রাতুল মন্ডল: দর্শনার্থীদের বিনোদনের কথা চিন্তা করে প্রায় ত্রিশ লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে নির্মাণ করা হয় ঝুলন্ত ব্রিজ।
আর এই ঝুলন্ত ব্রিজটি পার্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে অধ্যবধি পর্যন্ত বিকল হয়ে আছে। পার্ক কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ঝুলন্ত ব্রিজে না ওঠার জন্য লোহার কাঁটাতার দিয়ে দু’পাশে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঝুলন্ত ব্রিজের পূর্ব দিক দিয়ে দর্শনার্থীরা কাঁটাতারের বেড়া অপেক্ষা করে, অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝুলন্ত ব্রিজে উঠে ফটোসেশন করছেন। এতে করে যে কোন মুহুর্তে ঘটতে পারে ছোট বড় দুর্ঘটনা। দর্শনার্থীরা পার্কের ভিতর টানানো ছোট-ছোট ফেস্টুনে ঝুলন্ত ব্রিজের চিহ্ন দেখে, অনেক সময় পায়ে হেঁটে যেয়ে দেখে যে ব্রিজটি লোহার কাঁটাতার দিয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। তাই বাধ্য হয়ে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পার্কে আসা একাধিক দর্শনার্থী।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবির হোসেন বলেন, ইউটিউব এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের বিভিন্ন সৌন্দর্য দেখে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে আসছি, ফেস্টুনের ঝুলন্ত ব্রিজ লেখা দেখে প্রায় ২০ মিনিট পায়ে হেঁটে এসে দেখি ঝুলন্ত ব্রিজটির দু’পাশে লোহার কাঁটাতার দিয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
ময়মনসিংহ থেকে আসা আরেক দর্শনার্থী লিপি আক্তার বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে সাফারী পার্কে ঘুরেতে এসেছি। অনেক জায়গা ঘুরে ঝুলন্ত ব্রিজ দেখতে এসে অবাক হয়েছি। এত টাকা খরচ করে তৈরি করা ব্রিজটি লতাপাতা দিয়ে ডেকে গেছে। মানিকগঞ্জ থেকে আসা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার মোহাম্মদ আলী বলেন, সরকার এত টাকা খরচ করে ঝুলন্ত ব্রিজ করেছে, অথচ কতৃপক্ষের অবহেলার কারণে এই ব্রিজটি মরিচা গিলে খাচ্ছে। আর পার্কে আসা দর্শনার্থীরা পুরোপুরি বিনোদন পাচ্ছিনা।
উল্লেখ্য থাইল্যান্ডের সাফারি ওয়ার্ল্ড ও ইন্দোনেশিয়ার বালি সাফারি পার্কের ধারণা থেকে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের রাথুরা মৌজা ও সদর উপজেলার পিরুজালী ইউনিয়নের পিরুজালী মৌজার খন্ড খন্ড শালবন ঘেরা ৪৯০৯.০ একক জমি নিয়ে ২০১১ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। এর মধে ৩৮১০.০ একর জমি প্রাথমিকভাবে মাস্টারপ্ল্যানে আনা হয় ।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটি ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণির জন্য নিরাপদ আবাসস্থল হিসাবে যাত্রা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১০ সালে ৬৩.৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এবং পার্ক প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম শুরু হয় ২০১১ সালের ২ ফেব্রয়ারী। প্রকল্পের শুরুতে কোন মাষ্টার প্লান প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক মানের সাফারী পার্কে উন্নীত করার লক্ষ্যে একটি মাষ্টার প্লান তৈরী করা হয়। মাষ্টার প্লানে বর্ণিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে ৪ অক্টোবর ২০১১ তারিখে ’’বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক, গাজীপুর (১ম সংশোধিত) প্রকল্পটি একনেক কর্তৃক বর্ধিত আকারে ২১৯.৮৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অনুমোদিত হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান বলেন, পার্কের সংস্কারকাজ মেরামতের জন্য অনেক অর্থ বরাদ্দ রয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে, কিন্তু দূর্নীতি দমন কমিশন দুদকের ভয়ে এত দিন কেউ হাত দেয়নি। আমি শতভাগ সততার সাথে কাজ করে দ্রুত সাফারি পার্কেটি আগের ন্যায় ফিরিয়ে আনবো।