ঢাকা: হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে কেনাকাটায় অনিয়ম দুর্নীতির নানা অভিযোগের মধ্যে এবার যুক্ত হলো সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নাম। ব্যবহার অনুপযোগী যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র কেনাকাটার নামে প্রায় পৌনে তিনশ’ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প পরিচালক কৃষ্ণ কুমার পাল ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের একান্ত সচিব (এপিএস) মীর মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে। তাদের সহযোগী ছিল আটটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মীর মোশারফ হোসেন হাসপাতালটির পরিচালকও। এই অনিয়ম দুর্নীতির ঘটনা তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এরই মধ্যে আত্মসাতের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। সংস্থাটির একটি সূত্র জানায়, অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে অভিযুক্তদের তলব করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রকল্প পরিচালক কৃষ্ণ কুমার পালকে গেল বছর ১লা ডিসেম্বর দিনব্যাপি জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।
অন্যদিকে তলবি নোটিশ পাঠিয়ে আগামী ২৭শে জানুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে মীর মোশাররফ হোসেনকে। মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজের এই দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের উপ-পরিচালক সামছুল আলমকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি দলও গঠন করা হয়। এ দলের বাকি দুই সদস্য হলেন- উপসহকারী পরিচালক সহিদুর রহমান ও ফেরদৌস রহমান। দুদক সূত্র জানায়, প্রকল্পের দুর্নীতির অনুসন্ধানে নেমে ২৩ ধরনের নথি পর্যালোচনা করেছে দুদক। এসব নথি পর্যালোচনায় দুর্নীতির দালিলিক প্রমাণ পাওয়ায় অধিকতর তদন্ত কার্যক্রম চলছে। ‘শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্প’ নামে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এবং গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে ৮টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সিরাজগঞ্জ সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে শিয়ালকোল ইউনিয়নে ৩০ একর জমির ওপর মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০০ শয্যা হাসপাতাল নির্মাণের প্রথম ধাপে প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৬৩৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। গত বছরের অক্টোবরে প্রকল্পের খরচ ৩৯ শতাংশ বাড়ানো হয়।
এতে মোট খরচ দাঁড়ায় ৮৮৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। টাকার অংকে খরচ বেড়েছে ২৪৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্প ব্যয় বাড়ার কারণ হিসেবে যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রের বাজার দর বেড়ে যাওয়া, নতুন যন্ত্রপাতি কেনার প্রস্তাব সংযোজন, মাটি ভরাটসহ বিভিন্ন কারণে খরচ বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দুদক সূত্র জানায়, এসপিওয়াই ইন্ট্রাঅপারেটিভ ইমেজিং সিস্টেম, কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন, হৃদ রোগীদের জন্য সিসিইউ এবং আইসিইউ ইউনিটসহ ৬০টি মেশিন কেনাকাটায় অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে। কেনাকাটায় দুর্নীতি হয়েছে ২৫৫ কোটি টাকা। আর আসবাবপত্র কেনাকাটার নামে লুটপাট হয়েছে ২০ কোটি টাকা। দুদক আরো জানায়, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে অভিযোগ পায় সংস্থাটি। পরে এ বিষয়ে যাচাইবাছাই শুরু হয়। এক পর্যায়ে কমিশনে অভিযুক্তদের বিষয়ে অনুসন্ধানের অনুমোদন দেয়া হয়।