ঢাকা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বহুল ব্যবহারের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষের পারিবারিক জীবন। আর এটা বিভিন্ন মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এমনটাই বিশ্বাস করেন সৌদি আরবের অনেক নাগরিক। আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। মানব উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ মালাক আবদুল্লাহ আলদোসারি বলেন, পরিবারের সদস্যরা এখন আর একসঙ্গে মিলিত হয় না, পসপরের খোঁজ-খবর নেয় না। অনেকে টেলিভিশন কিংবা স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ব্রাউজ করেই সময় পার করে দেয়। তিনি বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক তরুণ-তরুণীদের মধ্যে যারা ইন্সটাগ্রামে বেশি আসক্ত, তাদের মধ্যে মানসিক সমস্যার লক্ষণ দেখা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে অসামাজিক আচরণ। এর ফলে তারা নিজেদের পিতা-মাতার সঙ্গে কথা বলতে অনাগ্রহী হয়ে ওঠে। পরিবারের সদস্যদের ইন্টারনেট, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কুফল সমপর্কে সচেতন হওয়া উচিত, যাতে করে এর কুফল প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যায়। আলদোসারি সকলকে ভার্চুয়াল জগতে মাত্রাতিরিক্ত সময় ব্যয় না করার আহ্বান জানিয়েছেন। কেননা এর ফলে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। প্রকৌশলী ও আলোকচিত্রী ফাহাদ আল-বুয়াইনাইন বলেন, ভুয়া ও সাজানো খবর প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে। ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষারও যথেষ্ট উপায় নেই। তার মতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার ফলাফল ও পরবর্তীতে নিজেদের ক্যারিয়ারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলো নতুন বন্ধু বানানোর সেরা উপায়। কিন্তু এর ফলে কাছের বন্ধুর সঙ্গে সমপর্কের ইতি ঘটতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ আবদুল্লাহ মোহাম্মেদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন সাইট ও অ্যাপ্লিকেশনে অনেক ফিচার থাকলেও, ব্যবহারকারীরা মূলত নির্দিষ্ট কিছু ফিচারেই সময় ব্যয় করেন বেশি। তার মতে, অনেক ব্যবহারকারী অপ্রয়োজনীয় গেম খেলে প্রচুর সময় নষ্ট করে। তিনি বলেন, এ সমস্ত সাইট ও অ্যাপ্লিকেশন অনেক মানুষের মধ্যে একাকিত্ব ও বিষণ্নতাবোধের জন্ম দেয়। আমি নিজে মাঝে-মধ্যে অনুভব করি, যা আমি সত্যিকার জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি। ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার অনেক সময় মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলে। এর ফলে ইন্টারনেট আসক্তি ও বিষণ্নতার জন্ম নেয়। নিজের পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে অনাগ্রহী হতে দেখা যায় অনেককে।
মোহাম্মেদ আল-আবদুল কাদের নামের এক ব্লগার ও আলোকচিত্রী বলেন, একজন চাকরিজীবীর কাজেও প্রভাব ফেলে এসব সাইট। এছাড়া অনেক ব্যবহারকারী নিজেদের ব্যক্তিগত, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সমস্যা নিয়েও ফেসবুকে পোস্ট দেন। তাদের ভার্চুয়াল বন্ধুরা তা সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা হয়তো এসবে অভিজ্ঞ নন। ফলে তাদের পরামর্শ মানতে গেলে বিপদ ঘটার সম্ভাবনা রয়ে যায়, যা অনেক ব্যবহারকারী ভুলে যান। এছাড়া চরমপন্থি ধ্যান-ধারণার সঙ্গেও পরিচয় ঘটতে পারে ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রামের মতো সাইটগুলোর মাধ্যমে। অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ব্যক্তিগত তথ্য ও ব্যাংক কার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে হ্যাকাররা। তবে হাজেম আল-জারাল্লাহ ও দুয়া আহমেদের মতো অনেকে এর ইতিবাচক দিক নিয়েই বেশি আগ্রহী। আলোকচিত্রী আল-জারাল্লাহ বলেন, ইন্সটাগ্রামের ফলে সমপর্ক আরও শক্তিশালী হয়। কেননা মানুষ নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করে এখানে। তিনি বলেন, আমার গত বছরটা দারুণ সব মুহূর্তে পরিপূর্ণ ছিল। আমি ইন্সটাগ্রাম ও অন্যান্য সামাজিক সাইটের মাধ্যমে সেসব অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করেছি। দুয়া আহমেদ বলেন, আমার পরিবার আমাকে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করতে অনুপ্রাণিত করেন। এমনকি বাড়িতে একটি স্টুডিও বানিয়ে দিয়েছে আমার পরিবার যাতে করে তিনি ছবি তুলতে পারেন সঙ্গে ছোটোখাটো ব্যবসাও। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফলে অনেক মানুষের সঙ্গে আমি পরিচিত হতে পেরেছি। তারা কেবল সৌদি আরবের নয়, বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশেরও। আমি আমার দৈনন্দিন জীবনের অনেক মুহূর্ত আমার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারছি। আমার মনে হয়, আমি যেন একটি বিশাল পরিবারের অংশ।
এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত