ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোটাররা ন্যূনতম সুযোগ পেলে ধানের শীষের প্রার্থীদের জয় হবে। তবে নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে জনগণই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের জরিপ সিটি করপোরেশনের গোটা নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ধানের শীষের মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের গোপীবাগের বাসায় সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর আইটি উপদেষ্টা বলেছেন, এখানে তাদের দুই মেয়রপ্রার্থী জয়লাভ করবে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে ২৮ ডিসেম্বর একইভাবে সজীব ওয়াজেদ জয় নির্বাচন নিয়ে একটা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। সাধারণত যারা জ্যোতিষ তারা এই ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকেন। আমরা মনে করি, তিনি (সজীব ওয়াজেদ জয়) ভোটের আগে এই ধরনের যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করছেন সেগুলো গোটা নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে। যখন সরকারি দলের বড় নেতা বা কর্মকর্তা বা কেউ এই ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে এই ধরনের কথা বলেন তখন ডেফিনেটলি সেই গোটা নির্বাচনব্যবস্থার ওপরই প্রভাব পড়ে- নির্বাচন কমিশন যারা ভোট গ্রহণ করবেন তাদের সবার ওপরই। সজীব ওয়াজেদ জয়ের এ রকম জরিপের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা করা উচিত, তাকে তার উপদেষ্টা হিসেবে রাখবেন নাকি ‘রাজ জ্যোতিষী’ হিসেবে তাকে নতুন নিয়োগ দেবেন?
উল্লেখ্য, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদ্বয়ের বিপুল জয় হবে বলে নিজের করা জরিপের ওপর ভিত্তি করে নিজের ফেসবুকের অ্যাকাউন্টে স্ট্যাটাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তার ফেসবুকের ভেরিফাইড পেজে গত বৃহস্পতিবার এই জরিপের ফল তুলে ধরেন জয়।
শুক্রবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঢাকা উত্তরের মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল বিএনপি মহাসচিবের সাথে দেখা করে তার নির্বাচনী প্রস্তুতির সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এরপর বিকেল ৪টায় মহাসচিব ঢাকার গোপীবাগে ঢাকার সাবেক মেয়র মরহুম সাদেক হোসেন খোকার বাসায় আসেন। সেখানে দক্ষিণের মেয়রপ্রার্থী ইশরাকের কাছ থেকে তার নির্বাচনী প্রস্তুতির কথাও জানেন। পরে মহাসচিব সাদেক হোসেন খোকার স্ত্রী ইসমত আরা খোকার সাথেও দেখা করেন। এ সময় গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির আবদুস সালাম, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, কাজী আবুল বাশার, রফিক সিকদারসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন যা দেখেছি, সরকারের কর্মকর্তাদের যেসব কথা শুনছি, সরকারি দলের নেতৃবর্গ যেসব কথা বলছেন তাতে করে এটা স্পষ্ট যে, সরকার চেষ্টা করছে পুরো নির্বাচনটাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়ার জন্য। ইতোমধ্যে সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, প্রত্যেকটি কেন্দ্র তারা পাহারা দেবেন এবং তারা নিয়ন্ত্রণ করবেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবর্গ তাদের কর্মীদের যে রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন যে, যেকোনো মূল্যে তাদের কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তারপরও আমরা যেটা বিশ্বাস করি যে ঢাকা শহরের মানুষ ঢাকাবাসী দুই করপোরেশনেই তারা তৈরি হয়ে আছেন যদি তারা ভোট দেয়ার ন্যূনতম সুযোগ পান তাহলে তারা অবশ্যই দক্ষিণে ইশরাক ও উত্তরে তাবিথকে জয়যুক্ত করবেন ধানের শীষে।
ভোটকেন্দ্র যদি দখলের চেষ্টা হয় সে ক্ষেত্রে আপনারা কী করবেন প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, আমরা বলেছি, আমাদের জনগণই যা কিছু করবার করবেন, জনগণই প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন, জনগণই তাদের ভোটের অধিকার, সেই অধিকারকে নিশ্চিত করবেন। ইশরাক হোসেন বলেন, আমি একটি কথায়ই বলব, ভোটকেন্দ্র দখল হলে জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিহত করা হবে। আমার একটাই কথা, সোজা কথা।
ঢাকা উত্তরের মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে বলেছেন, কেন্দ্রের আশপাশ তারা পাহারা দেবেন। কেন্দ্র দখলে রাখবেন। এর মাধ্যমে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বিএনপির এই মেয়রপ্রার্থী আশা করেন, ভোটাররা সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।