন হলো ঢাকার ভোট। ফল ঘোষণার আরো কয়েকঘণ্টা বাকী। কিন্তু ভোটাররা এরইমধ্যে পরাজিত। আট ঘণ্টার ভোট কেমন হবে তার আভাস কিছুটা আগেই পাওয়া যাচ্ছিল। রাতের ঢাকা ছিল থমথমে, নিষ্প্রাণ। সকালেই খুব বেশি সময় নেয়া হয়নি। ভয়ভীতি দেখিয়ে দিনের শুরুতেই বিএনপির এজেন্ট শূন্য করে দেয়া হয় কেন্দ্র। প্রধান নির্বাচন কমিশনার দৃশ্যত বিএনপির এজেন্টদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিরোধী এজেন্ট শূন্য হওয়ার পাশাপাশি সহসাই ভোটার শূন্য হয়ে পড়ে কেন্দ্র। বহু জায়গায় ভোটাররা কেন্দ্রে যেতেই বাধা পান। নারীদের প্রতি বাধাটা যেন ছিল আরো বেশি। যারা অনেক অনুনয়-বিনয় করেছেন ভোট দিতে, তাদের বাধ্য করা হয় একটি নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট দিতে। ইভিএমে ভোট দিতে গিয়েও অনেকে বিড়ম্বনায় পড়েন। কেউ কেউ ইভিএমে সহজে ভোট দিতে পারেন। আবার কারও কিছুতেই ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলছিলো না।
ঢাকার কূটনীতিকরা আগে বলতেন, স্মার্টফোনের যুগে ভোট কারচুপি সম্ভব নয়। কাল তারা ভোট পর্যবেক্ষণ করেছেন। যদিও তাদের তৎপরতা নিয়ে সরকারি দলের পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। এ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন। আমজনতাতো দূরের কথা, সাংবাদিকরাও তাদের মোবাইল খুলে ছবি তোলার সাহস করতে পারেননি। যারাই করতে গিয়েছেন তাদের হেনস্তার মুখে পড়তে হয়েছে। স্মার্টফোনের যুগে মেশিনে অদ্ভুত এক ভোট দেখলো ঢাকার মানুষ।