আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাপার যুগ্ম মহাসচিব

Slider জাতীয় রাজনীতি

ঢাকা: জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের শুক্রবার আরো ২০ জন উপদেষ্টা, ৩৭ জন ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৪ জন যুগ্ম মহাসচিবের নাম ঘোষণা করেছেন। যুগ্ম মহাসচিবের তালিকার ৩ নম্বরে রয়েছেন নুরুল ইসলাম দীপু। যিনি জাতীয় ছাত্রসমাজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগনেতা আহসান উল্লাহ হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তিনি।

২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুরের নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সমাবেশে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারকে। সেদিন নিহত হন ওমর ফারুক রতন নামের আরেক ব্যক্তি। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল রায় দেন ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। রায়ে বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকার ও জাপার ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম দীপুসহ ২২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে জাহিদ আহসান রাসেল বর্তমানে ওই আসনের এমপি এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতা নুরুল ইসলাম দীপু। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তিনি পার্টির দায়িত্বের পাশাপাশি ব্যবসা করছেন বলে জানা গেছে।

নিম্ম আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের পর ২০১৬ সালের ১৫ জুন হাইকোর্ট এক রায়ে আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের দেয়া ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। এর মধ্যে জাপায় সহ আন্তর্জাতিক সম্পাদক থেকে পদোন্নতি দিয়ে আজ যুগ্ম মহাসচিব বানানো নুরুল ইসলাম দীপুও রয়েছেন।

অবশ্য এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন বাদী এবং আসামি উভয় পক্ষই।গত ৭ জানুয়ারি এই হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে উভয়পক্ষের করা আলাদা লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি) শুনানি আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করেন আপিল বিভাগ। সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।

মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক ও শ্রমিকনেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার গাজীপুর-২ আসন থেকে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এমপি নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি ১৯৯০ সালে গাজীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

শুক্রবার পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পরিষদে আরো ২০ জনের নাম ঘোষণা করায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা দাড়ালো ২৯-এ। এর আগে ৪১ জন প্রেসিডিয়ামের মধ্যে ৩৭ জনের নাম ঘোষণা করেন কাদের। আর আজ ৪১ সদস্যের মধ্যে ৩৭ সদস্যের ভাইস চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি পদে ৪ জন করে আরো ৮ জন নিয়োগ দেয়ার সুযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানের।

এদিকে, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ১৬ জন যুগ্ম মহাসচিবের মধ্যে শুক্রবার ১৪ জনের নাম ঘোষণা করেছেন জিএম কাদের। এই তালিকার ৯ নম্বরে রয়েছেন রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ। যিনি এরশাদ ও রওশন এরশাদের ছেলে এবং রংপুর থেকে নির্বাচিত এমপি। ২ দিন আগে যাকে তার মা জাপার প্রধান উপদেষ্টা ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ পদোন্নতি দিয়ে কো-চেয়ারম্যান করেছেন। যদিও এদিনই জিএম কাদের বলেছেন, পার্টির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রওশন এরশাদের পদোন্নতি দেয়ার কোনো এখতেয়ার নেই।

১৪ যুগ্ম মহাসচিব হলেন-গোলাম মোহাম্মদ রাজু (মুন্সিগঞ্জ), ইয়াহ হিয়া চৌধুরী (সিলেট), নুরুল ইসলাম দীপু (গাজীপুর), ৪. মো. নোমান মিয়া (মুন্সিগঞ্জ), এস.এম. ইয়াসির (রংপুর), আমিনুল ইসলাম ঝন্টু (সিরাজগঞ্জ), আমির উদ্দিন আহমেদ ঢালু (ঢাকা), এ্যাড.শাহিদা রহমান রিংকু (ঢাকা), রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ (রংপুর), মোঃ শামসুল হক (ঢাকা), আব্দুল হামিদ ভাসানী (বি-বাড়িয়া), এম.এ. মুনিম চৌধুরী বাবু (হবিগঞ্জ), মোঃ আমির হোসেন (কুমিল্লা) এবং ইকবাল হোসেন তাপস (বরিশাল)।

জাতীয় পার্টির ২৯৯ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য পদে নিয়োগের জন্য পার্টি চেয়ারম্যান ২০ জানুয়ারি থেকে আগ্রহী প্রার্থীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করবেন বলে পার্টির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *