৪ মাস ধরে হাসপাতালে বৃদ্ধা, মিলছেনা স্বজনের খোঁজ

Slider গ্রাম বাংলা

আমার নাম ডালিম। বাবার নাম মোহন।

আমরা ৯ ভাইবোন। আমার বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার সাইনবোর্ড এলাকায়। বাগেরহাট সদর হাসপাতালের নিচতলার অর্থোপেডিক বিভাগের ২ নাম্বার বেডে প্রায় চার মাস ধরে চিকিৎসাধীন ষাটর্দ্ধো বয়সী এক বৃদ্ধা রোগী এভাবেই তার পরিচয় তুলে ধরেন।
সোমবার দুপুরে এই হাসপাতালের বেডে বসে এই কথাগুলোই বারবার বলছিলেন ডালিম পরিচয় দেওয়া সেই রোগী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর দেয়া ঠিকানায় তার স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিতে যেয়ে সেখানে কারও সন্ধান পায়নি। ফলে তাকে হাসপাতালে রেখে তার সেবা দিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তার সঠিক পরিচয় না মেলায় কর্তৃপক্ষ পড়েছে বিপাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই নারীকে কিভাবে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিবে তা নিয়ে পড়েছে দুশ্চিন্তায়।

বাগেরহাট সদর হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের জুনিয়র কনস্যালটেন্ট ডা. এস এম শাহনেওয়াজ বলেন, প্রায় চার মাস আগে হাসপাতালের সামনে অজ্ঞাত এক নারীকে পড়ে থাকতে দেখে কর্তৃপক্ষ ভর্তি করে দেয়।

সেই নারীর ডান পায়ে পচন ধরায় তার গোড়ালির একটু উপর থেকে অস্ত্রোপচার করে কেটে ফেলি। তাকে আমরা স্বাস্থ্যসেবাসহ পরণের কাপড়, হাঁটার জন্য ক্র্যাচ দিয়েছি। চিকিৎসার দেয়ার পর তিনি এখন পুরোপুরি সুস্থ্য রয়েছেন। সেই থেকে তিনি এখানেই রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, প্রথম থেকেই তিনি তার বাড়িঘর কোথায় ঠিকমত বলতে পারছেন না। তিনি যে ঠিকানা বলেছেন সেই অনুয়ায়ি আমরা তাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে কচুয়ার সাইনবোর্ড এলাকায় সারাদিন ঘুরে তার কোন স্বজনের সন্ধান পাইনি। সেই নারীর বয়স বেশি হয়ে যাওয়ায় স্মরণশক্তি কমে গেছে এবং মানসিক সমস্যার কারনে তার ঠিকানা ঠিকমত বলতে পারছেন না বলে আমার ধারনা।

বাগেরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মশিউর রহমান বলেন, প্রায় চার মাস ধরে ওই বৃদ্ধা আমাদের এখানে ভর্তি আছেন। ভর্তির পর থেকে আমাদের স্টাফরা তাকে খাবার খাইয়ে দেওয়াসহ সব ধরনের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তাকে সুচিকিৎসা দিয়ে পুরোপুরি সুস্থ্য করে তুলেছি। এই চার মাসে কেউ তার খোঁজখবর নিতে আসেনি। তার পরিবারের সদস্যরা কি তাকে বোঝা মনে করে ফিরিয়ে নিতে চাইছে তাও হতে পারে বলে ধারনা করছি।

তিনি আরও জানান, আমরা তার স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিতে নানা চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখনো কাউকে পাইনি। এভাবে তাকে আর কতদিন এখানে রাখতে পারব তা বুঝে উঠতে পারছি না। আমরা আরও কিছুদিন দেখব। যদি তার স্বজনদের না পাই তাহলে পরবর্তি করণীয় নিয়ে ভাবতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *