ড. আলী রীয়াজ:রঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের দু’জন শিক্ষার্থীকে হল কর্তৃপক্ষ ‘কেন তাদের হলের সিট বাতিল করা হবেনা’ এই মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। কেন এই নোটিশ সেই ঘটনার কথা আপাতত উহ্য থাকে, কি অভিযোগ তাও না হয় পরে এক সময় বলা যাবে। কিন্তু দেখার বিষয় হচ্ছে কর্তৃপক্ষ এই সব নোটিশ কার কার কাছে পাঠিয়েছেন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে- ‘১৫ জানুয়ারি ছাত্রী ফাল্গুনী, শ্রবণা ও কর্মচারী শাহীনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদা। নোটিশে দুই ছাত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাঁদের সিট কেন বাতিল করা হবে না। শ্রবণার নোটিশটি তাঁর ইনস্টিটিউটের (ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ ইনস্টিটিউট) পরিচালক অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী ও অভিভাবককে পাঠানো হয়েছে। আর ফাল্গুনীকে দেওয়া নোটিশটির অনুলিপি তাঁর বিভাগে (কারুশিল্প) না পাঠিয়ে পাঠানো হয়েছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কর্তৃপক্ষের আচরণ থেকে বোঝা যাচ্ছে হল কর্তৃপক্ষ মনে করে ছাত্রলীগের কর্মীদের ব্যাপারে শিক্ষার্থীর শিক্ষক বা বিভাগের প্রধান নয়- ছাত্রলীগের এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারাই গুরুত্বপূর্ণ এবং তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থার অংশ। কর্তৃপক্ষের এই আচরণ প্রমাণ করছে ছাত্রলীগ, শিক্ষক, প্রশাসন এগুলো এখন আর আলাদা কোনো অস্তিত্ব নয়।
ফলে ছাত্রী নিবাসে ‘পলিটিক্যাল’ বলে আলাদা উইং আছে- সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলে অধ্যাপক লাঞ্চিত হন, কিন্তু এই নিয়ে উচ্চবাচ্য হয়না। হলের কথিত গণরুম চালায় ছাত্রলীগ; কর্তৃপক্ষ কোথায় থাকেন তা তারাই জানেন। অহরহ ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের অপছন্দের শিক্ষার্থীদের ‘শিবির‘ তকমা দিয়ে মারধর করে, প্রক্টরের হাতে সোপর্দ করলে তিনি/তারা পুলিশের কাছে তুলে দেন। প্রশাসনের কাজই হচ্ছে ঐটুকু।
ছাত্রলীগ আর প্রশাসন এইভাবেই মিলেমিশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চালাচ্ছেন। এই নিয়ে প্রশ্ন করলে তার পরিণাম যে কি হয় তা নিরীহ শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করুন।
(লেখক: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ডিসটিংগুইস অধ্যাপক আলী রীয়াজ, লেখাটি তার ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া।)