রাজধানীতে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলা মামলার রায় সোমবার ঘোষণা করা হবে। গত ১ ডিসেম্বর উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম হামলার বর্ষপুর্তিতে রায় ঘোষণার দিন জন্য ধার্য করেন।
উনিশ বছর আগে ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে সিপিবির লাল পতাকা সমাবেশে বোমা হামলান ঘটনা ঘটে। এতে দলটির পাঁচ কর্মী নিহত হন। এরা হলেন-খুলনার হিমাংশু মণ্ডল ও আবদুল মজিদ, ঢাকার ডেমরার আবুল হাসেম, মাদারীপুরের মুক্তার হোসেন এবং খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রদাস রায়। এতে আহত হন অনেকে।
রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ পলাতক ও কারাগারে থাকা সব আসামির মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেন। আসামীপক্ষ জানায়, মামলার আসামিদের মধ্যে একজনের কথিত একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রয়েছে। তাই ওই একজনের কথিত স্বীকারোক্তি দিয়ে আসামিদের দণ্ড দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ১৯ বছর পর অবশেষে মামলাটির রায় হতে যাচ্ছে। আশা করছি, প্রকৃত অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।
ঢাকা মহানগরের পিপি আব্দুল্লাহ আবু বলেন, সাক্ষী এবং আসামিদের গরহাজিরের কারণে মামলাটির বিচাকাজ বিলম্বিত হয়েছিল। অবশেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে চলে এসেছে। রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছি। ভুক্তভোগী পরিবার ন্যায়বিচার পাবেন।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি নৃশংস ওই হামলার ঘটনায় সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মনজুরুল আহসান খান মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন। দুই বছর পর ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মোমিন হোসেন। এরপর আদালতের আদেশে ২০০৫ সালে আবার মামলাটির তদন্ত শুরু হয়। সাত তদন্ত কর্মকর্তার হাত ঘুরে ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর সিআইডি পরিদর্শক মৃণাল কান্তি সাহা ১৩ আসামির বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। এরা হলেন- হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, মুফতি মঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মো. মশিউর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আবদুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিরাজ ও নুর ইসলাম। এরমধ্যে অন্য মামলায় শীর্ষ জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাকি আসামিদের মধ্যে মুফতি মঈন উদ্দিন, আরিফ হাসান সুমন, সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকলেও আটজন পলাতক রয়েছেন।
২০১৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১০৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৮ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। তবে আসামিপক্ষে কেউ সাফাই সাক্ষ্য দেননি। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সালাউদ্দিন হাওলাদার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।