ডেস্ক: সংবিধান পরিবর্তন করার প্রয়োজনে পদত্যাগ করেছেন রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দমিত্রি মেদভেদেভ ও পুরো সরকার। তবে ক্ষমতায় রয়ে গেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই পরিবর্তনের ফলে পুতিন ক্ষমতার ওপর আরো বেশি দখল পাবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বুধবার দেশটির বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী টেলিভিশনে দেয়া ঘোষণায় বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, যাতে সাংবিধানিক সংস্কার করার পথ তৈরি হয়। এ খবর দিয়ে অনলাইন আল জাজিরা বলেছে, এদিন পার্লামেন্টে বার্ষিক বক্তব্য রাখেন পুতিন। তিনি এদিন পার্লামেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য সংবিধান সংশোধনের জন্য একটি গণভোটের প্রস্তাব দেন। শক্তিশালী প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যবস্থাও এর আওতায় বিদ্যমান থাকবে। তবে কবে ওই গণভোট হবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ উল্লেখ না করে পুতিন বলেন, দেশের সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবে আমি আশা করি দেশের নাগরিকরা ভোট দেবেন এবং এটা খুব প্রয়োজনীয় বলে আমি মনে করি।
তিনি জানান, সংবিধান সংশোধন করার মাধ্যমে পার্লামেন্ট সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীপরিষদের সদস্যদের নিয়োগ দেবেন। এসব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে একক ক্ষমতা রয়েছে প্রেসিডেন্টের হাতে। পুতিন বলেন, সংবিধান সংশোধন করা হলে পার্লামেন্ট ও পার্লামেন্টারি দলগুলোর ক্ষমতা বাড়বে। ক্ষমতা বাড়বে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীপরিষদের সব সদস্যের। তারা স্বাধীনতাও ভোগ করবেন। তাই জনগণের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই আমরা একটি শক্তিশালী সমৃদ্ধ রাশিয়া গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। আমরা অবশ্যই একত্রিত হয়ে কাজ করে উন্নত জীবনে উত্তরণ ঘটাতে পারবো। তিনি আরো বলেন, সংবিধান সংশোধনের ফলে গভর্নরদের ভূমিকাও বৃদ্ধি পাবে, যদিও রাশিয়া থাকবে প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যবস্থায়।
তবে যে কেউ চাইলেই প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। কে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন সে বিষয়কে কড়াকড়িভাবে শ্রেণিবিন্যাস করতে চান পুতিন। তিনি বলেন, যদি কেউ প্রেসিডেন্ট হতে চান তাহলে তাকে অবশ্যই একটানা ২৫ বছর ধরে রাশিয়ায় বসবাস করতে হবে।
খবরে বলা হয়েছে প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেয়া প্রধানমন্ত্রী দমিত্রি মেদভেদেভকে রাশিয়ার প্রভাবশালী নিরাপত্তা পরিষদের নতুন উপপ্রধান নিয়োগ করা হবে। তিনি আট বছর প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওদিকে মস্কোতে সাংবাদিক আলেকসান্দ্রা গডফ্রোইড বলেন, এতে দেখানো হচ্ছে মেদভেদেভের ওপর আস্থা রাখেন পুতিন। বহু বছর ধরে তিনি পুতিনের পাশে রয়েছেন। এখন সংবিধান সংশোধনের যে কথা বলা হচ্ছে তাতে স্পষ্ট যে, ক্ষমতার কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব পরিবর্তনের ফলে প্রেসিডেন্ট আরো শক্তিশালী হবেন।
প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীপরিষদ পদত্যাগ করার কয়েক ঘন্টা পর কেন্দ্রীয় আয়কর বিষয়ক প্রধান ৫৩ বছর বয়সী মিখাইন মিশুস্তিনকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাম ঘোষণা করেছেন পুতিন। তিনি একজন অপরিচিত আমলা। তাকে অনুমোদনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ভোট হওয়ার কথা।
ওদিকে আকস্মিক সরকারের পদত্যাগে রাশিয়ার অভিজাত শ্রেণির মধ্যে এক রকম হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের আসলে উদ্দেশ্য কি সে সম্পর্কে তারা অন্ধকারে। পুতিন বর্তমানে সেখানে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। তার এ মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালে। সংবিধান অনুসারে তাকে এ সময়ের পর পদত্যাগ করতে হবে। এ সময়ে তার বয়স হবে ৭১ বছর। ওদিকে পদত্যাগের ঘোষণা টেলিভিশনে দেয়ার সময় বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মেদভেদেভ বলেছেন, তিনি পুতিনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এর উদ্দেশ্য হলো পুতিন সংবিধান পরিবর্তন করতে চান। তাকে সেই সুযোগ দেয়ার জন্য তিনি এমনটা করেছেন। রাশিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও ক্ষমতার কাঠামো পরিবর্তন করতে নতুন কোনো কর্তৃপক্ষকে না আনা পর্যন্ত বর্তমান সরকার অব্যাহতভাবে কাজ করে যাবে।
সাংবাদিক গডফ্রোইড বলেছেন, প্রস্তাবিত পরিবর্তনের ফলে যে সরকার আসবে ক্ষমতায় তার কাছে সন্তুষ্ট না হলে তাকে বরখাস্ত করার ক্ষমতা পাবেন পুতিন। এ ছাড়া তিনি সেনাবাহিনী, পুলিশ, নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থাগুলোতে নিয়ন্ত্রণ পাবেন। এসব সেবাখাতের প্রধানদের নিয়োগ দেবেন তিনি।